রাস্তায় দোকান দেখলেই সটান জিনিসপত্র তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে থানায়

পথ বাঁচাতে পুরসভার ‘হল্লা পার্টি’

হুড খোলা মিনিট্রাক। আর তাতে সওয়ার পুরসভার লোগো দেওয়া সাদা জ্যাকেট পরা লোকজন। দেখলেই থরহরি রাস্তার দখল করে থাকা বাঁকুড়ার ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৮ ০১:১৮
Share:

কঠোর: মাচানতলা মোড়ে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এক লটারির টিকিট বিক্রেতার টেবিল। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

কেউ পসরা গুটিয়ে দেওয়ালের আড়ালে লুকোচ্ছেন। কেউ আবার দৌড় লাগাচ্ছেন।

Advertisement

হুড খোলা মিনিট্রাক। আর তাতে সওয়ার পুরসভার লোগো দেওয়া সাদা জ্যাকেট পরা লোকজন। দেখলেই থরহরি রাস্তার দখল করে থাকা বাঁকুড়ার ব্যবসায়ীরা। নিয়ম ভেঙে রাস্তা দখল করলেই থামছে ট্রাক। জিনিপত্র তুলে নিয়ে সটান থানায় চলে যাচ্ছে। ছাড়িয়ে আনতে হলে পুলিশের কাছে হত্যে দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

বাঁকুড়া শহরের মাচানতলা মোড়, কলেজ মোড় ও নতুনচটি এলাকার রাস্তার পাশের হকারদের তুলতে ‘হল্লাপার্টি’ গড়েছে বাঁকুড়া পুরসভা। পুরসভার ছ’জন কর্মীকে ওই দলে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের জন্য পুরসভার লোগো দেওয়া হাতকাটা জ্যাকেটের বন্দোবস্ত হয়েছে। দায়িত্ব হল— অবৈধ ভাবে রাস্তার পাশে বসা ব্যবসায়ীদের ওঠানো। একটি মিনি ট্রাক নিয়ে দিনভর দফায় দফায় শহরের নির্দিষ্ট এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে হল্লাপার্টি। মাঝে মধ্যেই তাঁদের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে খোদ উপ-পুরপ্রধান দিলীপ অগ্রবালকে।

Advertisement

বাঁকুড়া শহরের মাচানতলামোড়, কলেজ রোডের মতো বিভিন্ন এলাকার রাস্তার পাশে বসে ব্যবসা করতেন অনেক হকার। গত কয়েক মাস ধরে নতুনচটির কিসান মান্ডিতে তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও বাঁকুড়া পুরসভা উদ্যোগী হয়েছে মান্ডিকে শহরের কেন্দ্রীয় বাজার হিসেবে গড়ে তুলতে। পরিকল্পনা রয়েছে দখলমুক্ত করে ফুটপাথ তৈরি আর শহর সৌন্দর্যায়নের।

অধিকাংশ হকারই মান্ডিতে উঠে গিয়েছেন। তবে এখনও মাঝে মধ্যেই কিছু ব্যবসায়ী রাস্তার পাশেই অস্থায়ী দোকান সাজিয়ে বসছেন। সেটাই রুখতে মাচানতলা এবং কলেজ রোডের ফুটপাথ দখলমুক্ত করার পরে জাল বসানো হয়েছিল। যাতে বেচাকেনার আর উপায় না থাকে। কিন্তু তার পরোয়া করেননি অনেক ব্যবসায়ী। ফুটপাথ ছেড়ে বসে পড়েছিলেন সটান রাস্তার উপরে। মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) পথে নেমে তাঁদের তুলে মান্ডিতে পাঠিয়েছিলেন। এ বারে হল্লাপার্টি দায়িত্ব নিয়ে সেই কাজ করতে নেমেছে।

বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত জানান, যে সমস্ত হকারদের রাস্তার পাশ থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে তাঁদের সবাইকে কেন্দ্রীয় বাজারে জায়গা দেওয়া হয়েছে। তার পরেও কিছু হকার আগের জায়গাতেই বসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, “বারবার ওই হকারদের বলা হয়েছে। তবু তাঁরা সরকারি নির্দেশ মানতে চাইছেন না। এটা বরদাস্ত করা হবে না। তাই হল্লাপার্টি গড়ে নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কিসান মান্ডিতে বসার জন্য ২২০ জন হকারকে চিহ্নিত করে টোকেন দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ১২০ জন মান্ডিতে গিয়ে বসেছেন। ঘটনা হল, মান্ডিতে যাওয়ার ব্যাপারে প্রথমে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীই আপত্তি তুলেছিলেন। তবে প্রশাসনের কড়া মনোভাবের জেরে মাস খানেক আগেই বেশিরভাগ হকার চলে যান। মান্ডিতে ক্রেতাদের আনাগোনাও বাড়তে শুরু করেছে বলেই জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীদের অনেকে।

তার পরেও কেউ কেউ কেন যেতে রাজি হচ্ছেন না?

মাচানতলার রাস্তার পাশে বসে ব্যবসা করছিলেন এক লটারির টিকিট বিক্রেতা। বৃহস্পতিবার তাঁর টেবিল তুলে নিয়ে যায় হল্লাপার্টি। ওই বিক্রেতা বলেন, ‘‘কিসান মান্ডিতে গিয়ে বসেছিলাম। কিন্তু খদ্দের পাচ্ছি না।” উপ-পুরপ্রধান দিলীপবাবু অবশ্য বলেন, “মান্ডিতে ব্যবসা জমছে না— এই দাবি ভিত্তিহীন। পুরসভার তরফে রোজ মান্ডিতে নজর রাখা হচ্ছে। প্রতিদিনই সকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রচুর ভিড় দেখা যাচ্ছে ওখানে। আমরা চাই শহরের ব্যবসায়ীরা নিয়ম মেনে ব্যবসা করুন।”

দখলমুক্ত হওয়া শহরের রাস্তার দু’পাশে সৌন্দর্যায়নের নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে পুরসভার তরফে। মহাপ্রসাদবাবু জানাচ্ছেন, ওই জায়গায় গাছ লাগানো হবে। ছোট ছোট উদ্যান গড়া হবে। তৈরি হবে পার্কিং জোন। তিনি বলেন, “শহরের রাস্তাঘাটের যা অবস্থা হয়েছিল তাতে চলাফেরার জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না। শহরের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থেই রাস্তা দখলমুক্ত করতে নেমেছি আমরা।”

মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অসীমকুমার বালা বলেন, “নিয়ম ভেঙে শহরের রাস্তা দখল করে ব্যবসা করলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন