সজাগ: খড় দিয়ে তৈরি মণ্ডপে আধিকারিকেরা। বিষ্ণুপুরে বৃহস্পতিবার। ছবি: শুভ্র মিত্র
মণ্ডপ দেখতে দেখতে মহকুমাশাসক বলেই ফেললেন— ‘‘কি সম্পাদক মশাই, পুরোপুরি জতুগৃহ বানিয়ে ফেলেছেন তো!’’ বিষ্ণুপুর মহকুমা প্রশাসনের নিরাপত্তা বিষয়ক দল বৃহস্পতিবার মণ্ডপের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কেমন, তা খতিয়ে দেখতে বেরিয়েছিল। কিন্তু, তাঁদের যা অভিজ্ঞতা হল, তা দিনের শেষে মোটেই স্বস্তি দিল না আধিকারিকদের।
এ দিন হঠাৎ পরিদর্শনে এসডিও-র সঙ্গে বেরিয়েছিলেন এসডিপিও সুকোমল দাস, বিষ্ণুপুর মহকুমা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নীলাঞ্জন তরফদার, বিষ্ণুপুর থানার আইসি আস্তিক মুখোপাধ্যায়, বিষ্ণুপুর দমকল কেন্দ্রের আধিকারিক বামকুমার চৌধুরী, বিষ্ণুপুর বিদ্যুৎ দফতরের স্টেশন ম্যানেজার জয়দীপ হালদার প্রমুখ। প্রথমে তাঁরা যান শালবাগান দুর্গা পুজোর মণ্ডপে। পুজো কমিটির সম্পাদক অরুণ সিংহ জানান, তাঁদের থিম মল্লভূমের আদি পুজো। অতীতকে ধরতে ধানের মড়াই আকৃতির বিশাল খড়ের মণ্ডপ তৈরি করেছেন তাঁরা। কিন্তু নিরপত্তা? অরুণবাবুর দাবি, ‘‘অগ্নিনির্বাপণ প্রলেপ দেওয়ার রাসায়নিক বাজারে পাইনি। তবে বিপদ এড়াতে সারাক্ষণ স্বেচ্ছাসেবীরা মণ্ডপে নজর রাখছেন। তিনটি সাব-মার্সিবল জলের পাইপ লাগানো থাকছে।’’
কী কী উপকরণ কী ভাবে মিশিয়ে ওই রাসায়নিক তৈরি করে খড়ের উপরে ছড়িয়ে দিতে হবে, পরিদর্শন চলাকালীন তা বিষ্ণুপুর দমকল কেন্দ্রের আধিকারিক শালবাগানের সদস্যদের লিখে বুঝিয়ে দেন। জয়পুর ব্লকের গেলিয়া গ্রামের খড় শিল্পী সুকুমার সাঁতরা বলেন, ‘‘১৬ বছর খড় দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করছি। কিন্তু, আগে কেউ এ ভাবে নিরপত্তা বিষয়ে এত ভাল করে বোঝাননি। এ বার থেকে মেনে চলব।’’
দলমাদল রোড সর্বজনীনের মণ্ডপে গিয়ে আধিকারিকদের শুনতে হল— ‘‘অগ্নি নির্বাপণ দ্রবণ আবার কী? কোন কাজে লাগে?’’ প্রশ্নটা করেছিলেন বিষ্ণুপুর শহরে ৪০ বছর ধরে কাজ করা রূপ সনাতন কাইতি। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে হাতে-কলমে দেখিয়ে দেন, ওই প্রলেপ দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করলে আগুন রোধে কাজে দেবে।
দলমাদল রোড পুজো মণ্ডপের সম্পাদক সুজিত সাঁতরা বলেন, ‘‘আমরা পরিবেশ নিয়ে খুব সজাগ। দর্শনার্থীদের জন্য প্ল্যাকার্ডে বার্তা থাকবে থার্মোকল ব্যবহার করবেন না।’’ তাহলে মণ্ডপ সজ্জায় থার্মোকলের বাটি ব্যবহার করছেন কেন? উদ্যোক্তরা জানান, ভবিষ্যতে তাঁরা এমন করবেন না। অনেক দিন আগে মিটিংয়ে থার্মোকল ব্যবহারের বিষয় ঠিক করা হয়েছিল। তখন পরিবেশ রক্ষার বার্তা দেওয়ার ব্যাপার ভাবেননি।
দলমাদল রোড মণ্ডপের সামনে আলোর কারিগরদের জোড়া দেওয়া বিদ্যুতের তার ব্যবহার করতে বারণ করেন বিষ্ণুপুর বিদ্যুৎ বিভাগের স্টেশন ম্যানেজার। তিনি বলেন, ‘‘চতুর্থীর দিন থেকে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হবে। তার আগে পরিস্থিতি দেখে গেলাম।’’
বিষ্ণুপুর থানার আইসি আস্তিক মুখোপাধ্যায় জানান, তিন দফা বৈঠক হয়েছে থানায় পুজো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে। শহর জুড়ে ৩২টি সর্বজনীন এবং ১৮টি পারিবারিক পুজো হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুজোর গাইড ম্যাপ প্রকাশিত হয়েছে। পুজোর সময় শহরের ভিতর ছোট ও বড় গাড়ি বিকেল চারটে থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকছে। দর্শনার্থীদের জন্য শহরের চারটি জায়গায় পার্কিং জোন থাকছে। প্রয়োজন মতো যান নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু রাস্তা যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। নিরাপত্তার জন্য সাদা পোশাকের পুলিশ, গাড়িতেও টহল থাকবে। মণ্ডপ চত্বরগুলিতে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসিক্যামেরা) বসাতে বলা হয়েছে। এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) বলেন, ‘‘আনন্দের উৎসবে কোনও রকম বেয়াদবপনা বরদাস্ত করা হবে না। প্রশাসন কঠোর নজর রাখবে। বিভিন্ন মণ্ডপে আমরা পরিদর্শন করব।’’
ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নীলাঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘মহকুমা প্রশাসন সেরা পুজোগুলিকে পুরস্কৃত করবে। মাপকাঠিতে অবশ্যই নিরাপত্তার বিষয়গুলিও থাকবে।’’