ইন্টারনেটে ভোল পাল্টাচ্ছে গ্রাম

হালফ্যাশনের পোশাক তৈরি করছেন গ্রামের দর্জি। শহরাঞ্চলের মেয়েরা অনুষ্ঠানে যেমন মেহেন্দির নকশার করেন, অবিকল তেমনই শোভা পাচ্ছে গ্রামের মেয়েদের হাতেও।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৫৯
Share:

হালফ্যাশনের পোশাক তৈরি করছেন গ্রামের দর্জি। শহরাঞ্চলের মেয়েরা অনুষ্ঠানে যেমন মেহেন্দির নকশার করেন, অবিকল তেমনই শোভা পাচ্ছে গ্রামের মেয়েদের হাতেও।

Advertisement

পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত এলাকায় এই হালবদল করে দিচ্ছে ইন্টারনেট।

গ্রামে গ্রামে যে মহিলারা সকাল হলেই জমিতে চাষের কাজে নেমে পড়েন, কিংবা মুরগি-ছাগল নিয়ে মাঠে চলে যান, কেউ বা ব্যস্ত থাকেন ঘর-গৃহস্থালীর কাজে, তাঁদেরই কাজের ফাঁকে ইন্টারনেটের পাঠ দিচ্ছেন ‘ইন্টারনেট-দিদিরা’। সৌজন্যে টাটা ট্রাস্ট ও গুগল।

Advertisement

ওই দুই সংস্থা যৌথ ভাবে পুরুলিয়ার চারটি ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে মহিলাদের ইন্টারনেটের ব্যবহার শেখাতে কাজ হাতে দিয়েছে।

দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে এই কর্মকাণ্ড শুরু করা টাটা ট্রাস্টের প্রকল্প অধিকর্তা কে রামনের কথায়, ‘‘একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে কোনও গ্রামের ১০ জন মানুষ যদি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাঁদের মধ্যে একজন মহিলা। অথচ আর্থিক বা সামাজিক উন্নয়নের জন্য আজ সবারই ইন্টারনেটের ব্যবহার জানা ভীষণ ভাবে জরুরি। পশুপালন, কৃষিকাজ থেকে সৌন্দর্যের খুঁটিনাটি জানা-সহ দৈনন্দিন নানা কাজে ইন্টারনেটের ব্যবহার মেয়েদের সহায়ক হবে। তাই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি।’’

পুরুলিয়ায় এই কাজের দায়িত্বে থাকা বীরেন্দ্রনাথ খাঁ জানিয়েছেন, বাঘমুণ্ডি, বন্দোয়ান, বরাবাজার ও পুরুলিয়া ১ ব্লকের ৫৬৯টি গ্রামে এই প্রকল্পে তাঁরা প্রায় দু’লক্ষ মহিলাকে সামিল করেছেন। চারটি ব্লকে ২০০ জন ‘ইন্টারনেট সাথী’ সেপ্টেম্বর মাস থেকে সাইকেলে ঘুরে ইন্টারনেট-সাক্ষরতায় নেমেছেন।

শনিবার পুরুলিয়া রবীন্দ্র ভবনে এই মহিলাদের স্বীকৃতি প্রদান অনুষ্ঠানে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘যুগ যে ভাবে এগোচ্ছে, তাতে ইন্টারনেট সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি। গ্রামের মেয়েদের সে সম্পর্কে অবহিত করার কাজ সমাজকে এগিয়ে দেবে।’’

বরাবাজারের লক্ষ্ণণপুর গ্রামের বাসিন্দা মৌমিতা সিংহ দেও জানান, প্রথমে তিনি নিজেই ইন্টারনেটের কিছু জানতেন না। যখন প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন, তখন গ্রামের মেয়ে এবং বিশেষ করে পুরুষদের প্রশ্ন ছিল— ‘এ সব শিখে কী হবে?’ এখন তিনি আদিবাসী এলাকার মহিলাদের ইন্টারনেটের ব্যবহার শেখাচ্ছেন।

বরাবাজারের বেড়াদা গ্রামের গোদাবরী মাহাতোর কথায়, ‘‘প্রথমে তো কেউ শিখতেই চাইতেন না। কিন্তু গ্রামে বসেই নিমেষে চাকরির আবেদনপত্র ডাউনলোড করা থেকে অনলাইনে পূরণ করে পাঠিয়ে দেওয়া দেখে অনেকেই ইন্টারনেটের স্বাদ পেয়ে গিয়েছেন। এখন ওঁরাই আমাকে ‘ইন্টারনেট দিদি’ বলে খোঁজ করেন।’’

বান্দোয়ানের হলুদবনি গ্রামের বিশাখা মাহাতোর কথায়, তাঁর পাশের বাড়ির এক ননদ দূরে সেলাই শিখতে যেতেন। একদিন বিশাখা তাঁকে ইউটিউব খুলে আমব্রেলা ফ্রকের কাটিং দেখান। তা দেখে এঁকে নিয়ে নিজেই ওই মহিলা সেই ফ্রক তৈরি করেছেন।

পুরুলিয়া ১ ব্লকের বাঁশড়া গ্রামের কল্পনা মাহাতোর সংযোজন, ‘‘ইউটিউব থেকে আমি মেহেন্দি আঁকা দেখানোর পরে মেয়েরা নিজেরাই আঁকতে পারছে। আর শহরের পার্লারে যাওয়ার দরকার পড়ছে না।’’

পুরুলিয়ার গাঁয়ে এখন অন্যভুবনের স্বাদ এনে দিয়েছেন ইন্টারনেট সাথীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন