আদ্রার খুনে ধৃতদের জেরা করে পুলিশের দাবি

পিন্টুকে মারতে এক লক্ষে রফা সুপারি কিলারদের সঙ্গে

ভাড়া গাড়ির ব্যবসায়ী পিন্টু দে-কে খুন করার জন্য সুপারি কিলারদের সঙ্গে এক লক্ষ টাকার রফা হয়েছিল। ওই খুনের ঘটনায় ধৃতদের জেরা করে এমনই তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করল পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে পুলিশ সেই দুই সুপারি কিলারকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের দাবি, তারাই জেরায় স্বীকার করেছে এক লক্ষ টাকায় পিন্টুকে খুন করার জন্য রফা হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আদ্রা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৫ ০০:৩১
Share:

ভাড়া গাড়ির ব্যবসায়ী পিন্টু দে-কে খুন করার জন্য সুপারি কিলারদের সঙ্গে এক লক্ষ টাকার রফা হয়েছিল। ওই খুনের ঘটনায় ধৃতদের জেরা করে এমনই তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করল পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে পুলিশ সেই দুই সুপারি কিলারকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের দাবি, তারাই জেরায় স্বীকার করেছে এক লক্ষ টাকায় পিন্টুকে খুন করার জন্য রফা হয়েছিল। কিন্তু যারা বরাত দিয়েছিল, খুনের পরেই পুলিশ তাদের গ্রেফতার করায় সেই টাকা আর হাতে পাওয়া যায়নি।

Advertisement

“ওই দু’জনই রবিবার রাতে মোটরবাইকে এসে পিন্টুকে খুন করেছিল।
জেরায় দু’জনেই জানিয়েছে, পিন্টুকে খুন করার জন্য তাদের এক লক্ষ টাকা
দেবে বলে জানিয়েছিল চার জন। তারা আগেই ধরা পড়ায় ওরা
চুক্তিমতো এক লক্ষ টাকা হাতে পায়নি।” —জেলা পুলিশের আধিকারিক

রবিবার রাত ১০টা নাগাদ আদ্রার স্টেশনের সামনে পরপর গুলি করে খুন করা হয় আদ্রার লোয়ার বেনিয়াসোল এলাকার বাসিন্দা যুবক পিন্টু দে নামের এক যুবককে। ভরা বাজার এলাকায় ওই যুবককে খুনের ঘটনায় যথেষ্ট চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়। গত দু’দিনের মধ্যেই পুলিশ চার জনকে গ্রেফতার করে। মঙ্গলবার খুনের প্রতিবাদে মৌনী মিছিল হয় আদ্রায়। পাশাপাশি অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার দিনভর স্বতঃস্ফূর্ত বন্‌ধ পালিত হয় এই রেলশহরে। তবে ঘটনা হল খুনের দু’দিনের মধ্যে মূল অভিযুক্তদের ধরার পাশাপাশি পুলিশ দুই আততায়ীকে ধরে যথেষ্ট তৎপরতার পরিচয় দিয়েছে।

Advertisement

পুলিশের দাবি, মঙ্গলবার রাতে বিশেষ সূত্রে খবর পেয়ে রঘুনাথপুর শহরের জীবনবিমা নিগমের অফিস এলাকা থেকে দুই দুষ্কৃতীকে ধরা হয়েছে। অতীতে একাধিক অপরাধে হাতপাকানো ওই দু’জন পিন্টুকে গুলি করে বলে দাবি পুলিশের। তাদের একজনের বাড়ি আদ্রায়। অন্য জনের আদি বাড়ি বিহারের পটনায় হলেও সেখানে একটি খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত হওয়ার পর থেকেই সে আদ্রার ডিভিসি কলোনিতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে মাঝেমধ্যে যাতায়াত শুরু করে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘ওই দু’জনই রবিবার রাতে মোটরবাইকে এসে পিন্টুকে খুন করেছিল। জেরায় তারা দু’জনেই জানিয়েছে, পিন্টুকে খুন করার জন্য তাদের এক লক্ষ টাকা দেবে বলে জানানো হয়েছিল। যারা জানিয়েছিল, সেই চার জনকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তাই ওরা চুক্তিমতো একলক্ষ টাকাও হাতে পায়নি।’’

পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, রীতিমতো ছক কষে পিন্টুকে খুন করা হয়েছে। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আদ্র এলাকা থেকে পুলিশ যে চারজনকে গ্রেফতার করেছে, তাদের সঙ্গেই ওই খুনের ব্যাপারে আততায়ীদের কথা হয়েছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার রাতে দু’জনকে ধরার পরে তাদের দীর্ঘ জেরা করার পরেই ঘটনা সম্পর্কে মোটামুটি বিশদে তথ্য মিলে গিয়েছিল। তাদের কাছ থেকেই আততায়ীদের সম্পর্কে তথ্য পায় পুলিশ। তদন্তে এবং জেরায় পুলিশ জেনেছে, আগে ধৃত চারজনের মধ্যে দু’জন দু’টি গুলিভর্তি অত্যাধুনীক রিভালভার তুলে দেয় ওই দুই আততায়ীর হাতে। ধৃতদের মধ্যে আর একজন রবিবার রাতে ঘটনার কিছু আগে স্টেশন বাজার এলাকায় ঘুরে পিন্টু এলাকায় রয়েছে কি না সেই বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে ফিরে যায়। পিন্টু তখন রাতের ট্রেনের যাত্রীদের নিয়ে ভাড়া যাওয়ার জন্য নিজের গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। এলাকায় অন্যদিন জোরাল আলো থাকলেও ঘটনাচক্রে সে দিন ওই আলো জ্বলেনি। ফলে সেই রাতে কাজ সারা অনেক সহজ বলে মনে করেছিলেন পিন্টুকে খুন করতে চাওয়া লোকজন। তাদেরই এক জন এলাকায় এসে রেইকি করে যায়। কিছুক্ষণ বাদে সে মোটরবাইকে আততায়ীদের নিয়ে এসে পিন্টুকে শনাক্ত করিয়ে দেয়। সেই মতো পিন্টুর খুব কাছে গিয়ে দু’টি রিভলভার থেকে পরপর গুলি করে পালায় দুই আততায়ী। পুলিশের দাবি, ধৃত আততায়ীরা দাগি অপরাধী ও পেশাদার খুনি। পুরুলিয়া-সহ পাশের ঝাড়খণ্ড, বিহারে বেশ কিছু থানায় তাদের বিরুদ্ধে খুন-সহ একাধিক মামলা রয়েছে। ধৃতদের মোবাইল ফোনের কললিস্ট দেখে তদন্তের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পেয়েছে পুলিশ।

বুধবার পুরুলিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তদন্তে নেমে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র মিলেছে। এখনও পর্যন্ত মোট ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের জেরা করে আরও তথ্য পাওয়ার কাজ চলছে।” বুধবার ধৃতদের রঘুনাথপুর আদালতে তোলা হলে দু’জনেরই জেল হাজত হয়। এ দিকে মঙ্গলবার রাতে আদ্রায় তদন্তের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে আসেন ডিআইজি (মেদিনীপুর) বিশাল গর্গ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন