হোমের খুদেদের সঙ্গে রং খেললেন জাপানের পড়ুয়ারা

সবুজ, লাল, হলুদ আবির আর তার সঙ্গে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিস্পাপ হাসির রং। রঙিন হলেন জাপানের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৭ ০১:২৯
Share:

হোলি: পুরুলিয়া শহর লাগোয়া রাঘবপুর গ্রামে এবং (ডান দিকে) আদ্রার মণিপুর হোমে। নিজস্ব চিত্র

সবুজ, লাল, হলুদ আবির আর তার সঙ্গে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিস্পাপ হাসির রং। রঙিন হলেন জাপানের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা।

Advertisement

সোমবার আদ্রার মণিপুর গ্রামে কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত পরিবারের ছেলে মেয়েদের সঙ্গে রং খেলায় মাতলেন মিওয়া সাকাই, ইয়োগো ওগুরা, মাহো নিকলরা। নিজেদের রং মাখা ছবি মোবাইলের ক্যামেরায় বন্দি করতে করতে ওই পড়ুয়ারা বলেন, ‘‘ভারতে এক দিন সবাই মিলে রঙের উৎসবে মেতে ওঠে এটা শুনেছিলাম। সবাই মিলে খুব মজা করেছি। জীবনের অন্যতম স্মৃতি হয়ে থাকবে দিনটা।’’

‘নমস্তে’ নামের একটি সংস্থার সদস্য জাপানের ওই আটজন ছাত্রছাত্রী শিক্ষামূলক ভ্রমণে এসেছেন মণিপুর গ্রামে। কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের কী ভাবে পুর্নবাসনের কাজ হচ্ছে সেটাই মূলত ওই পড়ুয়াদের দেখার বিষয়।

Advertisement

তাঁদের জন্য দোলের পরের দিন হোলিতে বিশেষভাবে রঙ খেলার ব্যবস্থা করেছিল মনিপুর গ্রামের কুষ্ঠ পুর্নবাসন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। কেন্দ্রের সম্পাদক নবকুমার দাস জানান, অতীতেও জাপান থেকে পড়ুয়ারা সেখানে এসেছেন। কিন্তু দোলের সময়ে আসা এই প্রথম।

এ দিন সকালে রঙের হাঁড়ি ভেঙে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। গ্রামের অরুণোদয় শিশু নিকেতন হোমের আবাসিক মেয়েরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে। রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালে হোমের আবাসিকদের সঙ্গে নাচে সামিল হন জাপানের ওই পড়ুয়ারা। তাঁদের কথায়, ‘‘বাংলা ভালো বুঝি না। কিন্তু সুরের ভাষাটা ঠিক বোঝা যায়।’’

রবি ও সোমবার দু’দিন জেলার অন্য বিভিন্ন এলাকায়ও দোল ও হোলি পালিত হয়েছে। আদ্রার পুলিশের উদ্যোগে রবিবার শান্তিনিকতনের ধাঁচে শহর পরিক্রমা করে রঙ খেলা হয়েছে। সামিল হয়েছিলেন রেলশহরের আবৃত্তি পরিষদ ও নৃত্য সংস্থার সদস্যেরা।

বেনিয়াসোলের দুর্গা মন্দির থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বেরিয়েছিল। সুভাষনগর, ডিভিসি কলোনি তা শেষ হয় ওয়্যারলেস ময়দানের কাছে। ছিলেন রঘুনাথপুরের এসডিপিও গোপাল গোস্বামী, কাশীপুরের সিআই সত্যব্রত চক্রবর্তী, আদ্রার ওসি মুকুল কর্মকার। গান গেয়ে, আবৃত্তি করে শোভাযাত্রা শহর পরিক্রমা করেছে। পথচলতি মানুষজনকে আবির মাখানোর পাশাপাশি মিছিল থেকেই পুলিশ দোল ও হোলি নিয়ে বিভিন্ন সর্তকতামূলক প্রচার চালিয়েছে।

দু’দিন ধরে বসন্ত উৎসব পালিত হয়েছে রঘুনাথপুর থানার সগড়কা গ্রামে মানভূম লোকসংস্কৃতি কেন্দ্র। সংস্থার কর্মকর্তা সুভাষ রায় জানান, গত তিরিশ বছর ধরে তাঁরা দু’দিন ধরে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করছেন।

রবিবার সকালে কীর্তন করে চেলিয়ামা গ্রাম পরিক্রমা করে আবির খেলা হয়। সন্ধ্যায় হয়েছে বাউল, ছৌ, ঝুমুরের অনুষ্ঠান। সোমবার লোকসংস্কৃতি কেন্দ্রে হয়েছে কবি সম্মেলন। পুরুলিয়া-সহ পাশের জেলাগুলির আশি জন কবি যোগ দেন সেখানে। লোক সংস্কৃতি কেন্দ্রর তরফে সংবর্ধনা দেওয়া হয় কবি, সাহিত্যিক ও লোকগবেষকদের। সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে নবকিশোর সরকার, শ্রমিক সেন, মাধুরী চক্রবর্তী ও রানু রায়চৌধুরীকে।

তিন দিন ধরে পুরুলিয়ার ‘রং-রং মিলানান্তি’ শীর্ষক উৎসব হয়েছে বাঘমুণ্ডির চড়িদা গ্রামে। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে পিনাকীরঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায় জানান, শনিবার সন্ধ্যায় ন্যাড়াপোড়া দিয়ে উৎসবের সূচনা, রবিবার স্কুলের পড়ুয়া ও চড়িদা গ্রামের ছৌ শিল্পীদের নিয়ে প্রভাতফেরি ও আবির খেলা হয়েছে।

অযোধ্যা পাহাড়ের নীচে পাহাড়তলিতে হয়েছে পলাশ পরব ও কবিতা উৎসব। উদ্যোক্তা জর্নাদন মাহাতো জানান, কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান, রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য প্রভৃতি হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন