কার্গিল সীমান্তে ট্রাক নিয়ে গভীর খাদে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হল বীরভূমের এক তরুণ সেনা জওয়ানের।
সোমবার বিকালে কার্গিল সীমান্ত থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে আপাতি সংলগ্ন এলাকার ঘটনা। মৃত জওয়ানের নাম, উত্তম বাগদি (২৬)। বাড়ি নলহাটি থানার ভদ্রপুরের মণিপুর এলাকায়। মৃতের পরিবার জানিয়েছে, সোমবার রাত ১০টা নাগাদ কাশ্মীর থেকে উত্তমের এক সহকর্মী প্রথমে ফোন করে বাড়িতে দুর্ঘটনার খবর দেন। পরে রাত ১টা নাগাদ সেনাবাহিনীর এক অফিসার উত্তমের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। উত্তমের ছোট ভাই অষ্টম বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সকালে ওই অফিসার ফোনে আমাদের জানিয়েছেন, দাদার মৃতদেহ ময়না-তদন্ত দিল্লি হয়ে বিমানে কলকাতায় নিয়ে আসা হবে। আজ, বুধবার ওঁর দেহ গ্রামে আসার কথা রয়েছে।’’
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তম একটি গরিব পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। তাঁর বাবা মানিক বাগদি পেশায় দিনমজুর। তাঁরা স্বামী-স্ত্রী ছাড়া তিন ছেলে, দুই বৌমা ও দুই নাতনিকে নিয়ে পরিবারে মোট ৯ জন সদস্য। সেনাবাহিনীতে ট্রাক চালকের চাকরি পেয়ে পরিবারকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করছিলেন উত্তম। তাঁর আয়ের উপরেই পরিবার অনেকটা নির্ভরশীল ছিল। মাটির বাড়ি ভেঙে পাকা বাড়ি তৈরি করেছিলেন উত্তম। অষ্টম বলেন, ‘‘কার্গিল থেকে দিল্লিতে বদলি হয়েছিল দাদা। পরের বছর জানুয়ারি মাসেই ছুটিতে বাড়ি আসার কথা ছিল। তার আগেই অঘটন ঘটে গেল।’’ উত্তমের স্ত্রী এবং এগারো মাসের একমাত্র কন্যা রয়েছে। মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি রামপুরহাট থানার হিমাদপুরেই ছিলেন স্ত্রী রুম্পা। সেখানেই স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়েছেন।
এ দিন ফোনে যোগাযোগ করা হলে কার্গিলে কর্মরত উত্তমের সহকর্মী শুভজিত শিকদার বলেন, ‘‘আপাতিতে উত্তমের পোস্টিং ছিল। সকাল ১০টা নাগাদ সেখান থেকে ট্রাক নিয়ে সৈনিকদের লাইনআপ করার জন্য নিয়ে গিয়েছিল। বিকেলে ফেরার পথে ওর ট্রাক খাদের নীচে পড়ে যায়। উদ্ধার করে সেনা বাহিনীর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উত্তমকে মৃত বলে জানিয়ে দেন।’’ অন্য দিকে, সকালে ওই জওয়ানের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল শোকের ছায়া নেমেছে গোটা মণিপুর গ্রামে। স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়াও আশপাশের সিমলান্দি, রামেশ্বরপুর, ভদ্রপুর, আকালিপুর গ্রামের মানুষও খবর পেয়ে উত্তমের বাড়িতে ভিড় করেছেন।
বাড়িতে থাকা ফোটো অ্যালবামে ছেলের ছবি আঁকড়ে ধরে অঝোরে কেঁদে চলেছেন উত্তমের মা অনিতাদেবী। কোনও রকমে বললেন, ‘‘ছেলেকে হারানোর যন্ত্রণা কোনও দিনই যাবে না। তবে, ছেলে দেশরক্ষা করতে গিয়ে মরেছে। এই গর্ব নিয়েই বেঁচে থাকব আমরা।’’