বাড়ির কাজ সেরে দোকান খুলতে যাচ্ছেন ছায়ারা

হঠাৎ এমন উদ্যোগ কেন? ১৯৭৬ সালে ৪১ জন সদস্যকে নিয়ে পথচলা শুরু করা এই সমবায় এখন মহীরূহ হয়ে উঠেছে। নিজস্ব ব্যাঙ্কেরই গ্রাহকের সংখ্যা ১৪ হাজার। ব্যাঙ্কের মূলধনও প্রায় ১৯ কোটি।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৭ ০৮:৪০
Share:

জয়পুরের বিপণিতে সোমবার। নিজস্ব চিত্র

মেয়েদের পোশাক থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন। জন্মদিনের উপহার থেকে স্কুলের সরঞ্জাম— সব কিছুই এ বার এক ছাদের তলায় নিয়ে এল পুরুলিয়ার জয়পুর কৃষি উন্নয়ন সমিতি।

Advertisement

অদূর ভবিষ্যতে এই ব্লক সদরে ধাঁ চকচকে শপিং মল গড়ে উঠবে কি না তা সময়ই বলবে। তবে সেই ভাবনা থেকেই গড়ে ওঠা এই বিপণিতে এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর উৎপাদিত জিনিসপত্রকে গুরুত্ব দিয়ে রাখা হচ্ছে বহুজাতিক সংস্থার পণ্যও। সম্প্রতি জয়পুরে পুরুলিয়া-রাঁচী রাস্তার ধারে মহিলাদের পরিচালিত এই বিপণির দরজা খোলা হয়েছে।

তিন তলার বাড়ির দোতলায় এই বিপণি। ভিতরে ঝকঝকে টাইলের মেঝে, চারপাশে সারি সারি তাকে সাজানো রংচঙে পোশাক।

Advertisement

কী নেই সেখানে! মেয়েদের ঘরের ও বাইরের বিভিন্ন ধরনের পোশাক, শিশুদের নানা রকমের সফট টয়েস। পড়ার সরঞ্জাম, অফিসের জরুরি জিনিসপত্র, বেবি ফুড, হেল্থ ড্রিঙ্কস থেকে বড়ি, পাঁপড়ও পাওয়া যাচ্ছে এখানে। ক্রেতাদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সমস্ত জিনিসপত্র ধৈর্য্য ধরে দেখাচ্ছেন মহিলারা। কেনাকাটার শেষে বিলও তৈরি করে দিচ্ছেন তাঁরাই। কৌতূহলী ক্রেতারা ব্যাগ ভরে নিয়ে বাড়ি ফিের যাচ্ছেন।

হঠাৎ এমন উদ্যোগ কেন? ১৯৭৬ সালে ৪১ জন সদস্যকে নিয়ে পথচলা শুরু করা এই সমবায় এখন মহীরূহ হয়ে উঠেছে। নিজস্ব ব্যাঙ্কেরই গ্রাহকের সংখ্যা ১৪ হাজার। ব্যাঙ্কের মূলধনও প্রায় ১৯ কোটি। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৩ সালে এসেছে রাজ্যের সেরা সমিতির শিরোপাও। কিন্তু বছর আটেক ধরে এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে, ঋণ দিয়ে জিনিসপত্র তৈরি করালেও বাজারের অভাবে বিক্রিবাটায় সেই গতি ছিল না। সমিতির ম্যানেজের সুধীর হাজরা বলেন, ‘‘স্বনির্ভর দলগুলির সদস্যদের তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা থাকলেও বিপণনের তেমন সুযোগ নেই। তাই আমরাই গোষ্ঠীগুলির পন্য কিনে লোকজনকে বিক্রি করছি। এতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর জিনিসপত্র নির্দিষ্ট একটি জায়গায় এলেই লোকজন পেয়ে যাচ্ছেন।’’

তিনি জানাচ্ছেন, এই এলাকা ও লাগোয়া ঝাড়খণ্ডে মহিলাদের তুলনামূলক কম দামের পোশাকের ভাল চাহিদা রয়েছে। তাই সমিতি গোষ্ঠীর সদস্যদের সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। সমিতিই তাঁদের কাপড় ও কাঁচামাল দিচ্ছে। সদস্যেরা পোশাক সেলাই করে সমিতিকে তা তুলে দিচ্ছেন। গোষ্ঠীর তৈরি বড়ি, পাঁপড়, টেডিবিয়ার-সহ নানা গৃহস্থালী সরঞ্জামে এ ভাবে ভরে উঠেছে এই বিপণি। শুধু তাই নয়, বাজার চলতি অন্যান্য সামগ্রীও তাঁরা ঠাঁই দিয়েছেন এখানে। লোকজন কিছু কিনতে এসে যাতে খালি হাতে না ফেরেন, সে দিকেই এখন নজর তাঁদের।

বিপণি সামলানোর যাবতীয় কাজ দেখভাল করছেন ছায়ারাণি সিংহ, মঞ্জরী বন্দ্যোপাধ্যায়েরা। তাঁরা বলেন, ‘‘সকালে বাড়ির কাজ সামলে দোকান খুলছি। সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকছি। বেচাকেনাও হচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস দিন দিন বিক্রিবাটা বাড়বে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিও আর্থিক ভাবে সমৃদ্ধ হবে।’’

বিডিও (জয়পুর) পিয়ালী মণ্ডল বলেন, ‘‘জয়পুর সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির এই ব্যতিক্রমী প্রয়াস অবশ্যই প্রশংসনীয়।’’ তিনি জানান, প্রশাসন গোষ্ঠীগুলিকে গুঁড়ো মশলা তৈরির প্রশিক্ষণ দেবে। সেই মশলা স্কুলগুলিতে মিড-ডে মিলে ব্যবহার করা হবে। এই বিপণি থেকেও তা বিক্রি করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন