অন্যদের সচেতন করে তেষ্টা চেপে রাখে কন্যাশ্রীরাই

নিতুড়িয়ার গুনিয়াড়া গ্রামের মুরলীধর মেমোরিয়াল হাইস্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়েদের সেই প্রতিরোধের ভাষা পৌঁছে যাবে আরও অনেক মানুষের কানে।

Advertisement

সমীর দত্ত

পুঞ্চা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৮ ০৭:১০
Share:

চলছে অনুষ্ঠানের রেকর্ডিং। পুঞ্চার লৌলাড়ায়। নিজস্ব চিত্র

মুখ ফুটে দাবিদাওয়া, চাহিদার কথা বলতে ওরা শিখেছে। এ বার নিতুড়িয়ার গুনিয়াড়া গ্রামের মুরলীধর মেমোরিয়াল হাইস্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়েদের সেই প্রতিরোধের ভাষা পৌঁছে যাবে আরও অনেক মানুষের কানে। শুক্রবার পুঞ্চার লৌলাড়ায় কমিউনিটি রেডিয়ো ‘নিত্যানন্দ জনবাণী’ তাদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠান রেকর্ড করেছে। আজ, শনিবার বাকি অংশের রেকর্ডিং হবে।

Advertisement

পুঞ্চা, বোরো, মানবাজার, হুড়া ও লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা ওই কমিউনিটি রেডিয়ো শুনতে পান। ‘নিত্যানন্দ জনবাণী’-র অন্যতম পরিচালক চণ্ডীদাস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই রেডিয়ো স্টেশনের অনেক শ্রোতা রয়েছেন। আমরা স্থানীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনুষ্ঠান করি। এলাকার মেয়েরা অনেক ভাল ভাল কাজ করছে। সেই কথাগুলি আমরা সবার কাছে তুলে ধরতে চাই।’’ তিনি জানান, সপ্তাহখানেকের মধ্যেই ওই অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হবে।

কী কাজ করছে ওই কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়েরা? ২০১৬ সালে মুরলীধর মেমোরিয়াল হাইস্কুলে ‘পূর্বাশা কন্যাশ্রী ক্লাব’ গড়ে ওঠে। বর্তমানে সদস্য ৬৬ জন। তাদের মধ্যে একাদশ শ্রেণির স্বাতী মিত্র, শ্যামা ভান্ডারী, ময়না মণ্ডল, প্রিয়াঙ্কা বাউড়িরা বলে, ‘‘ক্লাব তৈরি হওয়ার পরে আমাদের এলাকায় কম বয়সে বিয়ে দেওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কয়েক বছর আগেও কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে হতে দেখেছি। এখন আমরা নিয়মিত খোঁজ খবর রাখি।’’ তারা জানাচ্ছে, শিমুলিয়া গ্রামের এক ছাত্রী পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে স্কুলে আসা ছেড়ে দিয়েছিল। ক্লাবের মেয়েরা তাকে বুঝিয়ে স্কুলে ফিরিয়ে এনেছে। আগে ছাত্রীরা আয়রন ট্যবলেট নিয়ে বাড়ি চলে যেত। এখন স্কুলেই সেগুলি খায়।

Advertisement

এই সমস্ত সাফল্যের কথা গমগম করে উঠবে রেডিয়োতে। কিন্তু কন্যাশ্রীদের লড়াইটা শুধু বাইরে নয়। যে মেয়েরা সচেতনতার কথা বলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে, তাদের অনেকেই স্কুলের পুরো সময়টা তেষ্টা চেপে থাকে। পাছে শৌচাগারে যেতে হয়। সেখানে জলের বড় অভাব। কন্যাশ্রীদের অভিযোগ, শৌচাগারের দরজাও ভাঙা। বিডিওকে (নিতুড়িয়া) সমস্যার কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছে তারা।

এ দিন মেয়েদের সঙ্গে এসেছিলেন ওই স্কুলের শিক্ষিকা জয়িতা দেওঘরিয়া। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে দু’টি নলকূপ রয়েছে। প্রতি বছর গ্রীষ্মে একটি অচল হয়ে যায়। প্রায় এক হাজার ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। খুব সমস্যা হয় ওদের।’’ ছাত্রীদের অভিযোগ, স্কুলে ভেন্ডিং মেশিন থাকলেও নিয়মিত স্যানিটারি ন্যাপকিন মেলে না। তবে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসাদ মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘শৌচাগারের দরজা ভাঙা, এটা আমাকে কেউ জানায়নি।’’

জলের অভাবে শৌচাগারে সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নিতুড়িয়া ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, স্কুলের জায়গাটিতে জলস্তর অনেক নীচে থাকায় সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত জলের সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন