চালুনির ভিতর ভাঙা চাঁদ দেখে উপবাস ভাঙেন মঞ্জু-নম্রতারা

ব্রত পালনের জন্য উপবাস। পুজোপাঠ। দিনের শেষে চালুনির মধ্য দিয়ে স্ত্রীর চাঁদ দেখা। আর তার পরে স্বামীর মুখ দেখে জল খেয়ে ব্রত ভাঙা! দুবরাজপুর শহরেরও অন্তত চল্লিশটি মারওয়াড়ি পরিবারও মাতল এই ব্রততে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৬ ০০:০৮
Share:

চাঁদ দেখার পালা। দুবরাজপুরে একটি মারওয়াড়ি পরিবারে ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।

ব্রত পালনের জন্য উপবাস। পুজোপাঠ। দিনের শেষে চালুনির মধ্য দিয়ে স্ত্রীর চাঁদ দেখা। আর তার পরে স্বামীর মুখ দেখে জল খেয়ে ব্রত ভাঙা! দুবরাজপুর শহরেরও অন্তত চল্লিশটি মারওয়াড়ি পরিবারও মাতল এই ব্রততে।

Advertisement

হিন্দি সিনেমা ও টিভি সিরিয়ালের সৌজন্যে এমন দৃশ্য শুধু অতি পরিচিতই নয়, ‘কড়বা চওথ’ ব্রত জেলার গাঁ-ঘরেও এখন বেশ জনপ্রিয়। স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনায় উত্তর ভারত ও পশ্চিম ভারতের বিবাহিত মহিলাদের মতো এই ব্রত এখন অনেকেই পালন করে থাকেন। ‘কড়বা’ অর্থাৎ মাটির পাত্র, ‘চওথ’ অর্থাৎ চতুর্থী। কার্তিক মাসের পূর্ণিমার পর চতুর্থ দিন অর্থাৎ কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থীতেই পালিত হয় ওই ব্রত। বুধবারই ছিল সেই তিথি। দেশজুড়ে পালিত হল এই ব্রত।

মহল্লায় মেয়েরা সারাদিন উপবাসী থেকেছেন। একজন সোহাগন অর্থাৎ সদবা-র সাজে নিষ্ঠার সঙ্গে পুজোপাঠ করেছেন শিব পার্বতী এবং গণেশের। কেউ বা চওথ মাতা বা চতুর্থী দেবীর। তারপরে চাঁদ দেখে ব্রত ভেঙেছেন স্বামীর হাতে জল খেয়ে। দুবরাজপুরে অন্তত শতাধিক বিবাহিত মহিলারা এ ভাবেই পালন করলেন ব্রত। “স্বামীর মঙ্গল ও দীর্ঘায়ু কামনার জন্য যখন এই ব্রত তখন নিষ্ঠার সঙ্গেই পালন করতে হবে। কোনও বিচ্যুতি হওয়া চলবে না।” বলছিলেন দুবরাজপুরের বধূ নম্রতা মোদী, পুজা খাণ্ডেলওয়াল, মঞ্জু সিংহানিয়া, ঊষা গেনেরিওয়াল বা রিনা খাণ্ডেলরা।

Advertisement

প্রচলিত রীতি মতো এই ব্রত যখন পালিত হয় কাকতালীয় ভাবে তখন গম বা রবিশষ্য বপণের সময়। বড়মাটির পাত্র যেখানে গম সংরক্ষিত করে রাখা হয় সেগুলিকেও কড়বা বলা হয়। উপবাস এবং ব্রতপালন হত গম উৎপাদন যেন ভাল হয় সেই কামনায়। বিশেষ করে গম উৎপাদনকারী রাজ্যগুলিতে। অন্য একটি মত বলছে, আগে ছোট মেয়েদের বিয়ে হয়ে বহুদূরের শ্বশুর বাড়িতে যেতে হত। যোগযোগের অভাবে বাপের বাড়ি থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতেন বিবাহিত মেয়েরা। তাঁরা যেন তাঁদের বন্ধু খুঁজে পান সেই কারণেও এই উৎসবের সূচনা হয়ে থাকতে পারে। কেবলমাত্র উৎসব শুরু ধারণা নিয়েই বিভিন্ন মতপার্থক্য নয়, মতপ্রভেদ রয়েছে পৌরানিক উপাখ্যানে বর্ণিত গল্প-কাহিনি নিয়েও। একটি কাহিনিতে যেমন রয়েছে রানি বীরবতী-র কথা।

রানি বীরবতী সাত ভাইয়ের এক অতি আদরের বোন। সদ্যবিবাহিতা রানি বাপের বাড়িতে এসে স্বামীর মঙ্গলকামনায় কড়বা চওথের ব্রত পালন করছেন। চাঁদ উঠার অপেক্ষা করছেন। সারাদিন উপোস থাকা বোনের কষ্ট দেখতে না পেরে নকল চাঁদ তৈরি করে বোনকে দেখান ভাইরা। কিন্তু তখনই খবর আসে মারা গিয়েছেন রাজা। ভেঙে পড়েন রানি। সারারাত কান্নাকাটি করার পরে দেবী ফের তাঁকে ব্রত পালন করতে বললে তিনি মাতাকে সন্তুষ্ট করে তাঁর স্বামীকে ফেরৎ পান। কোথাও কোথাও একবছর ধরে প্রতিটি চতুর্থী পালন করে স্বামীকে ফেরত পাওয়ার গল্পও শোনা যায়। আরেকটি প্রচলিত কাহিনির মধ্যে রয়েছে সাবিত্রী সত্যবানের কথা।

সে গল্পে সত্যবানের মৃত্যুর পর খাওয়া দাওয়া ছেড়ে তিনি তাঁর স্বামীর দেহ নিয়ে যমুনায় ভেসে চলেছেন সাবিত্রী। যমরাজ সত্যবানের আত্মা নিতে এসেছেন। কিন্তু সাবিত্রী কিছুতেই যমরাজকে তা নিয়ে যেতে দিতে রাজি হচ্ছেন না। শুধু বলছেন, তাঁর স্বামীর প্রাণ ফিরিয়ে দিতে। যম বলেন, এটা ছাড়া তুমি আর যা চাইবে দেব। কৌশলে তিনি পুত্রবতী হওয়ার বর চাইলেন। সেটা দিয়ে ফেলেন যম। প্রাণ ফিরে পান সত্যবান। গল্পের কথা বলতে বলতে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘মহাভারতে দ্রৌপদীও অর্জুনের জন্য কড়বা চওথ পালন করেছিলেন বলে উল্লেখ রয়েছে। উল্লেখ রয়েছে আরও এক কড়বা নামের নারীর উপাখ্যানও।’’ রিনা খাণ্ডেলওয়াল সাবিত্রী সত্যবানের কাহিনি মেনেই ব্রত পালন করেন।

অন্যদিকে নম্রতা বা ঊষা দেবীরা মানেন রানি বীরবতীর কাহিনি! তবে যে কাহিনির বিশ্বাসেই ব্রত করুন না কেন, ওঁরা বলছেন, আসলে স্বামীর মঙ্গল কামনায় এবং দীর্ঘ আয়ুর জন্য এই ব্রত পালনই মূল উদ্দেশ্য। সেখানে কে কোন পৌরাণিক উপাখ্যান মানলেন সেটা বড় কথা নয়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন