কুড়মালি ভাষা পেল স্বীকৃতি

বুধবার রাজ্য বিধানসভা কুড়মালি ভাষাকে সরকারি ভাষার সিলমোহর দিল। এতে স্বস্তি পেলেন কুড়মালি ভাষা নিয়ে এত দিন আন্দোলনে যুক্ত থাকা মানুষজন। একই সঙ্গে কামতাপুরি, রাজবংশী ভাষাকেও এ দিন স্বীকৃতি দিল বিধানসভা। 

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৮ ০২:৩৪
Share:

দীর্ঘ দিনের আন্দোলন, বহু চড়াই-উতরাই, বহু বন্‌ধ-বিক্ষোভের পথ পেরিয়ে অবশেষে স্বীকৃতি পেল কুড়মালি ভাষা।

Advertisement

বুধবার রাজ্য বিধানসভা কুড়মালি ভাষাকে সরকারি ভাষার সিলমোহর দিল। এতে স্বস্তি পেলেন কুড়মালি ভাষা নিয়ে এত দিন আন্দোলনে যুক্ত থাকা মানুষজন। একই সঙ্গে কামতাপুরি, রাজবংশী ভাষাকেও এ দিন স্বীকৃতি দিল বিধানসভা।

জঙ্গলমহলের একটা বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের মুখের ভাষা এই কুড়মালি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন। ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে কুড়মি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড। তবুও কুড়মালি ভাষার স্বীকৃতি যেন কোথায় আটকে ছিল বলে অসন্তোষ ছিল।

Advertisement

এ নিয়ে পুরুলিয়ার জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা বিধানসভায় দলের ডেপুটি লিডার নেপাল মাহাতো দীর্ঘদিন ধরে সরব ছিলেন। শাসকদলের জেলা নেতৃত্বের মধ্যেও স্বীকৃতির দাবিতে চাপ তৈরি হচ্ছিল। তাই ঠিক পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এই স্বীকৃতি, স্বস্তি এনে দিল জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে।

নেপালবাবু বলেন, ‘‘গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিধানসভা কুরুখ ভাষাকে স্বীকৃতি দেয়। সে দিনই আমি একটি সংশোধনী জমা দিয়ে কুরুখ ভাষার সঙ্গে কুড়মালি ভাষাটিকেও সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছিলাম। তখন খারিজ হয়। পরে ১৯ ফেব্রুয়ারি সরকার চলতি অধিবেশনে কুড়মালিকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বিল নিয়ে আসে। এত দিনে একটা প্রাচীন ভাষা সম্মান পেল। মুখ্যমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাই।’’ তাঁর আশা, এ বার এই ভাষার চর্চা বাড়বে। এই ভাষাটিকে ঘিরে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে।

তিনি জানান, ওয়েস্টবেঙ্গল অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাক্ট ১৯৬১ অনুযায়ী বাংলা, উর্দু, নেপালি এবং পঞ্জাবি এই চারটি ভাষাকে রাজ্য সরকার স্বীকৃতি দিয়েছিল।

অথচ কোনও মহকুমার ১০ শতাংশ মানুষ যদি কোনও একটি ভাষায় কথা বলেন, তাহলেই সেই ভাষাকে রাজ্য সরকার স্বীকৃতি দেয়। সে ক্ষেত্রে কুড়মালিকে কেন বঞ্চনা করা হয়েছিল, এই প্রশ্ন তিনি বিভিন্ন সময়ে তুলেছেন।

এই ভাষার ইতিহাসও অতি প্রাচীন। সে কথা জানিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো দাবি করেছেন, প্রখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ ডালটন ও রিজলে সাহেব তাঁদের গবেষণায় কুড়মি জাতির প্রাচীনত্ব প্রমাণ করে গিয়েছেন। কুড়মি জাতি হল ভারতবর্ষের আদিম দ্রাবিড় বংশজাত একটি শাখা— রিজলে সাহেব তাঁর ‘ট্রাইবস অ্যান্ড কাস্টস অব বেঙ্গল’-র প্রথম খণ্ডে এ কথা উল্লেখ করেছেন।

মন্ত্রীর কথায়, ‘‘বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পুরুলিয়া জেলায় কুড়মি সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। কুড়মালি ভাষা তার আদিম ও শুদ্ধ রূপ নিয়ে এখনও পুরুলিয়ায় বর্তমান। শুধু কুড়মি সম্প্রদায়ই নয়, এই জেলাগুলিতে অন্য সম্প্রদায়ের বহু মানুষও কুড়মালি ভাষাতেই কথা বলেন। অথচ এই আদিম ভাষা আজও সরকারি স্বীকৃতি পায়নি। এই কথাগুলি উল্লেখ করে আমি মুখ্যমন্ত্রীকে একটি চিঠি লিখেছিলাম।’’

তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী কুড়মি জনজাতির উন্নয়নে সচেষ্ট। কুড়মি উন্নয়ন বোর্ড গড়েছেন। সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে কুড়মালি সাহিত্য চর্চার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দু’টি কলেজে কুড়মালি ভাষা পড়ানো হচ্ছে। স্বীকৃতি পাওয়াটা শুধু সময়ের অপেক্ষা ছিল।

এ দিন তিনি দাবি করেন, ‘‘আমি যে তাঁর কাছে এই ভাষার স্বীকৃতির বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কথা বলেছিলাম, মুখ্যমন্ত্রী এ দিন নিজে বিধানসভায় তা উল্লেখ করেছেন। আমরা খুশি, মুখ্যমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।’’

পুরুলিয়ার শিক্ষাদরদী মানুষজন জানাচ্ছেন, ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর পুরুলিয়ার পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভুক্তি যেমন স্মরণীয় ঘটনা ছিল, কুড়মালি ভাষার স্বীকৃতিও তেমনই উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তি হিসেবেই চিহ্নিত হল।

লড়াই অবশ্য থামছে না। আন্দোলনকারীরা জানাচ্ছেন, কুড়মি সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতিভুক্ত করার দাবি এখনও পূরণ হয়নি। রাজ্য সরকার কেন্দ্রকে প্রস্তাব দিলেও, এখনও সেই স্বীকৃতি নয়াদিল্লি থেকে আসেনি। সে দিকেই তাকিয়ে তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন