চড়া দামে সঙ্কটে গৃহস্থ

প্রতিমায় লক্ষ্মীলাভ বিক্রেতাদের

বাঁকুড়া: ছোট, বড়, মাঝারি— নানা মাপের লক্ষ্মী প্রতিমা সাজিয়ে সকাল সকাল মাচানতলা মোড়ের কাছে বসেছিলেন ব্যবসায়ী মধুসূদন চন্দ। বেলা গড়াতেই ভিড় জমে উঠেছে। দুপুরের মধ্যেই পসরা খালি। দোকান গোটাতে গোটাতে এক গাল হাসি নিয়ে মধুসূদনবাবু বলেন, “দম ফেলারও ফুরসৎ পাইনি। হৈ-হৈ করে সমস্ত বিক্রি হয়ে গিয়েছে। গত বছরের থেকে বেশ খানিকটা বেশি লাভ হল এ বারে।’’

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৪৭
Share:

এসো মা লক্ষ্মী। বিষ্ণুপুরের রাধানগর গ্রামে লক্ষ্মীর ভাঁড় বাছাই করে নেওয়া। (ডানদিকে) পুজোর ধান নিয়ে ঘরে ফেরা। বাঁকুড়ার পুরন্দরপুর গ্রামে। —শুভ্র মিত্র ও অভিজিৎ সিংহ

ছোট, বড়, মাঝারি— নানা মাপের লক্ষ্মী প্রতিমা সাজিয়ে সকাল সকাল মাচানতলা মোড়ের কাছে বসেছিলেন ব্যবসায়ী মধুসূদন চন্দ। বেলা গড়াতেই ভিড় জমে উঠেছে। দুপুরের মধ্যেই পসরা খালি। দোকান গোটাতে গোটাতে এক গাল হাসি নিয়ে মধুসূদনবাবু বলেন, “দম ফেলারও ফুরসৎ পাইনি। হৈ-হৈ করে সমস্ত বিক্রি হয়ে গিয়েছে। গত বছরের থেকে বেশ খানিকটা বেশি লাভ হল এ বারে।’’

Advertisement

লক্ষ্মীপুজোয় এ বারে বেশ কিছুটা বাড়তি লক্ষ্মীলাভ হয়েছে বলে জানাচ্ছেন জেলার ব্যবসায়ী এবং প্রতিমাশিল্পীদের একাংশ। মাচানতলায় মধুসূদনবাবুর পাশেই পসরা নিয়ে বসেছিলেন আরও এক ব্যবসায়ী দুলাল দত্ত। তিনি জানান, এ বারে বর্ধমানের বড়নীলপুর এলাকা থেকে প্রায় চারশো প্রতিমা কিনে এনেছিলেন। বিক্রি শুরু করেছিলেন বুধবার রাত থেকে। শনিবার, লক্ষ্মীপুজোর দিন বিকেলের মধ্যেই প্রায় সব প্রতিমা বিক্রি হয়ে গিয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এই বছর প্রতিমার দাম বেশ কিছুটা চড়ার দিকে। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, এক ফুটের থেকে ছোট লক্ষ্মী প্রতিমার দর গত বছর যেখানে ছিল ১০০ টাকা, এ বারে সেটাই বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫০ টাকায়। মাঝারি মাপের, ফুট দু’য়েকের লক্ষ্মী প্রতিমা এ বছর বিক্রি হয়েছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। গত বছরও ওই মাপের প্রতিমা মিলেছে কমবেশি ২৫০ টাকায়। বিষ্ণুপুরের খোলা বাজারেও প্রতিমার দর প্রায় একই। বিক্রিও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিষ্ণুপুরের বাহাদুরগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ী নারায়ণ পালের কথায়, “গত বছরের তুলনায় এই বছর অনেক বেশি প্রতিমা এনেছিলাম। বেশ ভাল বিক্রি হয়েছে।’’

লাভের মুখ দেখেছেন মৃৎশিল্পীদের একাংশও। ব্যবসায়ীদের পাশাপশি স্থানীয় মৃৎশিল্পীরাও এ বারে প্রতিমার দর কিছুটা বাড়িয়েছেন। বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরের বেশ কিছু বড় লক্ষ্মী পুজো কমিটি মৃৎশিল্পীদের কাছ বায়না দিয়ে প্রতিমা গড়ান। বাঁকুড়ার বড় ষোলোআনা এলাকার মৃৎশিল্পী শ্রীকান্ত চন্দের কথায়, “জিনিসপত্রের দাম গত এক বছরে অনেকটাই বেড়ে গিয়ছে। তাই প্রতিমার দরও খোলা বাজারের পাল্লা দিয়ে বেড়েছে।’’ তিনি জানান, এই বছর ১৫টি লক্ষ্মী প্রতিমা গড়ার বায়না পেয়েছেন। ডাকের সাজের চার ফুটের প্রতিমার দর এই বছর তিন হাজার টাকা। যা গত বছরের তুলনায় কয়েক’শ টাকা বেশি। একই মাপের সাধারণ প্রতিমা বিক্রি করেছেন দু’হাজার টাকায়। গত বছর ওই প্রতিমার দাম ছিল ১৮০০ টাকার মধ্যে। দাম বেড়েছে সাধারণ প্রতিমারও। তবে শহরের আর এক মৃৎশিল্পী মনোরঞ্জন চন্দের কথায়, “মুর্তির দর বাড়লেও আমাদের যে খুব বেশি লাভ হচ্ছে তা ঠিক নয়। মালপত্রের দাম বা শ্রমিকদের মজুরিও তো অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।”

Advertisement

বিষ্ণুপুরের বাহাদুরগঞ্জ এলাকার মৃৎশিল্পী কালোসোনা সূ্ত্রধরের কথায়, “প্রতিবছরই লক্ষ্মী পুজো কমিটি বাড়ছে। ফলে প্রতিমার বায়না দেওয়ার ধুমও বাড়ছে। লাভও হচ্ছে।’’ তবে দুর্গাপুজোর পর হাতে গোনা ক’টা দিন সময় থাকে প্রতিমা গড়ার জন্য। তারপরে আবার কালী পুজো এসে যায়। সেই চাপও থাকে। ফলে লক্ষ্মী প্রতিমার চাহিদা থাকলেও খুব বেশি বায়না নেওয়া যায় না বলে ওই শিল্পীর দাবি। কালোসোনাবাবুর ছেলে রখহরি সূত্রধর ইতিমধ্যেই কালী প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু করে দিয়েছেন।

তবে প্রতিমার চড়া দামে বিপাকে পড়ছেন গৃহস্থেরা। সাধারণ মধ্যবিত্তের পুজোর খরচ এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। বাঁকুড়ার লোকপুরের প্রৌঢ়া দীপ্তি চৌধুরীর কথায়, “প্রতি বছর লক্ষ্মী পুজোর আগে সব্জি, মিষ্টি, ফল, ফুলের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এ বারে প্রতিমার দরও বেড়ে গিয়েছে। গত বছর যে প্রতিমা ১২০ টাকায় কিনেছিলাম সেটাই এ বারে ১৫০ টাকার নীচে নামছে না।’’ বিষ্ণুপুরের স্টেশন রোডের বাসিন্দা রাজীব দত্তের আক্ষেপ, “যে হারে জিনসপত্রের দাম বাড়ছে তাতে আর কয়েক বছরের মধ্যেই লক্ষ্মীদেবী সাধারণ মধ্যবিত্তের ধরা ছোঁয়ার বাইরে না বেরিয়ে যান!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন