মনোনয়ন তুলতে বাধা, ধুন্ধুমার ব্যাঙ্কে

ক’দিন আগেই স্কুলের ভোটে প্রার্থীদের নিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে নিজের গ্রামেই আক্রান্ত হয়েছিলেন হাঁসনের কংগ্রেস বিধায়ক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৪৭
Share:

(১) ও (২) বিরোধীদের ঢুকতে ব্যাঙ্কের সামনে এ ভাবেই বাধা দেওয়া হল।—সব্যসাচী ইসলাম।

ক’দিন আগেই স্কুলের ভোটে প্রার্থীদের নিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে নিজের গ্রামেই আক্রান্ত হয়েছিলেন হাঁসনের কংগ্রেস বিধায়ক। এ বার ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির ভোটে মনোনয়নপত্র তুলতে এসে দুষ্কৃতীদের বাধায় ফিরে যেতে বাধ্য হলেন বাম নেতা-কর্মীরা। এমনকী, মহিলাদেরও হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

সোমবার রামপুরহাটে ‘কো–অপারেটিভ এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্কে’র ওই ঘটনাতেও নাম জড়িয়েছে শাসকদল তৃণমূলেরই। বিরোধীদের অভিযোগ, গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা হারিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বারবার এমন কাণ্ড ঘটাচ্ছে। এ দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।

ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, কংগ্রেস ও তৃণমূল জোটের হাতে থাকা বর্তমান পরিচালন সমিতির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৩ ডিসেম্বর। গত ভোটে বামেরা ২০টি এবং জোট ২৬টি আসন পেয়েছিল। আগামী ৮ জানুয়ারি নতুন পরিচালন কমিটি গঠনের নির্বাচন হবে। রামপুরহাট মহকুমার ৮টি ব্লক মিলিয়ে মোট ৯,৩০৭ জন সদস্য তাতে যোগ দেবেন। ভোটের জন্য ব্যাঙ্কের স্থানীয় ডাকবাংলা পাড়ার হেড অফিস থেকে ১৯-২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়ার দিন ধার্য হয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মতিউর রহমানের অভিযোগ, ‘‘এ দিন প্রথমে সকাল ১১টায় প্রার্থীদের নিয়ে ব্যাঙ্কে যাই। তৃণমূলের কিছু নেতা গুন্ডা ঢোকার গেট বন্ধ করে আমাদের ঢুকতে বাধা দেয়।’’ বাধা পেয়েও গোলাম রসুল নামে তাঁদের এক প্রার্থী কোনও রকমে ব্যাঙ্কে ঢুকে পড়েন। তাঁর অভিযোগ, ব্যাঙ্কের কর্মীরা তাঁরা নামে মনোনয়নপত্র দেওয়া শুরু করলে তৃণমূল কর্মীরা ব্যাঙ্কের ভিতরে ঢুকে বাধা দেন। তাঁকেও খালি হাতেই ফিরতে হয়।

Advertisement

বিরোধীদের এ ভাবেই বাধা দেওয়া হয়

বামেদের দাবি, এরই মধ্যে বাকি প্রার্থীদের নিয়ে এলাকায় আসেন দলীয় নেতৃত্ব। মতিউরের পাশাপাশি তাতে ছিলেন সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অরূপ বাগ, নলহাটির নেতা চন্দন মুর্মু, সনৎ প্রামাণিক, মাড়গ্রামের কালাম মোল্লা এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের কিবরিয়া শেখ। ছিলেন সারা ভারত মহিলা সমিতির জেলা সম্পাদিকা এবং রাজ্য কমিটির সদস্য কেনিজ রবিউল ফাতিমাও। তাঁরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে এসডিও সুপ্রিয় দাসের আশ্বাসে দুপুর ১২টার পরে ৪৬ জন প্রার্থী এবং প্রস্তাবকদের নিয়ে বাম নেতৃত্বে ফের ব্যাঙ্কে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

ওই সময় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাম প্রার্থীরা দল বেঁধে ব্যাঙ্কের কাছে আসতেই একদল লোক (বামেদের দাবি, তাঁরা তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক) প্রথমে ব্যাঙ্ক ঢোকার গেট বন্ধ করে দেন। এলাকায় তখন মাত্র এক জন কনস্টেবল উপস্থিত। তা-ও ব্যাঙ্কের ভিতরে। ব্যাঙ্কে ঢোকা নিয়ে তৃণমূল কর্মীরা বাধা দিতেই দু’পক্ষের বচসা শুরু হয়। এর পরেই দেখা যায় ধাক্কা দিয়ে প্রথমে অরূপ বাগকে পরে মতিউর রহমান, কেনিজ রবিউল ফাতিমা, প্রভাত মুখোপাধ্যায়, দিলীপ মেহেনা, কালাম মোল্লাদেরও ব্যাঙ্কের গেটের সামনে থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। একসময় দেখা যায় ওই লোকেরা প্রার্থীদের ব্যাঙ্ক থেকে তাড়াতে তাড়াতে প্রায় ডাকবাংলা পাড়া মোড় পর্যন্ত নিয়ে চলে যায়। এবং গোটা সময়-পর্বে ঘটনাস্থলে তৃণমূলের রামপুরহাট মহকুমা পর্যবেক্ষক ত্রিদিব ভট্টাচার্য, রামপুরহাট ১ ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেন, রামপুরহাট শহর সভাপতি সুশান্ত মুখোধ্যায়দের মতো নেতাদের উপস্থিত থাকলে দেখা গেল।

ত্রিদিব এবং নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী নির্বাচনী আধিকারিক প্রশান্তকুমার দাঁ ও শান্তনু পণ্ডিত— প্রত্যেকেই অবশ্য বাম নেতৃত্বের অভিযোগ মানতে নারাজ। ত্রিদিব বলেন, ‘‘কোথাও কোনও গণ্ডগোল হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।’’ একই দাবি করেছেন ব্যাঙ্কের বর্তমান পরিচালন কমিটির চেয়ারম্যান সেমিম আলমও। আবার প্রশান্তবাবুদের দাবি, ‘‘ব্যাঙ্কের গেট সব সময় খোলা ছিল। ব্যাঙ্কের ভিতরেও কোনও গণ্ডগোল হয়নি।’’

ব্যাঙ্ক থেকে অবাধে টাকা লুঠ করার লক্ষ্যেই তৃণমূল নেতারা এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে দাবি জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মির। আর কেনিজ রবিউল ফাতিমাদের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মনোনয়ন তুলতে গিয়ে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা আমাদের মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশ-প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে আদালতের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হব আমরা।’’ অন্য দিকে, সুপ্রিয়বাবুর আশ্বাস, ‘‘ওঁরা যাতে মনোনয়ন দিতে পারেন, তার ব্যবস্থা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন