অসমাপ্ত: শেষ হয়নি বাড়ির কাজ। দুবরাজপুরে। নিজস্ব চিত্র
জেলায় আবাস যোজনার কাজ যে গতিতে এগিয়েছে তাতে সময়ে লক্ষ্যপূরণ হওয়া সম্ভব নয়, এটা বুঝে ফের কাজের গতি বাড়াতে তৎপর হল প্রশাসন।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি প্রতিটি ব্লকের বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, প্রধান, নির্বচিত সদস্য ও ‘ফিল্ড স্টাফ’দের কাছে এ নিয়ে কড়া বার্তা গিয়েছে। বলা হয়েছে, যে কোনও মূল্যে আবাস যোজনায় কাজের গতি বাড়াতে হবে।
ডিসেম্বরের মধ্যেই সরকারি আবাস যোজনার কাজে ১০০ শতাংশ ছুঁয়ে ফেলার লক্ষ্য ছিল জেলা প্রশাসনের। রাজ্য সরকারের নির্দেশও ছিল তাই। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, কিন্তু আবাস যোজনা নিয়ে জেলায় কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। কী সমস্যা হচ্ছে তা দেখতে গিয়ে প্রশাসন সম্প্রতি নানা অভিযোগ পেয়েছে। তারমধ্যে রয়েছে দুর্নীতি, উপভোক্তাদের কাছ থেকে টাকা চাওয়া, টাকা না পেলে ‘জিও ট্যাগিং’ করতে না চাওয়া, এক উপভোক্তার বদলে অন্যের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকে যাওয়া, কেউ টাকা পেয়েও বাড়ি তৈরির কাজ শুরু না করা সহ নানা অভিযোগ পেয়েছে প্রশাসন।
সে সব সমস্যা পেরিয়ে কী ভাবে কাজ করতে হবে— সেই নির্দেশই গিয়েছে ব্লকে ব্লকে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) দীপেন্দু বেরা বলেন, ‘‘যে কোনও অভিযোগ কড়া হাতে মোকাবিলা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফিল্ড স্টাফ, নির্বাচিত সদস্য, প্রধান ও বিডিও— সকলকেই ওই প্রকল্প সফল করতে চেষ্টা চালাতে হবে। এটাই স্পষ্ট করে বলা হয়েছে।’’
দেশ ২০২২ সালে স্বাধীনতার ৭৫-তম বর্ষ ছুঁয়ে যাবে। তার আগে দেশের সব গৃহহীনের বাড়ি তৈরি করা হবে বলে ২০১৬ সালে ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগে ইন্দিরা আবাস যোজনার নাম বদলে হয় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা। কেন্দ্র ও রাজ্যের অংশীদারিত্বে ওই প্রকল্প রূপায়ণে প্রতি বছর গ্রামীণ এলাকায় ১ কোটি বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। এই প্রকল্পে গৃহহীন চিহ্নিত পরিবারকে কিস্তিতে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা। এ ছাড়াও উপভোক্তা পাবেন ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে ৯০ দিনের মজুরি। কেন্দ্রীয় প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাংলা সংস্করণ বাংলা আবাস যোজনা।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, চলতি বছরে জেলার জন্য বাংলা আবাস যোজনায় বরাদ্দ হয় ৬৯ হাজার ৭০৭টি বাড়ি। রাজ্যের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। কিন্তু মার্চ থেকে অগস্টের শুরুতে পৌঁছে জেলা প্রশাসন জানতে পারে, বীরভূম জেলা এই প্রকল্প রূপায়নের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে গিয়েছে। ঝাড়গ্রাম, কালিম্পংয়ের মতো কাজের নিরিখে সব থেকে পিছিয়ে থাকা কয়েকটি জেলার পরেই ১৮তম স্থানে ছিল বীরভূম। বাড়ি তৈরির টাকা পেলেও অনেক ক্ষেত্রে কাজ এগোয়নি। এক নয় উপভোক্তারা প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েও অনেক ক্ষেত্রে বাড়ির কাজে হাত দেননি। কোথাও প্রশাসনিক গাফিলতিতে ‘জিও ট্যাগিং’ বা আধার লিঙ্ক না করানোয় সমস্যা বাড়ছিল। কোনও কোনও উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে টাকাও ঢোকেনি।
সরকারি ওই প্রকল্পের কাজে গতি আনতে এবং প্রকল্প সম্পর্কে আরও বেশি করে জনসচেতনতা গড়তে প্রশাসন উদ্যোগী হয় অগস্টেই। বীরভূম জেলা পরিষদ এক সপ্তাহ জুড়ে আবাস যোজনা সপ্তাহ পালন করে। অঙ্গীকার করা হয়েছিল ডিসেম্বরে কাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু এত কিছুর পরও সেই লক্ষ্য থেকে এখনওও অনেক পিছিয়ে জেলা।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, খয়রাশোল থেকে মহম্মদবাজার— সব জায়গা থেকে আবাস যোজনা নিয়ে দুর্নীতির নানা অভিযোগ প্রকাশ্যে আসছে। তাই নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া হল। প্রশাসনের কর্তারা অবশ্য দাবি করেছেন, আবাস যোজনার কাজের নিরিখে জেলা এখন চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে। কিন্তু প্রশাসনের অন্দরমহলের খবর, এখনও পর্যন্ত মাত্র ৪০ শতাংশ উপভোক্তা তিন কিস্তির টাকা পেয়ে বাড়ি তৈরির কাজ শেষ করেছেন বা করছেন। বাকিরা অনেক পিছিয়ে। এ বিষয়ে এডিএম (জেলা পরিষদ) বলেন, ‘‘ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ না হলেও অন্তত ৭০ শতাংশে কাজ যাতে হয়, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।’’