টাকা মিলুক, না মিলুক, মিলছে চা-পানি

একদিনের বিরতি। মঙ্গলবার ব্যাঙ্ক, ডাকঘর খুলতে ফের হাত-খালি বাঙালি লাইন দিলেন টাকা জোগাড়ে। বাঁধা ভোগান্তির মধ্যেও কিছু সহৃদয় মুখও পাওয়া গেল। তুলে ধরল আনন্দবাজার।একদিনের বিরতি। মঙ্গলবার ব্যাঙ্ক, ডাকঘর খুলতে ফের হাত-খালি বাঙালি লাইন দিলেন টাকা জোগাড়ে। বাঁধা ভোগান্তির মধ্যেও কিছু সহৃদয় মুখও পাওয়া গেল। তুলে ধরল আনন্দবাজার।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩৮
Share:

পুরুলিয়ায় লাইনে থাকা লোকের তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন পুলিশ কর্মীরা।—নিজস্ব চিত্র।

•বয়স্করা ব্রাত্যই

Advertisement

বয়স্ক মানুষজনের জন্য বিভিন্ন ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে পৃথক লাইন রাখতে অনুরোধ করেছে কেন্দ্র। কিন্তু মঙ্গলবার পুরুলিয়া শহরের বিভিন্ন ব্যাঙ্ক বা ডাকঘর ঘুরেও বয়স্কদের কোনও আলাদা লাইন চোখে পড়ল না। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে আর পাঁচজনের সঙ্গেই লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন আড়শার পুয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা প্রবীণ চণ্ডীচরণ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে রয়েছি। শুনেছিলাম প্রবীণ নাগরিকদের জন্য পৃথক লাইন হবে। কিন্তু এসে দেখছি, সে সব কিছুই হচ্ছে না।’’ লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন পুরুলিয়া ১ ব্লকের লুসাবেড়া গ্রামের প্রৌঢ়া গঙ্গা সিং সর্দার, রুদড়া গ্রামের ইউসুফ মিঞা-সহ অনেকেই। তাঁদেরও প্রতিক্রিয়া— ‘‘কই কোথাও তো প্রবীণ নাগরিকদের জন্য পৃথক কোনও লাইন দেখতে পাচ্ছি না। বাধ্য হয়ে শারীরিক নানা সমস্যা নিয়েও বয়স্কদের কম বয়েসিদের সঙ্গেই লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’’ কেন প্রবীণ নাগরিকদের জন্য পৃথক লাইনের ব্যবস্থা নেই? ব্যাঙ্কের শাখা প্রবন্ধক জয়কিষুণ দাসের দাবি, ‘‘প্রবীণ নাগরিক ও মহিলাদের জন্য পৃথক লাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু ভিড়ের চাপে সব লাইনই তছনছ হয়ে গিয়েছে।’’

পুরুলিয়া ডাক বিভাগের সুপার তপন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নির্দেশ পেলে অবশ্যই প্রবীণ নাগরিকদের জন্য পৃথক লাইনের ব্যবস্থা করা হবে।’’ তবে শহরের অন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে দেখা গেল, শাখা প্রবন্ধক নিজেই প্রবীণদের জন্য আলাদা লাইনের ব্যবস্থা করছেন। ততক্ষণে অবশ্য ঘড়ির কাঁটা দুপুর দেড়টা ছুঁয়েছে। ওই ব্যাঙ্কের শাখা প্রবন্ধক বিজয়কুমার মিশ্র বলেন, ‘‘আমাদের কাছেও তেমন নির্দেশ ছিল না। তবে আমরা প্রবীণ নাগরিকদের জন্য পৃথক লাইনের ব্যবস্থা করছি।’’

Advertisement

•পুলিশের বার্তা

হাতটান চলছে কয়েক দিন ধরেই। তাই সাহাপাড়ার একটি ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে গিয়েছিলেন বিষ্ণুপুরের এসডিপিও। ব্যাঙ্কের সামনে গিয়ে দেখেন কয়েকশো মানুষের লম্বা লাইন। লাইনে বয়স্ক থেকে কমবয়সি, ছাত্রছাত্রী সকলেই রয়েছেন। কারও মুখ শুকনো, কেউ বা ঝিমোচ্ছেন। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজনের এই অবস্থা দেখে টাকা ভাঙানোর চিন্তা বাতিল করে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর কথা ভাবেন ওই পুলিশ কর্তা। এসডিপিও লাল্টু হালদার ফোন করে ডেকে নিলেন বিষ্ণুপুর থানার আইসি আস্তিক মুখোপাধ্যায়কে। থানা থেকে জল এনে গ্লাসে জল ভরে সাধারণ মানুষকে দেওয়া হয়। লাইনে দাঁড়ানো কয়েকজনের আব্দারে চলে আসে চা, বিস্কুটও। এসডিপিও বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে এসেছিলাম। কিন্তু লাইনে দাঁড়ানো মানুষজনের কষ্ট দেখে খারাপ লাগল। তাই পুলিশ কর্মীরা তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছি।’’ লাইনে থাকা কারও কারও মন্তব্য, ‘‘এ পুলিশের একরকম জনসংযোগই বটে।’’ এ দিন পুরুলিয়া শহরেও একটি ব্যাঙ্কের সামনে পুলিশ কর্মীরা প্লাস্টিকের গ্লাসে জল এগিয়ে দেন লাইনে দাঁড়ানোর মানুষজনকে।

•জোর গুজব

‘ব্রেকিং নিউজ। বাঁকুড়ার এক ডাক্তার ১ কোটি টাকা নিয়ে ধরা পড়েছেন’- হাজার ও পাঁচশোর নোট বাতিল হওয়ার পরপরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই মেসেজটি কার্যত ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। যার জেরে অস্বস্তিতে পড়েছেন ওই ডাক্তার। তবে ওই ডাক্তার গোটা ঘটনাটিকে গুজব বলে দাবি করে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাঁকুড়া সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। চিকিৎসক বলেন, ‘‘শুধু বাঁকুড়া জেলাই নয়, আশপাশের জেলাতেও মেসেজটা ছড়িয়ে পড়েছে। পরিচিতজনেরা উদ্বিগ্ন হয়ে আমাকে ফোন করছেন। আমার আত্মীয় পরিজনেরা রীতিমতো ঘাবড়ে গিয়েছেন।” এই গুজব ছড়ানোর পিছনে দায়ী ব্যক্তির কড়া শাস্তি দাবি করেছেন তিনি। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

•হেল্প ডেস্ক

দলীয় নেতৃত্ব একদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাঁচশো, হাজার টাকার নোট বাতিলের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। আর পুরুলিয়ায় টাকা তুলতে বা জমা করতে আসা মানুষের পাশে দাঁড়ালেন দলের কর্মীরা। মঙ্গলবার শহরের প্রাণকেন্দ্রে জেলাশাসকের কার্যালয় লাগোয়া একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে হেল্পডেস্ক খুলেছে সিপিএমের পুরুলিয়া শহর জোনাল কমিটি ও যুব সংগঠন ডিওয়াইএফ। তাঁরা লাইনে দাঁড়ানো মানুষজনের টাকা বদলের কিংবা টাকা জমার ফর্ম ভরে দেওয়া থেকে ওই সংক্রান্ত কাজ করে দিচ্ছেন। সিপিএমের পুরুলিয়া শহর জোনাল কমিটির সদস্য কৌশিক মজুমদার বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষকে টাকা বদলাতে বা জমা করতে হয়রান হতে হচ্ছে। অনেকে জানেন না কী ভাবে ফর্ম ভর্তি করতে হবে। আমরা তাঁদের সাহায্য করছি।’’ কাশীপুরে আবার দু’টি ব্যাঙ্কের সামনে এ দিন থেকে পানীয় জল দিচ্ছেন তৃণমূলের কর্মীরা।

•পরিষেবা বন্ধ

১৯ নভেম্বর পর্যন্ত নোট বদল করা যাবে না বা টাকা তোলা যাবে না, এই মর্মে ব্যাঙ্কের একটি নোটিসকে ঘিরে বিভ্রান্তি ছড়াল ঝালদায়। মঙ্গলবার ঝালদা পুরসভা চত্বর লাগোয়া একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় ওই নোটিস পড়ে। তা দেখে স্থানীয় লোকজন ক্ষোভে পেটে পড়েন। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বও ব্যাঙ্কের বাইরে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। ঝালদা শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস সেন বলেন, ‘‘আচমকা যদি এ ভাবে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত নোট বদল বা টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে লোকজন সংসার চালাবেন কী ভাবে?’’ তবে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, টাকার জোগান না থাকায় ওই নোটিস দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন