দুই শিবিরের নেতারাই মঞ্চে, বার্তা ঐক্যের

খয়রাশোলে এক নির্বাচনী জনসভায় অনুব্রত বলেন, ‘‘আর যেন খুনোখুনি না হয়। এটা বন্ধ করতে হবে। আমরাই সেটা পারব, অন্য কেউ নয়।’’

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

খয়রাশোল শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৯ ০০:১৯
Share:

উজ্জ্বল ও অনু্বরত। নিজস্ব চিত্র

রাজনৈতিক হিংসা দীর্ণ খয়রাশোলে দাঁড়িয়ে ফের হানাহানি বন্ধের বার্তা দিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। রবিবার বিকালে বীরভূম কেন্দ্রে দলের প্রার্থী শতাব্দী রায়ের সমর্থনে খয়রাশোলে এক নির্বাচনী জনসভায় অনুব্রত বলেন, ‘‘আর যেন খুনোখুনি না হয়। এটা বন্ধ করতে হবে। আমরাই সেটা পারব, অন্য কেউ নয়।’’

Advertisement

শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে তেতে থাকা খয়রাশোল গত কয়েক বছরে তিন-তিন জন ব্লক তৃণমূল সভাপতিকে খুনের সাক্ষী থেকেছে। গত বছর অক্টোবরেই গুলি করে খুন করা হয় ব্লক সভাপতি দীপক ঘোষকে। সেই ঘটনার পিছনেও দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন নিহত নেতার পরিবার ও অনুগামীরা। গত ৩ মার্চ এই খয়রাশোলেরই বুথভিত্তিক কর্মী সম্মেলনে অনুব্রত রক্তপাত বন্ধ করার বার্তা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘সকলে মিলে চুলন। কথা বলে নিজেদের মধ্যে সমস্যা মিটিয়ে নিন। একটা খুনও যেন খয়রাশোলের বুকে আর না হয়।’’

এ দিনও একই বক্তব্য শোনা গেল দলের জেলা সভাপতির মুখে। মঞ্চ থেকে উপস্থিত ভিড়কে উদ্দেশ করে অনুব্রত বলেন, ‘‘খয়রাশোলের মাটি খুব শক্ত। খয়রাশোলের মানুষ খুব সচেতন। আমি খয়রাশোলের মানুষকে বলব, আর যেন খুনোখুনি না হয়। খয়রাশোলে এটা বন্ধ করতে হবে। আমরাই সেটা পারব, অন্য কেউ পারবে না।’’ এখানেই না থেমে সংযোজন, ‘‘আপনারা মনে করলে আমরা মনে করলে, এই জিনিসটা (খুনোখুনি) বন্ধ করতে পারি। কোনও হানাহানির দরকার নেই। এতে সাধারণ মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ, গরিব মানুষ সবাই কষ্ট পায়। আসুন খয়রাশোলকে সুন্দর পরিবেশে নিয়ে যাই।’’

Advertisement

খয়রাশোলের রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল লোকজন বলছেন, এই ব্লক চরিত্রগত ভাবে অন্যান্য ব্লকের থেকে আলাদা। বহুল চর্চিত শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আছেই। নিয়মিত খুন-সংঘর্ষ-বোমাবাজিও লেগেই আছে। শুধু দীপক ঘোষ নন, এর আগেও খয়ারাশোলের আরও দুই প্রাক্তন ব্লক সভাপতি অশোক ঘোষ ও অশোক মুখোপাধ্যায়-সহ বহু নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। দীপক ঘোষ খুনেও দলেরই বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগের তির ছিল। এমনকি ওই খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে চলতি জানুয়ারিতেই গ্রেফতার হন খয়রাশোল ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন কার্যকরী সভাপতি উজ্জ্বল হক কাদেরি। ব্লকের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর দাবি ছিল, খুনের কিনারা করতে পুলিশ গা করছে না। অন্য দিকে বিরোধী গোষ্ঠীর দাবি ছিল, অপরাধ না করে শুধুমাত্র সন্দেহের বশে বিরোধী গোষ্ঠীকে জড়ানো হচ্ছে। এই নিয়ে চরম মনোমালিন্য চলছিল তৃণমূলের দুই শিবিরে।

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তৃণমূল সূত্রের খবর, লোকসভা নির্বাচনের আগে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই দুই গোষ্ঠীর বিবাদে কিছুটা হলেও রাশ টানতে সক্ষম হয়েছেন। আবার যাতে নতুন কোনও বিরোধ তৈরি না হয় নিজেদের মধ্যে, নির্বাচনী জনসভা থেকে জেলা সভাপতি ঘুরিয়ে সেই কথাটাই স্মরণ করিয়ে দিলেন দলের নেতা-কর্মীদের— এমনটাই মনে করছেন অনুব্রতের ঘনিষ্ঠবৃত্তে থাকা নেতারা। ভোট বৈতরণী পার হতে হলে, দু’টি গোষ্ঠীকেই কাজে লাগাতে হবে, তা বিলক্ষণ বুঝেছেন জেলা নেতৃত্ব। সিউড়িতে সপ্তাহ তিনেক আগে অনুব্রতের নির্দেশের পরেই ক’দিন আগে উজ্জ্বল হক কাদেরি জামিন পান। তার পর দু’পক্ষকে বসিয়ে একটা সমঝোতার রাস্তায় নিয়ে আসতে সক্ষম হন নেতৃত্ব।

সেই ‘ঐক্যের’ ছবি এ দিন মঞ্চে দেখানোর চেষ্টাও করেছেন অনুব্রত। সভামঞ্চে খয়রাশোলের যুযুধান তৃণমূলের দুই শিবিরের সব নেতারই উপস্থিতি ছিল। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতা স্বপন সেন, আবদুর রহমান, বিকাশ মণ্ডল যেমন ছিলেন, তেমনই হাজির ছিলেন বিরোধী শিবিরের বলে পরিচিত উজ্জ্বল কাদেরি, শেখ জয়নাল, শেখ মিরাজেরা। তবে সভায় এসে সকলে এসেছেন কিনা, সেটা খোঁজ নিতে ভোলেননি অনুব্রত। সবাই
এসেছে দেখে সন্তুষ্ট হন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন