প্রণবের দিদিকে প্রণাম করে প্রচারে অভিজিৎ

জেলা কংগ্রেস সূত্রেই জানা গিয়েছে, মাসখানেক ধরেই দলের অন্দরে বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে অভিজিৎবাবুর নাম চর্চায় ছিল। সোমবার তাঁর নাম ঘোষণা করেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

কীর্ণাহার শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৯ ০০:০৭
Share:

প্রার্থনা: মন্দিরে অভিজিৎ সাহা। ভদ্রকালীতলায়। ছবি: কল্যাণ আচার্য

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা হোক বা রাষ্ট্রপতির পদে শপথগ্রহণ— ফোনে বা সরাসরি দিদি অন্নপূর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রণাম জানিয়ে আর্শীবাদ নিয়েছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। কীর্ণাহারের পরোটা গ্রামে এমনই শোনা যায়। এ বার অন্নপূর্ণাদেবীকে প্রণাম জানিয়ে লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করলেন প্রণববাবুর অনুগামী হিসেবে পরিচিত কংগ্রেস প্রার্থী অভিজিৎ সাহা।

Advertisement

জেলা কংগ্রেস সূত্রেই জানা গিয়েছে, মাসখানেক ধরেই দলের অন্দরে বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে অভিজিৎবাবুর নাম চর্চায় ছিল। সোমবার তাঁর নাম ঘোষণা করেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সন্ধ্যায় ফোন করে অভিজিৎবাবুকে সেই খবর দেন স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সদস্য রবিউল ইসলাম।

দলীয় সূত্রে খবর, বছর আটচল্লিশের অভিজিৎবাবুর বাড়ি কীর্ণাহারের লক্ষ্মীতলাপাড়ায়। স্ত্রী লক্ষ্মীদেবী আর মেয়ে অংকিতাকে নিয়ে তার ছোট্ট সংসার। স্ত্রী লক্ষ্মীদেবী গৃহবধূ। মেয়ে অঙ্কিতা দশম শ্রেণিতে পড়ে। কীর্ণাহার চৌরাস্তায় প্রসাধনী সামগ্রীর দোকান রয়েছে অভিজিৎবাবুর। পাশাপাশি বাচ্চাদের ইংরেজী মাধ্যমের একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতাও করেন।

Advertisement

এর আগে সে ভাবে কোনও নির্বাচনেই লড়েননি তিনি। লাভপুর কলেজে পড়ার সময় দু’বার ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এক সময় নানুর ব্লক যুব কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি এবং কীর্ণাহার শহর কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্বও সামলেছেন। দাদু শিশির সাহা কংগ্রেস করতেন। সেই সুবাদেই কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন অভিজিৎবাবুও। নিজেকে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণববাবুর অনুগামী হিসেবে দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে পর্যন্ত প্রণববাবু যখনই মিরিটি গ্রামের বাড়িতে এসেছেন তখনই দেখা করে এসেছি। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে প্রোটোকলের কড়াকড়িতে আর যাইনি।’’

তবে সঙ্গলবার স্থানীয় ঈশানেশ্বরীতলা, ভদ্রকালীতলা সহ বিভিন্ন দেবস্থানে পুজো দেওয়ার পাশাপাশি প্রণববাবুর দিদি অন্নপূর্ণাদেবীর পরোটা গ্রামের বাড়িতে যান। তাঁর আশীর্বাদ নিয়ে প্রচার শুরু করেন। অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘শুনেছি প্রণববাবু সব বড় কাজের আগেই তাঁর দিদির আশীর্বাদ নিতেন। আমিও তাই তাঁর আশীর্বাদ নিয়ে প্রচার শুরু করলাম।’’

এ দিন অভিজিৎবাবু তাঁর বাড়িতে আসার পরে অন্নপূর্ণাদেবী বলেন, ‘‘অন্তর থেকে ওকে আশীর্বাদ করেছি। ভগবানের কাছেও ওর শুভকামনা চেয়েছি।’’

বোলপুর লোকসভা কেন্দ্র এক সময় ছিল ‘বামদুর্গ’। নির্বাচনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিভিন্ন সময় ওই কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরেছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, জেলা কংগ্রেস সভাপতি প্রয়াত নীহার দত্ত, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী প্র‍য়াত সুনীতি চট্টরাজ। তবে ১৯৬৭ সালে ওই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী জিতেছিলেন। ১৯৭১ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী ফুলরেণু গুহকে হারিয়ে ফের বোলপুরের দখল নেয় সিপিএম। ২০০৯ সালে তৃণমূল-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী অসিত মালকে ১ লক্ষের কিছু বেশি ব্যবধানে হারান সিপিএমের রামচন্দ্র ডোম। তার আগের নির্বাচনে বামেদের জয়ের ব্যবধান ছিল ৩ লক্ষেরও বেশি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে অবশ্য সেই কেন্দ্রে পরাস্ত হয় সিপিএম। ওই দলের রামচন্দ্র ডোমকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দেন তৃণমূলের অনুপম হাজরা। অনুপম পেয়েছিলেন ৬ লক্ষ ৩০ হাজার ৬৯৩টি ভোট। রামচন্দ্রবাবুর পক্ষে ছিল ৩ লক্ষ ৯৪ হাজার ৫১৮টি ভোট। কংগ্রেস ছিল সবার পিছনে। ‘চর্তুমুখী’ লড়াইয়ে কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছিলেন ৪৬ হাজার ৯৫৩টি ভোট।

বিরোধী শিবিরের অনেকের দাবি, বোলপুরে কংগ্রেসের সংগঠন তলানিতে এসে পৌঁছেছে। সব বুথে এজেন্ট বসানোর মতোও ক্ষমতা নেই। এমন পরিস্থিতিতে লড়তে নেমে কী ভাবছেন? অভিজিৎবাবুর জবাব, ‘‘ভোটারদের কাছে সিপিএম, বিজেপি এবং তৃণমূলের অনুন্নয়ন, অপশাসনের কথা তুলে ধরব। অধিকাংশ বুথে এজেন্টও দিতে পারব।’’

তৃণমূলের নানুর ব্লক সভাপতি তথা জেলা কমিটির সদস্য সুব্রত ভট্টাচার্য অবশ্য ওই দাবি অযৌক্তিক বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন