অচেনা মুখ, ফল নিয়ে চিন্তা কংগ্রেসেই

দলের অন্দরমহলের খবর, ওই দুই ‘নতুন মুখ’ নিয়ে কংগ্রেসের নিচুতলার কর্মীদের অনেকের মধ্যেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে।

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৯ ০০:০৫
Share:

ভক্ত: নলাটেশ্বরী মন্দিরে কংগ্রেস প্রার্থী ইমাম হোসেন। নিজস্ব চিত্র।

নতুন দুই মুখে কি বাজিমাৎ করা যাবে নির্বাচনে— এখন সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছে জেলা কংগ্রেসের নিচুতলার নেতা-কর্মীদের অনেকেই।

Advertisement

সোমবার রাতেই বীরভূম ও বোলপুর কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে কংগ্রেস। বীরভূম কেন্দ্রে ভোট-ময়দানে নেমেছেন ইমাম হোসেন। বোলপুরের ভোটযুদ্ধে অভিজিৎ সাহা।

কিন্তু দলের অন্দরমহলের খবর, ওই দুই ‘নতুন মুখ’ নিয়ে কংগ্রেসের নিচুতলার কর্মীদের অনেকের মধ্যেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে। কেউ কেউ ঘনিষ্ঠ মহলে এমনও বলেছেন, ‘‘ওই দুই কার্যত অপরিচিত প্রার্থী প্রকৃত কংগ্রেস কর্মীদের সবার ভোট পাবেন কিনা তা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে। কিছু ভোট বিরোধীদের ভোটবাক্সেও পড়তে পারে।’’ তাঁদের অনেকেই মনে করছেন, এতে সুবিধা পেতে পারে তৃণমূলেই। তবে সকলেরই বক্তব্য, দলের জন্য লড়াই করতে চান তাঁরা সবাই।

Advertisement

জেলা কংগ্রেসের কয়েক জন কর্মী জানান, বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী ইমাম হোসেন নলহাটি পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড গোপালপুরের বাসিন্দা। ২০১২ সালে পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রতীকে জয়ী হন। ওই দলেরই নলহাটি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৭ সালে পুরসভা নির্বাচনে তিনি ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়। সম্প্রতি কংগ্রেসে যোগদান করেন। কংগ্রেসের ওই কর্মীদের বক্তব্য, ‘‘যাঁর পরিচিতি শুধুমাত্র নলহাটি পুরসভার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, সেই ইমাম হোসেনকেই কংগ্রেস নেতৃত্ব বীরভূম কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছেন।’’

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ইমাম অবশ্য বলেছেন, ‘‘নেতৃত্বের নির্দেশে লড়তে নেমেছি। শুরু করেছি প্রচার। দলের সব কর্মীই আমার পাশে রয়েছেন।’’

বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত হাঁসন, মুরারই এবং নলহাটি বিধানসভা এলাকা। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সে সব জায়গায় এখনও কংগ্রেসের কিছুটা হলেও সংগঠন রয়েছে। হাঁসন বিধানসভা কেন্দ্রে রয়েছেন জেলার একমাত্র কংগ্রেস বিধায়ক মিল্টন রশিদ। কংগ্রেস কর্মীদের অনেকেই জানিয়েছেন, মিল্টনকেই বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হতে পারে বলে জল্পনা ছড়িয়েছিল। কিন্তু তিনি লোকসভা ভোটে প্রার্থী হতে না চাওয়ায় নতুন প্রার্থী দিতে হয়।

মিল্টন জানিয়েছেন, পারিবারিক কারণে তিনি প্রার্থী হতে চাননি। কিন্তু কংগ্রেসের নিচুতলার কর্মীদের অনেকেরই বক্তব্য, কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের মধ্যে জোট না হওয়ার জন্যেই মিল্টন প্রার্থী হননি।

তবে মিল্টন জানিয়েছেন, তিনি কংগ্রেসের একনিষ্ঠ কর্মী। প্রদেশ নেতৃত্বের নির্দেশমতো জেলার দুই কংগ্রেস প্রার্থীর জন্যই প্রচার করবেন।

দলের কর্মীদের একাংশ বলছেন, জেলায় কংগ্রেসের সংগঠন এখন খুব একটা মজবুত অবস্থায় নেই। বীরভূম জেলা কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের নেতা এবং টানা ৮ বছর ধরে জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি সম্প্রতি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। জেলার ১১টি বিধানসভার মধ্যে শুধু হাঁসনে কংগ্রেসের বিধায়ক। পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলার ১৬৭ পঞ্চায়েতের মধ্যে মহম্মদবাজার ব্লকের ভাড়কাটা পঞ্চায়েতে একটি মাত্র আসনে কংগ্রেস প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন। সেই কংগ্রেস সদস্যও পরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। রামপুরহাট পুরসভার ২ জন কংগ্রেস পুরপ্রতিনিধি গিয়েছেন তৃণমূলে। সিউড়ির ৩ জন কংগ্রেস পুরপ্রতিনিধির মধ্যে ২ জনও দল বদলেছেন। এক জন প্রয়াত হয়েছেন। বোলপুরে ৩ জন কংগ্রেস কাউন্সিলরের মধ্যে দু’জন গিয়েছেন শাসক দলে। দুবরাজপুরে ৪ জন কংগ্রেস জনপ্রতিনিধিও তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। জেলায় এক সময় কংগ্রেসের ঘাঁটি বলে পরিচিত সাঁইথিয়া পুরসভায় এক জনও কংগ্রেস প্রতিনিধি নেই। নলহাটিতেও নেই এক জনও কংগ্রেস জনপ্রতিনিধি।

কিন্তু জেলায় কংগ্রেসের এমনই ‘শক্তি’ নিয়েই দলের প্রার্থীর সমর্থনে কর্মীরা প্রাণপণ লড়াই করতে প্রস্তুত বলে দাবি করেছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি সঞ্জয় অধিকারী। তাঁর আরও আশা, আগের ভোটের তুলনায় জেলায় এ বার ভাল ফল করবে কংগ্রেস।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement