বলরামপুর বাজারের দোকানে সাবেক জেলা সভাধিপতি। নিজস্ব চিত্র
অন্য দল থেকে ডাক এসেছিল। সাড়া দেননি। এমনটাই দাবি করছেন সৃষ্টিধর মাহাতো।
এ বারে লোকসভা ভোটের মরসুমে পুরুলিয়ার বলরামপুর যেন একটু আলাদা। জেলা পরিষদে তৃণমূলের সাবেক সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো ভোটে হেরেছেন নিজের এলাকাতেই। ভোটের পরেই বলরামপুর ব্লক সভাপতির পদ খুইয়েছেন ছোট ছেলে সুদীপ। বিজেপি কর্মী ত্রিলোচন মাহাতোকে খুনের মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন বড় ছেলে সন্দীপ। গত নভেম্বরের শেষে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলরামপুরের কলেজ মাঠে সভা করতে এসেছিলেন। বলে গিয়েছেন, ‘‘সৃষ্টির কাজকর্ম আমরাও পছন্দ করতাম না। শুধু ওর উপরে রাগ আছে বলে আমি কি বিজেপিকে ভোট দিয়ে দেব?’’
বলরামপুর বাজারের একটি দোকানে বসেছিলেন সৃষ্টিধর। গনগনে রোদ আর ভোটের আঁচ যেন পাল্লা দিচ্ছে। শাসক এবং বিরোধী শিবিরে ব্যস্ততা চরমে। দোকানে বসে খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন সৃষ্টিধর— বড়উরমা, তেঁতলো, দঁড়দা, কোন এলাকায় দলের কী অবস্থা।
এক সময়ে এই জনপদের রাস্তাঘাট হাতের তেলোর মত চিনতেন যিনি, হাতে গোনা কয়েক জন সঙ্গী এখন তাঁকে ওই সমস্ত এলাকার খবর দেন। সৃষ্টিধরের বক্তব্য, ‘‘রাজনীতিতে হার-জিত তো আছেই। শুধু কি আমি একা হেরেছি? অনেকেই তো হেরেছেন। বলতে পারেন, অনেক শিখলাম।’’
তাঁর বিরুদ্ধে দলের অন্দরে বাহিরে নানা অভিযোগ। স্বজনপোষণ। তোলাবাজি। কোনওটিই মানেন না প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি। বলেন, ‘‘একটা সময়ে ধান বিক্রি করে পঞ্চায়েতে কর্মীদের মনোনয়ন জমা দিয়েছি। আসলে সময় এখন আমার সঙ্গে নেই।’’ জানাচ্ছেন, রাজ্যের সমস্ত আসনে তৃণমূলের জয় চান তিনি। আর তার জন্য বলরামপুরে এখনও কাজ করে চলেছেন।
সৃষ্টিধর দাবি করছেন, অন্য দলের থেকে লোকসভা ভোটের আগে ডাক এলেও প্রত্যাখ্যান করেছেন। বলছেন, ‘‘সেই আটানব্বই সাল থেকে দিদির মতাদর্শ মেনে এই দলে রয়েছি। কোথায় আর যাব বলুন তো?’’ পাশ থেকে ছোট ছেলে সুদীপ বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর বিসর্জন চলছে। বলরামপুর বাজারে দু’জনকে মারল মাওবাদীরা। ঘাটবেড়া-কেরোয়া অঞ্চলের সভাপতিকেও মারল। পালাবদলের পরেও রক্ত ঝরেছে এখানে। রাজনৈতিক ভাবে পুরোটার মোকাবিলায় তো উনিই নেতৃত্ব দিয়েছেন।’’
সেই সৃষ্টিধর এখন জানাচ্ছেন, দল ভোটের কাজে ডাকলেই যাবেন তিনি। আর দলের এক শীর্ষনেতা বলছেন, ‘‘শুনেছি উনি কাজ করছেন। এলাকায় দলকে লিড দিতে হবে। সেটা কিন্তু ওঁর নিজের জন্যই।’’