পারব তো ভোট দিতে, ঘুরছে প্রশ্ন

রবিবার জেলায় এসে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করানোর আশ্বাস দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৯ ০২:২২
Share:

বুথে থাকবে বাহিনী, আর বাইরে থাকবে পুলিশ। িসউড়িতে। নিজস্ব চিত্র

কে হারবে, কে জিতবে তার চেয়েও বড় কথা, নিজের ভোট দেওয়া যাবে তো! আজ সোমবার বীরভূম ও বোলপুর কেন্দ্রে নির্বাচনের আগে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে জেলার সাধারণ মানুষের মনে।

Advertisement

রবিবার জেলায় এসে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করানোর আশ্বাস দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে। জেলা প্রশাসনও জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণ ভোটের লক্ষ্যে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু, বীরভূমের গ্রামাঞ্চলের এক বড় অংশের মানুষ বলছেন, না আঁচালে বিশ্বাস নেই। এমনিতেই আগের বারের থেকে এ বার লোকসভা নির্বাচন চরিত্রের দিক থেকে আলাদা। অন্তত বীরভূমে তো বটেই। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৮৪ শতাংশ আসনে ভোটই হয়নি। কারণ যাই-ই হোক, সে বার যাঁরা ভোট দিতে পারেননি, তাঁদের বিরাট অংশই এ বার নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের জন্য মুখিয়ে আছেন। মানুষ সেই ভোট দিতে পারবেন কিনা, তা নিশ্চিত করাই আজ বড় পরীক্ষা জেলা পুলিশ-প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের।

পরীক্ষা রাজনৈতিক দলগুলিরও। নির্বাচন নির্ঘণ্টা ঘোষণার পর থেকে প্রচারে ঝড় তুলেছিল তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম। কংগ্রেস তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তৃণমূলের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বামেদের হয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের মতো নেতারা এখানে সভা করেছেন। একে অন্যের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। তাতে জেলার ভোটের তাপ অনেকটাই বেড়েছে।

Advertisement

বীরভূম কেন্দ্রে লড়াইটা চতুর্মুখী। সিপিএম, কংগ্রেস তৃণমূল ও বিজেপি। তবে রাজনীতির কারবারিদের মতে, শাসকদলের সঙ্গে এই কেন্দ্রে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে বিজেপি-রই। এখানে দু’বারের সাংসদ শতাব্দী রায়কে প্রচারে জোর টক্কর দিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী দুধকুমার মণ্ডল। পিছিয়ে ছিলেন না সিপিএমের রেজাউল করিমও। শেষ পর্যন্ত কপালে শিকে ছেঁড়ে তা এই কেন্দ্রের প্রায় ১৭ লক্ষ ভোটারের উপরেই নির্ভর করছে। বোলপুর কেন্দ্রের লড়াইটাও চতুর্মুখী। তবে কান পাতলে আওয়াজ, তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই বিজেপি-র সঙ্গে সিপিএম-ও আছে। জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নিদান মেনে বোলপুরে দলীয় প্রার্থী অসিত মালের প্রচারে দেদার নকুলদানা বিলি হয়েছে। তবে, এখানে বাম প্রার্থী, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোম মাটি আঁকড়ে থেকে প্রচার সেরেছেন। খোদ প্রধানমন্ত্রী সভা করায় বুকে বল পেয়েছেন বোলপুরের বিজেপি প্রার্থী রামপ্রসাদ দাসও।

২০১৪ সালের লোকসভা এবং ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরিসংখ্যান মাথায় রাখলে অবশ্য জেলার দু’টি কেন্দ্রেই শাসকদল বিরোধীদের চেয়ে অনেক যোজন এগিয়ে। দুই কেন্দ্রের মোট ১৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে তৃণমূলের দখলে ১২টি। তার উপরে রয়েছে তৃণমূলের মজবুত সংগঠন, যার মাথায় রয়েছেন খোদ অনুব্রত। ভোট করানোয় সিদ্ধহস্ত এই নেতা সোমবার ভোটে কী কৌশল নিয়েছেন, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে বীরভূমের পাশাপাশি গোটা রাজ্যেই।

বীরভূমের নির্বাচনী ইতিহাস মাথায় রেখে ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করানোর নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

কেমন সেই ব্যবস্থা?

জেলা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, জেলার ৯৮.৮ শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা থাকবেন। মাত্র ১ শতাংশ বুথে থাকবে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ। যেহেতু জেলার একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে রয়েছে পড়শি ঝাড়খণ্ড রাজ্যের মাওবাদী প্রভাবিত তিনটি জেলা। সেখানেও নজরদারি চূড়ান্ত করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার আভারু রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছেন, আন্তঃরাজ্যের ১৬টি এবং আন্তঃজেলার ২৬টি এলাকায় নাকা চেকিং থাকছে। এলাকার বুথগুলিতে ভোটকর্মীদের নিয়ে যাওয়া ও আসার সময় বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা রেখেছে প্রশাসন। জেলার ২৪টি থানায় জেলা পুলিশের সঙ্গে থাকবে কেন্দ্রীয় ‘কুইক রেসপন্স টিম’। সেক্টর অফিসগুলিতেও আধা সেনা থাকছে। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু জানান, পুলিশ মোতায়েন থাকার পাশাপাশি প্রতিটি বুথে নজরদারি চালাতে হয় মাইক্রো অবজার্ভার থাকবেন না হয় সিসি ক্যামেরা কিংবা লাইভ ওয়েবকাস্টিং। ভিডিওগ্রাফিও হবে। কোথাও কোনও ভোটার ভোটকেন্দ্রে আসতে সমস্যায় পড়েছেন বা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন, খবর পেলেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

এ বারই জেলায় প্রতিটি বুথে ইভিএমের সঙ্গে ব্যবহৃত হচ্ছে ভিভি প্যাট। রবিরার সিউড়ি ও বোলপুর ডিসিআরসি থেকে ভোট পরিচালনার যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে জেলার ৩০২১টি নিয়ে বুথে পৌঁছে গিয়েছেন প্রায় ১৫ হাজার ভোটকর্মী। পৌঁছে গিয়েছেন বাহিনীর জওয়ানেরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন