তোড়জোড়: বিষ্ণুপুর সরকারি পলিটেকনিক কলেজ চত্বরে শনিবার। ছবি: শুভ্র মিত্র
তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে ষষ্ঠ দফার ভোটে আজ, রবিবার লাইনে দাঁড়াতে যাচ্ছেন পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর লোকসভার ভোটারেরা। তিন কেন্দ্রের ৪৯ লক্ষের বেশি ভোটার আগামী পাঁচ বছরের জন্য তাঁরা কাকে সাংসদ করে দিল্লিতে পাঠাতে চান, তা নির্ধারণ করবেন।
এ বারের লোকসভা নির্বাচন এই রাজ্যের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। গত লোকসভা ভোট থেকে বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের একচ্ছত্র প্রভাব দেখা গেলেও এক বছর আগের পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির কিছুটা প্রভাব বাড়ে। লোকসভা ভোটে বিজেপির এই সমর্থন থাকবে কি না, বামেদের রক্তক্ষরণ চলবে না কি ভোট বাড়ানোর কোনও সম্ভাবনা রয়েছে, কংগ্রেসেরই বা শক্তি কতটা রইল— নজর থাকবে সে দিকেই।
দিল্লি থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ এখানে সভা করে গিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে তৃণমূলের দলীয় পর্যবেক্ষক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও দুই জেলায় বহু সভা করেছেন। জনতার মন তাই জানতে সবাই উৎসুক।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তিন কেন্দ্রের মধ্যে হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছে বাঁকুড়া কেন্দ্রে। তৃণমূলের প্রার্থী রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় লড়ছেন সিপিএমের প্রার্থী তথা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র এবং বিজেপির প্রার্থী তথা দলের রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকারের সঙ্গে।
এই কেন্দ্রের প্রার্থীরা এ বার তুলনায় জঙ্গলমহলে প্রচারে বেশি ঘাম ঝরিয়েছেন। তাঁরা সময় দিয়েছেন এই লোকসভার অধীন পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুর বিধানসভা কেন্দ্রেও। জেলা রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের মতে, ওই এলাকাগুলিতে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে শাসকদলের চিন্তার কিছু না থাকলেও পঞ্চায়েতে সেখানে প্রভাব দেখিয়েছে বিজেপি। তাই ওই সব এলাকার ভোটারদের উপর ফলের অনেকখানি নির্ভর করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সজাগ: পুরুলিয়ার পাঁড়রামা প্রাথমিক স্কুলে। ছবি: সুজিত মাহাতো
তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁয়ের দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে জঙ্গলমহলে যা উন্নয়ন হয়েছে মানুষ তাতে খুশি। জঙ্গলমহলের তিনটি বিধানসভাতেই জয় নিয়ে আমরা নিশ্চিত।” অন্য দিকে, বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র দাবি করছেন, “বাধা পেয়েও মানুষ পঞ্চায়েত ভোটে জঙ্গলমহলে আমাদের প্রার্থীদের সমর্থন জানিয়েছিলেন। এ বার আধাসেনার উপস্থিতিতে ভোট হচ্ছে। তাই আমাদের জয় নিশ্চিত।’’ তাঁর আরও দাবি, তৃণমূল-বিরোধী সিপিএমের ভোটও তাদের দিকেই যাবে।
যদিও প্রচারে তাঁরা জঙ্গলমহলে গিয়ে ভালই সাড়া পেয়েছেন বলে দাবি করছেন সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি। তাঁর দাবি, ‘‘জঙ্গলমহলে বরাবর বামেদের সংগঠন রয়েছে। অমিয়বাবু প্রার্থী হওয়ায় কর্মী-সমর্থকেরা নতুন করে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।’’
বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ আইনি জটিলতায় জেলায় প্রচার করতে পারেননি। আদালতের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ। তারপরেও ভোটের দিন সৌমিত্র জেলায় ঢুকবেন কি না সে নিশ্চয়তা মেলেনি শনিবার পর্যন্ত। শনিবার সৌমিত্র বলেন, “ভোটের দিন জেলায় ঢোকার ইচ্ছা রয়েছে আমার। তবে যেতে পারব কি না এখনই নিশ্চিত ভাবে কিছু বলতে পারছি না।” বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি স্বপন ঘোষ দাবি করেছেন, “সৌমিত্র আসুন না আসুন, মানুষ বিজেপিকে ভোট দেবেন, এটা নিশ্চিত।’’
গত বিধানসভা নির্বাচনে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের আওতায় থাকা বিষ্ণুপুর ও সোনামুখী বিধানসভায় পরাজয় ঘটেছিল তৃণমূলের। লোকসভা ভোটেও এই দু’টি কেন্দ্রে নজর রয়েছে সব দলেরই। তৃণমূলের জেলা সভাপতির দাবি, “এ বার বিষ্ণুপুরের প্রতিটি বিধানসভা থেকেই আমরা প্রচুর ‘লিড’ পাব।’’
পঞ্চায়েত নির্বাচনে পুরুলিয়ায় বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসকে সরিয়ে বিরোধী পরিসরের প্রায় অনেকটাই দখল করতে সমর্থ হয়েছে গেরুয়া শিবির। তবে পঞ্চায়েতের সঙ্গে লোকসভার তুলনা টানতে নারাজ শাসকদলের জেলা নেতৃত্ব। তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর দাবি, ‘‘পঞ্চায়েতের পরে আমরা সংগঠনের ফাঁকফোকর মেরামত করেছি। বিজেপি বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত সমিতিতে জিতলেও শেষ পর্যন্ত তাদের জেতা সদস্যরা আমাদের দিকে চলে আসায় সেই সমিতিগুলিতে আমরাই বোর্ড গড়েছি।” রাজ্য সরকারের উন্নয়নকে ভিত্তি করেই পুরুলিয়া ফের তাদের দখলে থাকবে বলে দাবি শান্তিরামবাবুর।
অন্যদিকে বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী অভিযোগ করেন, ‘‘পঞ্চায়েতে তৃণমূল পুরুলিয়াতে মানুষকে ভোটই দিতে দেয়নি। লোকসভাতে অবাধ ভোট হলে দুই লক্ষাধিক ভোটে জিতবেন আমাদের প্রার্থী।”
অন্য দিকে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের দাবি, পঞ্চায়েতে হারানো জমি পুনরুদ্ধার হয়েছে। তৃণমূলের সঙ্গে লড়াইটা বিজেপির নয়, তাদেরই হবে।