কৃষ্ণগঞ্জে লালজীউ মন্দিরের রাজভোগ পেতে সকাল থেকেই লাইন

অপেক্ষাতেও আনন্দ ভক্তদের

শুধু বাড়ির জন্য নয়, লালজীউ মন্দিরের রাজভোগ আত্মীয়দের বাড়ি বাড়িও পাঠান অনেকে। বিশ্বরূপা মণ্ডল নামে এক বধূ বলেন, ‘‘আমরা বিষ্ণুপুরের মেয়েরা রথের সময় বাপের বাড়ি আসি এই রাজভোগের টানেই। শ্বশুরবাড়ির জন্যও নিয়ে যাই।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৭ ০০:১৯
Share:

সারি-সারি: মন্দিরে নিবেদন করা রাজভোগ। ছবি: শুভ্র মিত্র।

সকাল থেকে মন্দিরের সামনে ভক্তদের লাইন। অপেক্ষার প্রহর যত গড়াতে থাকে, বাড়তে থাকে ২৪ জন রাঁধুনির ব্যস্ততা। রাজভোগ রান্না করা কি আর চাট্টিখানি কথা!

Advertisement

রথ থেক উল্টোরথ— সাত দিন কৃষ্ণগঞ্জের লাল়জীউ মন্দিরে রাজভোগ পান পূণ্যার্থীরা। বৃহস্পতিবারই সেখানে প্রায় ২৬০০ জন ভোগ পেয়েছেন বলে জানান কৃষ্ণগঞ্জ আটপাড়া ষোলোআনা কমিটির কোষাধক্ষ্য হেমন্ত নাগ। তিনি বলেন, ‘‘২৪ জন রাঁধুনি ভোর ৪টে থেকে ভোগ রান্না শুরু করেছেন। ঠাকুরকে নিবেদন করে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোগ বিতরণ করা হবে।’’

এই ক’দিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পরের দিনের ভোগের কুপন দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবারের ভোগে ছিল পোলাও, আলু ভাজা, মুগ ডাল, চানা মশলা, আলুর দম, পায়েস, চাটনি। কোথাও কোনও ফাঁক যাতে না থাকে, সে দিকে সব সময় নজর থাকে কমিটির। কৃষ্ণগঞ্জ আটপাড়া ষোলোআনা কমিটির সভাপতি রবিলোচন দে বলেন, ‘‘আগের দিন চাল বেছে রাখা হয়। খুব সাবধানে বাছতে হয়। একটাও কাঁকর থাকা চলবে না। বাদশাভোগ চাল নিয়ে আসা হয়। আনাজও আনা হয় বেছে বেছে সেরাটাই।’’ তিনি জানান, কমিটির লোকজন সাত দিন দিন-রাত এক করে ভোগ রান্নার প্রস্তুতিতে মেতে থাকেন। কমিটির প্রবীণ সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী পতিতপাবন দত্ত জানান, জ্বালানি গ্যাস নয়, এখনও সমস্ত রান্নাটাই হয় কাঠের আঁচে।

Advertisement

গড়বেতা, কামারপুকুর, জয়রামবাটি থেকেও ভক্তরা আসেন লালজীউ মন্দিরের ভোগ পেতে। ‘‘এই অপেক্ষার মধ্যেও আনান্দ আছে’’, এ দিন লাইনে দাঁড়িয়ে বলছিলেন রসিকগঞ্জের নারায়ণ রায়। বিষ্ণুপুরের প্রবীণ বাসিন্দা হারাধন চন্দ্র বলেন, ‘‘আজ থেকে কুড়ি বছর আগেও যে স্বাদ পেয়েছি এখনও ঠিক তাই।’’ শুধু বাড়ির জন্য নয়, লালজীউ মন্দিরের রাজভোগ আত্মীয়দের বাড়ি বাড়িও পাঠান অনেকে। বিশ্বরূপা মণ্ডল নামে এক বধূ বলেন, ‘‘আমরা বিষ্ণুপুরের মেয়েরা রথের সময় বাপের বাড়ি আসি এই রাজভোগের টানেই। শ্বশুরবাড়ির জন্যও নিয়ে যাই।’’

এই ভক্তি আর ঐতিহ্যের মিশেলই কমিটির লোকজনের সমস্ত পরিশ্রমের ইন্ধন। তাঁরা জানান, অল্প খরচেই রাজভোগ বিতরণ করা হয়। ভক্তদের দানে খরচের ব্যাপারটা তুচ্ছ হয়ে ওঠে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement