শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরির বনেরপুকুর ডাঙায় জোরকদমে চলছে পুজোর প্রস্তুতি। —নিজস্ব চিত্র
থিম শুনলে মনে হতেই পারে ঢুকে পড়েছেন কোনও রাজনৈতিক সভা-সমিতির মঞ্চে। কিন্তু না, বোলপুরের কাছারীপট্টি যুব সম্প্রদায়ের এ বারের দুর্গোৎসবের থিমই হল মা, মাটি, মানুষ। উদ্যোক্তাদের দাবি, কোনও রাজনৈতিক শ্লোগান নয়। মাটির মানুষের মিলনের ক্ষেত্র হবে এই মণ্ডপ। তাই চলতি বছর দুর্গোৎসবের থিম নির্বাচন হয়েছে মা, মাটি, মানুষ। মণ্ডপের থিম নিয়ে বলছিলেন উদ্যোক্তাদের অন্যতম সঞ্জয় ঘোষ।
তাঁর দাবি, ‘‘এ বার তাঁদের পুজোর বাজেট সাড়ে সাত লক্ষ টাকা। চলতি বছর, ৫২তে পা দিয়েছে পুজো। এ বার সাবেকী মাটির প্রতিমা আর মাটির ভাঁড়ে তৈরি মণ্ডপ।’’ অন্যদিকে বোলপুরের অন্যতম ত্রিশুলাপট্টি দুর্গামাতা ক্লাবের এ বারের থিম হচ্ছে বুদ্ধদেব। উদ্যোক্তাদের অন্যতম রাজকুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সাড়ে ছ’ লক্ষ টাকা বাজেট ধার্য হয়েছে। ৬৪ বছরে পড়ল পুজো। বিশ্বজুড়ে চলা নানা অশান্তিতে, বুদ্ধদেবের বাণী খুবই প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। সাবেকী প্রতিমার মণ্ডপ জুড়ে তাই স্থান পেয়েছে বুদ্ধদেবের শান্তির বাণী।’’ আলোক সজ্জা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কার্যত দর্শকদের এই মণ্ডপ নজর কাড়বে বলে দাবি আয়োজকদের। বোলপুরের কালিকাপুরে তিনশো বছর আগে পারিবারিক পূজা ছিল। সেই পুজো দেড় শতকের বেশি বছর ধরে আদ্যশক্তি সংঘের সর্বজনীন দুর্গোৎসব হিসেবে খ্যাত হয়েছে।
আদ্যশক্তি সংঘের কালিকাপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসবে সাবেকী প্রতিমা আজও পূজা হয়। উদ্যোক্তাদের অন্যতম শিবনাথ রায় বলেন, ‘‘এ বার পুজোর বাজেট সাড়ে সাত লক্ষ টাকা। বাঁশ ও বেতের ঝুড়ি দিয়ে তৈরি মণ্ডপে থাকছে মাটির দুর্গা প্রতিমার সঙ্গে প্লাস্টার অফ প্যারিসের বিভিন্ন দেবদেবী। আবার মণ্ডপ জুড়ে রয়েছে বিশেষ আলোর রোশনাই।’’ পুরাণে বর্ণিত দেবী দুর্গা সম্পর্কিত বিভিন্ন কাহিনি, হাতে আঁকা ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে গোটা মণ্ডপ। মণ্ডপের কারুকার্য ও বিশেষ আলো দর্শকদের আকর্ষিত করবে বলেই আয়োজকদের দাবি। দেশ বিদেশের নানা পুরা কীর্তি ছুঁয়ে দেখার সুযোগ থাকে না সকলের। তাই ফি বছরের মত, চলতি বছরও বিদেশের পুরা কীর্তি নিয়ে হাজির হয়েছে বোলপুরের জামবুনি সর্বজনীন দুর্গাপুজো সমিতি।
উদ্যোক্তাদের অন্যতম তাপস মণ্ডল জানান, এ বার পুজোর বাজেট সাড়ে আট লক্ষ টাকা। ৩৩ বছরে পা দেওয়া পুজোতে, এ বার থাকছে জর্ডনের পেট্রা শহরের আল-খাজনে নামে মন্দিরের আদলে তৈরি মণ্ডপ সজ্জা। অন্যান্য বারের মতো, এ বারও মণ্ডপের ঐতিহাসিক নিদর্শনের স্থাপত্য এবং ভাস্কর্যের শিল্পকর্ম দর্শকদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হবে বলে দাবি আয়োজকদের। সর্বজনীন দুর্গোৎসবের পাশাপাশি পারিবারিক পুজোগুলিও সমান ভাবে এগিয়ে বোলপুরে।
এলাকায় বহু পারিবারিক পুজো হলেও, সুরুল সরকার বাড়ি এবং কাছারীপট্টি রায় বাড়ির পুজো অন্যতম। শতাব্দী প্রাচীন দুই বাড়ির পুজোর জৌলুস আজও সমান ভাবে অমলিন। ঐতিহ্য আর আভিজাত্য নিয়ে চলার জন্য এলাকায় বিশেষ ভাবে বিখ্যাত এই প্রাচীন পুজো।