বগটুই নিয়ে পুলিশের ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভ
Bogtui

Bogtui: একটা দেশলাইয়েই আগুন ধরতে পারে, বললেন মমতা

বীরভূম ও বগটুই প্রসঙ্গ আসতেই সুর চড়ান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানতে চান, জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২২ ০৭:২৮
Share:

বগটুই গ্রামের পোড়া বাড়ি। ফাইল চিত্র।

বগটুই-কাণ্ডে প্রথম থেকেই স্থানীয় ও জেলা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বুধবার বিকেলে ভার্চুয়াল প্রশাসনিক বৈঠকেও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, পুলিশের জন্য সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এবং এতে তিনি ক্ষুব্ধ। এ দিন কার্যত মুখ্যমন্ত্রীর ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় বীরভূমের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠীকে। বিরোধীদের একাংশ বলছেন, পুলিশি ব্যর্থতার নজির তো এই জেলায় কম নেই। স্রেফ একটা বৈঠক করে কাউকে বকেঝকে রাতারাতি পুলিশের মানসিকতা বদলানো সম্ভব নয়।

Advertisement

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সামনে ফের ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির হবে। এ ছাড়া প্রশাসনিক কাজকর্ম ও জেলাগুলির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন চলছে, এ দিন প্রতিটি জেলা ধরে মুখ্যমন্ত্রী সেখানকার প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন। মমতার সঙ্গী ছিলেন মুখ্যসচিব-সহ রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা। সাম্প্রতিক কালে যে যে জেলায় আইনশৃঙ্খলাজনিত বা প্রশাসনিক গাফিলতির সমস্যা রয়েছে, সেটা নিয়ে প্রতিটি জেলার জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

বীরভূম ও বগটুই প্রসঙ্গ আসতেই সুর চড়ান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানতে চান, জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা। পুলিশ সুপার তাঁকে জানান, একমাত্র রামপুরহাটে যে ঘটনা ঘটেছে, সেটা ছাড়া গোটা জেলা শান্ত। এসপি-র মুখের কথা কেড়ে নিয়ে মমতা বলেন, ‘‘সেটাও ঘটত না, যদি সেদিন তোমার ডিএসপি ওখানে ছুটে যেত! এটা তোমাদের নেগজিলেন্স!’’ এসপি কিছু বলতে চাইছিলেন। তাঁকে থামিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যে কোনও ঘটনায় প্রতিক্রিয়া হতে পারে। একটা দেশলাই জ্বাললেই তো আগুন লাগতে পারে। তোমাদের এইটুকু বুদ্ধি নেই?’’ পুলিশ সুপার স্বীকার করেন, তাঁদের তরফে ভুল হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘অনেক ভুল হয়েছে। তার জন্য সরকারের ফেস লস হয়েছে।’’ পুলিশের জন্য সরকারের কেন মুখ পুড়বে, প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

একটা রাজনৈতিক দল যখন পুলিশকে চালায়, তখন এমন ঘটনাই ঘটবে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। সিপিএমের জেলা সম্পাদক বলেন গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘এ দিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন, পুলিশ কন্ট্রোল করেনি বলেই এমনটা (বগটুইয়ে হামলা) ঘটেছে। এই পুলিশ থাকলে এমনই হবে!’’ বিজেপি-র বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, ‘‘এই বৈঠক পুরোপুরি আইওয়াশ। এসপি-র উপরে যদি এতই ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী, তা হলে মঙ্গলবার একাধিক জেলার এসপি বদল হলেও বীরভূমে কেন হল না?’’ তাঁর দাবি, এসপি বদল না-হওয়ার পিছনে ‘অন্য সমীকরণ’ কাজ করছে।

তবে বগটুইয়ের স্বজনহারাদের চাকরি দেওয়া নিয়ে ঘুষের যে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা, তা এ দিন নস্যাৎ করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘সরকার মানবিক ভূমিকা পালন করেছে। অতীতেও সরকার মানবিক ভূমিকা পালন করেছে। ঘটনাকে সমর্থন করেনি। সিবআই তদন্তেও সাহায্য করেছে সরকার।’’
এ প্রসঙ্গে ধ্রুব সাহার কটাক্ষ, ‘‘সরকার যদি এতই মানবিক হয়, তা হলে ভোট-পরবর্তী হিংসায় এত জন বিজেপি কর্মীর মৃত্যুর পরেও তাঁদের পরিবারের কেউ চাকরি পেল না কেন?’’

তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে যাঁকে বলার কথা মনে হয়েছে, তা মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন। এটা নিয়ে বিরোধীদের কিছু বলার কোনও অধিকার নেই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই মানবিক।’’

বীরভূমের অন্যান্য বিষয় খোঁজ নিতে এ দিন ভোলেননি মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানতে চান বিশ্বভারতীর পাঠভবনের হস্টেলে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনার তদন্তভার সিআইডি হাতে নিয়েছে কি না। সিআইডি জেলায় এসেছিল শোনার পরে মুখ্যমন্ত্রী ডিজি-কে নির্দেশ দেন বিষয়টি দেখে নিতে। তিনি জানান, বিশ্বভারতীর একাধিক অধ্যাপক তাঁকে ফোন করেছিলেন।

ডেউচা-পাঁচামি নিয়েও খোঁজ নেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলাশাসক বিধান রায় তাঁকে জানান, পরিস্থিতি ঠিক আছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, এখানে ডেউচা পাঁচামি নিয়ে আলোচনা করবেন না। মুখ্যসচিব বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে নেবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন