পলাশের ফাগ তৈরি কন্যাশ্রীদের হাতে

স্বনির্ভর দলের মহিলা সদস্যদের দিয়ে গত বছর দোলের আগে পরীক্ষামূলক ভাবে ফুলের নির্যাস থেকে ভেষজ আবির তৈরি করেছিল প্রশাসন। এ বার স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কন্যাশ্রীদের ছোঁয়ায় অন্য মাত্রা পেয়েছে সেই আবির।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:১৪
Share:

হাতে-হাতে: ভেষজ আবির তৈরিতে ব্যস্ত বলরামপুর ব্লকের কন্যাশ্রীরা। নিজস্ব চিত্র

যে দিকে চোখ যায়, যেন আগুন লেগেছে। লাল পলাশে ছেয়ে গিয়েছে পুরুলিয়ার প্রান্তর। পলাশের সেই লাল এ বার মাখিয়ে দেওয়া যাবে প্রিয়জনের গালেও। শুধু পলাশই নয়, গাঁদা, অপরাজিতা, নিম থেকেও নানা রঙকে বের করে এনে আবির তৈরি করে বাজারে নিয়ে এসেছে কন্যাশ্রীরা। সৌজন্যে পুরুলিয়া বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতি ও ব্লক প্রশাসন।

Advertisement

স্বনির্ভর দলের মহিলা সদস্যদের দিয়ে গত বছর দোলের আগে পরীক্ষামূলক ভাবে ফুলের নির্যাস থেকে ভেষজ আবির তৈরি করেছিল প্রশাসন। এ বার স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কন্যাশ্রীদের ছোঁয়ায় অন্য মাত্রা পেয়েছে সেই আবির।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কারিগরি সহায়তায় ফুলের নির্যাস থেকে সুগন্ধী ভেষজ আবির তৈরি করেছিলেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা সদস্যেরা। বছর পেরিয়ে সেই মহিলারাই এ বার নতুন ভূমিকায়। ভেষজ ফাগের কারিগর কন্যাশ্রীদের প্রশিক্ষকের ভূমিকায় এ বার তাঁরাই।

Advertisement

রাজ্যের মধ্যে পুরুলিয়াতেই পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু হওয়া নারী, শিশু উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ দফতরের কন্যাশ্রী-সাবলম্বী প্রকল্পে স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের সামিল করে এ বার জঙ্গলমহলের এই সুগন্ধী আবিরকে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিতে নেমেছে বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতি। এই উদ্যোগের পিছনে যাঁর মূল ভূমিকা, তিনি বিডিও (বলরামপুর) পৌষালি চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘গত বার আমরা পরীক্ষামূলক ভাবে ভেষজ আবির তৈরি করেছিলাম কেবলমাত্র স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যাদের দিয়ে। সে বার আমরা প্রথমে ৫০ কেজি আবির তৈরির তৈরির কথা ভেবেছিলাম। শেষ পর্যন্ত ১৭০ কেজি আবির তৈরি করতে হয়েছিল। এ বার পাঁচ কুইন্টাল আবিরের অর্ডার পেয়েছিলাম।’’

এ বারও গাঁদা, পলাশ, অপরাজিতা, বিট, সিমপাতা ও নিমপাতা এই সমস্ত ফুল, পাতা ব্যবহার করে সবুজ, হলুদ, নীল, কমলা-সহ বিভিন্ন রঙের আবির তৈরি করেছেন মেয়েরা। কন্যাশ্রী-স্বাবলম্বী প্রকল্পে এই কাজে ছাত্রীরা হাত লাগিয়েছে বলে এ বার এই প্রকল্পের নামকরণ ‘পলাশকন্যা’ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়।

জেলাশাসক বলেন, ‘‘গত বার বাজারে এই ভেষজ আবিরের চাহিদা বেশ ভাল ছিল। সে জন্য এ বার আরও বেশি পরিমাণে তৈরি করা হচ্ছে।’’ দোলের আগের রবিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে বাজারে এসে গিয়েছে এই আবির। এই আবিরের বেচাকেনা শুরুর সূচনা করতে গিয়ে বলরামপুরের বিধায়ক তথা পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘এই আবির তৈরির প্রশিক্ষণ আগামী দিনে ছাত্রীদের স্বাবলম্বী হওয়ার পথে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।’’

অভিভাবকেরা তাঁর অমতে বিয়ে ঠিক করেছিল বলে সোজা বিডিওর কাছেই হাজির হয়েছিল রুচাপ গ্রামের কিশোরী তুষ্ট মাহাতো। পলাশকন্যা প্রকল্পে প্রশাসন তুষ্টর সঙ্গে সামিল করেছে তপতী মাঝি, অনিতা মাহাতোদের।

নির্মলা সিংহ সর্দার, প্রশান্ত মান্ডিরা গত বার যাদবপুরের বিশেষজ্ঞদের কাছে শিখেছিলেন, গরম জলে ফুটিয়ে ফুলের নির্যাস বের করে কী ভাবে ফটকিরি মিশিয়ে ট্যালকম পাউডার যোগ করে সুগন্ধী আবির তৈরি করতে হয়। তাঁরা বলেন, ‘‘আমরা গতবার যা শিখেছি, এ বার সেটাই ছাত্রীদের শেখাচ্ছি।’’ তাই তপতী, তুষ্টরা বলছে, ‘‘পড়াশোনার ফাঁকে এটা তো অল্প কয়েক দিনের কাজ। ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন