এক পদ। কিন্তু দাবিদার অনেক।
এই অবস্থায় পঞ্চায়েত সমিতিতে বোর্ড গঠনে যাতে দলীয় কোন্দল তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করতে বোর্ড গঠনের দু’দিন আগে পুরুলিয়া জেলার ১২টি পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত সদস্য ও ব্লকগুলির নেতাদের নিয়ে বৈঠক করল তৃণমূল। রবিবার দিনভর পুরুলিয়া শহরের একটি হোটেলে এই বৈঠক চলে। ছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো, রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন, পুরুলিয়ার সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতো, দুই বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়া ও রাজীবলোচন সোরেন প্রমুখ।
দল সূত্রের খবর, বৈঠকে নিতুড়িয়া, পুঞ্চা, মানবাজার ১ ও ২, কাশীপুরের মতো কয়েকটি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহ-সভাপতি পদে কারা দাঁড়াবেন, তা নিয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলেও জেলার বেশির ভাগ ব্লকেই সর্বসম্মত ভাবে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি শাসকদল। তবে পঞ্চায়েত সমিতিতে বোর্ড গঠনে তাদের দলে কোনও সমস্যা নেই বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের অন্যতম জেলা সাধারণ সম্পাদক নবেন্দু মাহালি।
মঙ্গলবার ৪ সেপ্টেম্বর থেকে পুরুলিয়ায় শুরু হচ্ছে পঞ্চায়েত সমিতিতে বোর্ড গঠন। চলবে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ বার নির্বাচনে পুরুলিয়ায় আংশিক বির্পযয় হয়েছে শাসকদলের। রাজ্যের মধ্যে এখানেই সব থেকে ভাল ফল করেছে বিজেপি। প্রচুর পঞ্চায়েত তো বটেই, বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত সমিতিও হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের। আবার কয়েকটি সমিতি ত্রিশঙ্কু অবস্থায় আছে।
তৃণমূল সূত্রের খবর, এ দিন জেলার ১২টি পঞ্চায়েত সমিতিতে বোর্ড গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠক ডাকা হয়েছিল মানবাজার ১ ও ২ ব্লক, পুঞ্চা, পুরুলিয়া ১ ও ২ ব্লক, পাড়া, বান্দোয়ান, আড়শা, বরাবাজার, নিতুড়িয়া, সাঁতুড়ি ও পাড়া ব্লকের নির্বাচিত সদস্য ও স্থানীয় নেতাদের।
দলের একটি সূত্রের খবর, বাকি আটটি ব্লকের সমীকরণ হয় ত্রিশঙ্কু হয়ে আছে, নতুবা সেখানে বোর্ড গঠনের কাজটা খুব একটা সহজসাধ্য নয় দলের পক্ষে। তাছাড়া ওই আটটি ব্লকে দলবদলের কিছু সম্ভাবনা থাকায় নতুন কী সমীকরণ দাঁড়াচ্ছে, তা এখনই স্পষ্ট না হওয়ায় বৈঠকে ডাকা হয়নি ওই ব্লকগুলির নির্বাচিত সদস্য ও নেতৃত্বকে।
বস্তুত, পঞ্চায়েত নির্বাচনেই প্রার্থী হওয়া নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল তৃণমূলের অন্দরে। বিভিন্ন সমিতিতে দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে পড়েন দলেরই কিছু নেতা-কর্মী। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বোর্ড গঠনে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার দাবি জানাতে শুরু করেন। বিশেষ করে পঞ্চায়েত সমিতিতে সভাপতি ও সহ-সভাপতি এই দুই পদের জন্য একাধিক দাবিদার তৈরি হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতেই এ দিন নির্বাচিত সদস্য ও ব্লকগুলির স্থানীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে সমিতিগুলিতে বোর্ড গঠনে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন শাসকদলের জেলার শীর্ষ নেতারা।
এ দিনের বৈঠকের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো জানান, রাজ্য নেতৃত্ব চাইছে সমিতিতে বোর্ড গঠন নিয়ে যাতে দলের অভ্যন্তরে কোনও সমস্যা তৈরি না হয়ে, সেটা নিশ্চিত করতে। তাই সর্বসম্মত ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েই সমিতিগুলিতে কারা পদ পাবেন, তা স্থির করতেই বৈঠক ডাকা হয়েছিল। পুরুলিয়াতে দলের অভ্যন্তরে বোর্ড গঠনে বড়সড় মাপের কোনও সমস্যা নেই বলেই দাবি করেছেন তিনি।
তাঁর কথায়, ‘‘সামান্য কয়েকটি সমিতি বাদ দিয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সর্বসম্মত ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কয়েকটি সমিতিতে সভাপতি পদে একাধিক নাম উঠে এসেছে। আমরা সমস্ত সমিতির খসড়া তালিকা তৈরি করে রাজ্য নেতৃত্বর কাছে পাঠাচ্ছি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন রাজ্য নেতৃত্ব।”
তবে নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে কাজ কতটা হবে, সেটা নিয়ে জল্পনা রয়েছে দলের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে।