রামপুরহাট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দীপককুমার সিংহ। নিজস্ব চিত্র
পাশ ফিরতে গেলেই যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছেন। আধা বসা, আধা শোওয়া অবস্থায় রামপুরহাট জেলা হাসপাতালের সংক্রামক বিভাগে এ ভাবেই কেটেছে দিন সাতেক। বছর ষাটেকের ওই প্রৌঢ়ের পরিচয় জানা না থাকায় যোগাযোগ করা যায়নি পরিবারের সঙ্গেও। আট দিনের মাথায়, কলকাতার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তৎপরতায় সোমবার তাঁর পরিচয় জানতে পারেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল সুপার শর্মিলা মৌলিক বলেন, ‘‘আমরা জেনেছি ওই ব্যক্তির নাম দীপককুমার সিংহ। বাড়ি দমদমের নাগেরবাজার এলাকার অমরপল্লিতে। আমরা সাধ্যমতো চিকিৎসা করেছি। পরিবার ওঁর আরও ভাল চিকিৎসার ব্যবস্থা করুক, এখন এটাই চাওয়া।’’
কিন্তু, কী ভাবে কলকাতা থেকে রামপুরহাট এসে পৌঁছলেন, অসুস্থই বা হলেন কী ভাবে?
মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালের বিছানায় দীপকবাবু জানালেন, বছর তিনেক আগে হাওড়ার এক কারখানায় কাজ করতেন। বাড়ি ভাড়া করে স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। এক সময় কাজ চলে গেলে বাড়ি ভাড়ার পয়সা আর জোগাড় করতে পারেননি। দীপকবাবুর দাবি, ‘‘তখন ছেলে জয়ন্তর কাছে থাকতে গেলে আমাদের দায় নিতে চায়নি। তাই বছরখানেক আগে আমি, আর আমার স্ত্রী রেখা তারাপীঠে চলে আসি।’’ কথা বলে জানা গেল, কয়েক মাস হল স্ত্রীও নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন। অনেক খোঁজ করেও সন্ধান পাননি। এরই মাঝে মাসখানেক আগে তারাপীঠ শ্মশানে প্রসাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে পড়ে গিয়ে কোমরে চোট পান। তখন কে বা কারা হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়। দীপকবাবুর এখন আর্জি, ছেলেবৌমা তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাক। এ দিকে, রামপুরহাট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের থেকে প্রৌঢ়ের নাম, ঠিকানা জেনে পরিবারের খোঁজ করতে শুরু করে কলকাতার ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও। সংস্থার কর্ণধার অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস জানান, চারটি দলে ভাগ হয়ে ২৭ জায়গায় খোঁজা শুরু হয়। দমদম থানা এবং নাগেরবাজার অমরপল্লি পুলিশ ফাঁড়িতে জানানো হয়। তাঁর কথায়, ‘‘দিন কয়েকের মাথায় আমরা দীপকবাবুর ছেলে জয়ন্তর স্ত্রী দীপার একটি বিউটি পার্লারের সন্ধান পাই। তার পরেই সোমবার রামপুরহাট হাসপাতালকে যোগাযোগের নম্বর দিই।’’
ছেলে জয়ন্তর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। মঙ্গলবার বিকেলে তাঁর স্ত্রী দীপা দাবি করেন, ‘‘শ্বশুর, শাশুড়িকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়নি। ওঁরা স্বেচ্ছায় কোর্ট পেপারে সই করে তারাপীঠ চলে যান। ফিরতে দেরি হবে বলেও জানিয়েছিলেন। এ বার যখন খোঁজ পেয়েছি দু’এক দিনের মধ্যেই শ্বশুরমশাইকে ফিরিয়ে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।’’