দিনভর জল্পনা, বিক্ষোভ চলল সাঁওতালডিহিতে
TMC. Police Super

‘নিখোঁজ’-এর তৃণমূলে যোগ

তৃণমূলে যোগ দিয়ে পরিমল বলেন, ‘‘আমাকে অপহরণ করা হয়নি। স্বেচ্ছায় তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সাঁওতালডিহি শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৮ ০৩:০৩
Share:

সকাল-বিকেল: সাঁওতালডিহি থানার সামনে বিজেপির ক্ষোভ। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

তিনি নিখোঁজ ছিলেন। ব্যাপারটা কী, তদন্ত করে দেখার নির্দেশও দিয়েছিলেন জেলা পুলিশ সুপার। দিনের শেষে তিনি নিজেই ফিরে এলেন। তবে বিজেপির ঘরে নয়। জেলা তৃণমূলের অফিসে। সোমবার সন্ধ্যায় পাড়া পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপি সদস্য অমর মাহাতার সঙ্গে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন ওই সমিতির বিজেপির আরও এক সদস্য পরিমল মাহাতো। আর দিনভর ‘নিখোঁজ’ পরিমলকে নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে সাঁওতালডিহিতে।

Advertisement

তৃণমূলে যোগ দিয়ে পরিমল বলেন, ‘‘আমাকে অপহরণ করা হয়নি। স্বেচ্ছায় তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।’’ এত ক্ষণ কোথায় ছিলেন? কেন ‘নিখোঁজ’ হয়েছিলেন? উত্তর মেলেনি। তৃণমূলে কেন যোগ দিলেন? পরিমল বলেছেন, ‘‘এলাকার উন্নয়নের জন্য।’’ একই দাবি অমরেরও। এ দিন সন্ধ্যায় পরিমল এবং অমরের হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দেন পাড়ার বিধায়ক উমাপদ বাউড়ি ও দলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো।

সন্ধ্যায় দু’জনকে নিয়ে জেলা সদরের পার্টি অফিসে পৌঁছন উমাপদ। এ দিকে সকাল থেকে বিজেপি থানার সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে তাঁদের সদস্য নিখোঁজ বলে। সাঁওতালডিহি গিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, ‘‘পুরো ঘটনায় তৃণমূল জড়িত। তারাই পরিমলকে কাজের জায়গা থেকে উঠিয়ে
নিয়ে গিয়েছে।’’

Advertisement

অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন উমাপদ। দিনের শেষে তিনি বলছেন, ‘‘ওঁদের উঠিয়ে আনা হয়নি। ওঁরাই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দলে যোগ দিতে চেয়েছিলেন।’’

স্থানীয় একটি সূত্রের খবর, ওই দু’জনের দলবদলের ব্যাপারে কিছু দিন ধরেই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। এ বারের ভোটে শ্যামপুর এলাকা থেকে পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রথম বার জিতেছেন বছর তিরিশের পরিমল। তিনি সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থায় রক্ষীর কাজ করেন। পরিমলের বাবা সুভাষ মাহাতোর দাবি, ছেলে রবিবার সন্ধ্যায় কাজে বেরিয়েছিল। সাঁওতালডিহি টাউনশিপে ‘ডিউটি’ ছিল। রাত ১১টা পর্যন্ত সহকর্মীরা তাঁকে দেখতে পেয়েছিলেন। তার পর থেকেই কোনও সন্ধান ছিল না পরিমলের। কাজের জায়গাতেই তাঁর মোবাইল ও মোটরসাইকেল পাওয়া যায়।

তবে সোমবার সকালে অন্য একটি মোবাইলে ছেলের সঙ্গে কয়েক বার তাঁদের কথা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন সুভাষ। এ দিন সকালে তিনি বলেছিলেন, ‘‘পরিমল নিজেই ফোন করে বলেছে, সে ভাল আছে। আপাতত বর্ধমানে আছে।”

কী ভাবে ও কেন বর্ধমানে গেলেন, কবে ফিরবেন, সেই বিষয়ে পরিবারকে পরিমল কিছুই জানাননি বলে দাবি করেছিলেন তাঁর বাবা। ফোনে ছেলের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছিলেন সুভাষ। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া সকালে বলেছিলেন, ‘‘পরিমল মাহাতো নামের এক যুবকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে ওর পরিবার থানায় জানিয়েছে। সাঁওতালডিহির আইসিকে ঘটনার তদন্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

দিনের শেষে আঁধার নামার সঙ্গে সঙ্গে জল্পনায় যবনিকা নেমে আসে। ওই দু’জনের তৃণমূলে যোগ দেওয়ার খবর চাউর হতেই সাঁওতালডিহি থানার সামনে বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভে ঘৃতাহুতি পড়ে। আরও বিজেপি কর্মীরা থানার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান।

বিজেপির বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেতার পরে আমাদের সদস্যদের তাদের দলে যোগ দেওয়ার জন্য হুমকি আর প্রলোভন দেখাচ্ছিলেন তৃণমূলের নেতারা। এমনকী প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। পরিমল হয় ভয়ে, নয় লোভে এই কাজ করলেন।’’

তৃণমূলের উমাপদ বাউড়ির অবশ্য বক্তব্য, ‘‘প্রলোভন বা হুমকির অভিযোগ ভিত্তিহীন। বিজেপির দৌড় বুঝতে পেরে ওঁরা আমাদের দলে এসেছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন