খেতে মিলল গ্রামছাড়া যুবকের গুলিবিদ্ধ দেহ

গ্রাম্য বিবাদকে ঘিরে প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে ঘরছাড়া গ্রামেরই আঠারোটি পরিবার। গ্রামে ফিরতে চেয়ে চিঠি লিখে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থও হয়েছিল গ্রামছাড়া স্কুলছাত্রী এক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী । তার পরেও গ্রামে ফেরা হয়নি কারওরই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তারাপীঠ শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৩২
Share:

গ্রাম্য বিবাদকে ঘিরে প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে ঘরছাড়া গ্রামেরই আঠারোটি পরিবার। গ্রামে ফিরতে চেয়ে চিঠি লিখে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থও হয়েছিল গ্রামছাড়া স্কুলছাত্রী এক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী । তার পরেও গ্রামে ফেরা হয়নি কারওরই। সেই পরিবারগুলিরই এক সদস্যকে গুলি করে খুন করল দুষ্কৃতীরা।

Advertisement

শনিবার রাতে রামপুরহাট-সাঁইথিয়া সড়কের কাছে তারাপীঠ থানার শাসপুরে খেতজমি থেকে ওই যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ জানায়, নিহতের নাম রাজেশ শেখ (২৮)। রামপুরহাট থানার বগটুইয়ের পূর্বপাড়ায় বাসিন্দা হলেও বর্তমানে তিনি গ্রামছাড়া হয়ে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে শাসপুরে থাকতেন। নিহত যুবক বগটুইয়ের গ্রামছাড়া কংগ্রেস নেতা আঙুর শেখের ভাই। আঙুরের স্ত্রী জেসমিনা বিবি রামপুরহাট ১ ব্লকের বড়শাল পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের নির্বাচিত সদস্য। ওই দম্পতিও বর্তমানে গ্রামছাড়া রয়েছেন। এসডিপিও (রামপুরহাট) কমল বৈরাগ্য বলেন, “ওই ঘটনায় এখনও কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, ওই যুবককে খুন করা হয়েছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রায় দেড় বছর আগে ওই গ্রামে একটি ছাগল ধানের বীজতলায় মুখ দিয়ে ফেলেছিল। প্রথমে দু’পক্ষের মারপিট, শেষে বোমাবাজি-অগ্নি সংযোগে গ্রামে ধুন্ধুমার বেধেছিল। যার জেরে বছরখানেক ধরে বগটুইয়ে ঝামেলা চলছে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের। এক দিকে, গ্রামের বাসিন্দা তথা স্থানীয় বড়শাল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের জামকলি শেখ। বিপক্ষে কংগ্রেস নেতা আঙুর শেখ। গ্রামছাড়া পরিবারগুলির অধিকাংশ এলাকায় কংগ্রেস সমর্থক বলেই পরিচিত। সংখ্যায় ৭৭ জন। রবিবার দুপুরে রামপুরহাট হাসপাতালে দেহ নিতে এসে নিহতের কাকা রশিদ শেখ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়ার পরেও আণরা ১৮টি পরিবার গ্রামছাড়া হয়ে আছি। ভাইপোর পরিবারও গ্রামছাড়া। পুলিশ-প্রশাসন কোনও সাহায্য করেনি।’’ তাঁর আশঙ্কা, ওই গ্রাম্য বিবাদের সঙ্গে ভাইপোর এই খুনের সম্পর্ক থাকতে পারে। পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করলে খুনিরা ধরা পড়বে।

Advertisement

রশিদ শেখ এ দিন জানান, তাঁর ভাইপো এ দিন বিকালে শাসপুর থেকে মোটরবাইক চালিয়ে তারাপীঠে এসেছিলেন। ঠিক কী কারণে এসেছিলেন, তা অবশ্য বলতে পারেননি রশিদ। তাঁর কথায়, ‘‘বর্ধমান হাসপাতালে রাজেশের দাদা আঙুর শেখ অসুস্থ হয়ে ভর্তি আছে। ওকে দেখে ফেরার সময় ট্রেনেই খবর পাই, সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে রাজেশের খোঁজ মিলছে না।’’ বিস্তর খোঁজার পরে প্রথমে শাসপুরের মাঠে রাস্তার ধারে রাজেশের মোটরবাইক ও চটি পড়ে থাকতে দেখেন তাঁর পরিজনেরা। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ কাছের একটি ইটভাটার কাছে ধানজমিতে এক যুবকের রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখতে পান। খবর যায় পুলিশে। পরিজনেরা এসে দেহটি রাজেশের বলে চিহ্নিত করেন। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ মৃতদেহটি উদ্ধারল করে রামপুরহাট হাসপাতালে ময়না-তদন্তের জন্য নিয়ে আসে পুলিশ।

হাসপাতাল ও পুলিশের সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতদেহের ডান কানের পিছনে এবং মাথার গভীর ক্ষতের চিহ্ন আছে। যা দেখে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, রাজেশকে খুব কাছ থেকে গুলি করে খুন করা হয়েছে। এ ছাড়া মৃতদেহের পিঠে ছেঁচড়ানোর দাগ আছে। নাক ও মুখেও হালকা কাঁটাছেঁড়ার দাগ আছে। পুলিশ জানিয়েছে, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত মৃত্যুর ঠিক কারণ বলা যাবে না। ঘটনায় কারা জড়িত, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন