চতুর্মুখী প্রচারে জমজমাট সাঁইথিয়া

পুর-নির্বাচনের শেষ বেলায় সাঁইথিয়ায় সভা করলেন অধীর চৌধুরী। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ও ছোটছোট পথসভা করে ভোট চাইলেন জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। রোড-শো করলেন রামচন্দ্র ডোম। আর এ দিনও ঘরে ঘরে গিয়ে তাঁর দলকে ভোট দেওয়ার অনুরোধ করলেন মনিরুল ইসলাম। সব মিলিয়ে শেষবেলায় চতুর্মুখী প্রচারে জমজমাট সাঁইথিয়া।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৫ ০২:০৫
Share:

পুর-নির্বাচনের শেষ বেলায় সাঁইথিয়ায় সভা করলেন অধীর চৌধুরী। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ও ছোটছোট পথসভা করে ভোট চাইলেন জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। রোড-শো করলেন রামচন্দ্র ডোম। আর এ দিনও ঘরে ঘরে গিয়ে তাঁর দলকে ভোট দেওয়ার অনুরোধ করলেন মনিরুল ইসলাম। সব মিলিয়ে শেষবেলায় চতুর্মুখী প্রচারে জমজমাট সাঁইথিয়া।

Advertisement

পুর-নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে সিপিএম যেন কেমন ঘুমিয়ে পড়েছিল। বৃহস্পতিবার সকালে সাঁইথিয়ার পথে সেই সিপিএমকে দেখা গেল একেবারে অন্য ভূমিকায়। যেন সমস্ত ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া তারা। তৃণমূলের বুধবারের মত অতবড় মিছিল না হলেও এ দিন দলের জেলা সম্পাদক রামচন্দ্র ডোমের নেত্তৃত্বে সিপিএমের মিছিলও ছিল বেশ বড় ও নজরকাড়া। মিছিলে সেই আগের শাসক সিপিএমের ছবি যেন ধরা পড়ছিল। আদিবাসী পুরুষ, মহিলা থেকে শুরু করে শহর ও গ্রামগঞ্জের খেটে খাওয়া মানুষ হাজির। রামচন্দ্র ডোমের আর্জি, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার হারিয়েছেন। এই সরকারের নীতি বা নির্বাচন নিয়ে তাই আর কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। যা বলব তাই কম বলা হবে। আমাদের আশঙ্কা, শাসকদল ব্যাপক রিগিং করবে ও ছাপ্পা ভোট দেবে। আর পুলিশ-প্রশাসন তাদেরই কথা মতো চলবে। তাই সমস্ত মানুষের কাছে আবেদন, গণতন্ত্রকে বাঁচাতে জেলা-সহ সারা রাজ্যে বামফ্রন্ট প্রার্থীদের ভোট দিন।’’

এই পুরভোট উপলক্ষে এ দিনই প্রথম সভা করে কংগ্রেস। স্থানীয় নন্দীকেশ্বরি মন্দির লাগোয়া মেঘদূত মঞ্চে সভা হয়। জেলা নেতাদের বক্তব্য চলাকালীন দুপুর পৌনে ১২টা নাগাদ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীর রঞ্জনচৌধুরী আসেন। অধীরবাবুর উপস্থিতিতেই বক্তব্য রাখেন সাঁইথিয়ার প্রক্তন পুরপ্রধান কংগ্রেসের তরুণ ঘোষ। তিনি শাসকদলের চোখ রাঙানি ও পুলিশের পক্ষপাতমূলক আচরণের তীব্র সমালোচনা করেন। শাসকদল ও পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘ভোটের দিন কংগ্রেস হোক বা শাসক বিরোধী অন্য দলের কর্মী-সমর্থক হোক, কাউকে যদি কোনওভাবে হেনস্থা করা হয় তা হলে সাঁইথিয়ার শান্তিপ্রিয় মানুষ তা সহ্য করবেন না।’’ তৃণমূলকে আক্রমণ করতে ছাড়েননি লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলামের ভাই কংগ্রেস নেতা রবিউল ইসলামও। তীব্র ভাষায় তৃণমূলকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘‘যেখানে যা হবে আমাকে খবর দেবেন। আগে আমার গায়ে আঘাত লাগবে তারপর অন্য কারও গায়ে আঘাত লাগতে দেব।’’

Advertisement

সাঁইথিয়ার রাজনীতিতে বিশেষ করে পুর-নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রাক্তন জেলা সভাপতি প্রয়াত নীহার দত্ত এখনও একটা বড় স্তম্ভ। এ দিনের সভায় মাথার উপর গনগনে রোদ নিয়ে অধীরবাবু শহরবাসীকে সেই নীহার দত্তের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। পাশাপাশি বামফ্রন্টকেও একহাত নেন অধীরবাবু। তিনি বলেন, ‘‘বামপন্থীরা ভেবেছিল ৩৪ বছর যখন সন্ত্রাস করে পার পেয়ে গিয়েছে, তখন আরও ৩৪ বছর পার করা যাবে। আমরা তখন বলতাম, সন্ত্রাস শেষ কথা বলে না। ৩৪ বছরের বাম জমানায় বীরভূমের গ্রাম রক্তাক্ত হয়েছে। কিন্তু সেই অবস্থার মধ্যেও বীরভূম যদি একটা মরুভূমির নাম হয়, সেই মরুভূমির মধ্যে সাঁইথিয়া কংগ্রেস দলের কাছে মরুদ্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল। সাঁইথিয়াকে সেদিন কংগ্রেসের মরুদ্যান হিসেবে ধরে রাখার পিছনে যে ব্যক্তিটির সব থেকে বড় অবদান ছিল তিনি (নীহার দত্ত) আমাদের মধ্যে নেই।’’ তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে বলেন, ‘‘বাংলার ঘাড়ে ঋণের বোঝা বাড়ছে। বাংলায় কল কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। অবশ্য বাংলার মানুষের তো কোনও চিন্তার কারণ নেই। কারণ আপনি তো তিনটি নখের আঁচড় কাটলেই দশ লাখ।’’

এ দিনও, তৃণমূল নেতা মনিরুল ইসলাম বিভিন্ন ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করেন। কারও হাতে হাত মিলিয়ে, তো কাউকে বুকে জড়িয়ে তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার আবেদন জানান। অধীরবাবুর মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এই জেলা ও এই শহরটাকে সুন্দর সাজানো গোছানো করতে চেয়েছিলেন কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের জেলা সভাপতি প্রয়াত নীহার দত্ত। কিন্তু বামফ্রন্ট সরকার তাঁর সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত হতে দেয়নি। শুধু তাই নয়, জেলাজুড়ে যে কংগ্রেসকে তিনি বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলেন সেই কংগ্রেস সিউড়ির পার্টি অফিস থেকে তাঁর ছবি ফেলে দিয়েছিল। তাই এক দিকে বাবার অপমান সহ্য করতে না পারা ও বাবার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্যই নীহারবাবুর ছেলে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। আর আমাদের নেত্রীকে কেউ দয়া দাক্ষিণ্য করেনি। উনি নিজের সততা ও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই যায়গায় এসেছেন। এ কথা বাংলা তথা দেশের মানুষ ভাল করে জানেন। তাই অধীরবাবুর কথা কেউ কানে দেবেন না।’’ অন্য দিকে, সকাল থেকে ৮, ৯, ১০, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন পাড়ায় ঘোরেন বিজেপি’র জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ভোট প্রচারে বেরিয়ে বলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনে এই শহরের মানুষ যে ভাবে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন, পুর নির্বাচনেও যেন সে ভাবে ভোট দেন এবং বিজেপির পাশে থাকার অনুরোধ জানান।’’ ৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারে গিয়ে দলীয় প্রার্থী সুশান্ত রায়কে দেখিয়ে জয় বলেন, ‘‘এতদিন তাঁর শিক্ষকতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন দেখা দেয়নি। যেই উনি বিজেপি’র প্রার্থী হলেন, তেমনি তাঁর স্কুল করা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিল এবং শাসকদলের জেলা সভাপতি তাঁকে অন্যত্র বদলি করার জুজু দেখিয়েছিলেন। আর বুধবার বিকেলে তাঁকে শো-কজ করেছেন জেলা প্রাইমারি স্কুলের চেয়ারম্যান। এ থেকেই বোঝা যায় শাসকদলের গণতন্ত্র।’’

শেষ বেলায় যুযুধান চারটি দল সাঁইথিয়ায় প্রচার জমিয়ে দিলেও ভোটের ফলে কতটা প্রভাব পড়বে সে দিকেই তাকিয়ে সাঁইথিয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন