হেলমেট জরুরি, সেই বার্তা দিয়েই বোলপুরে পুজো। —নিজস্ব চিত্র
মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল এক যুবকের। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম ইমরান শেখ (২০)। তার এক সঙ্গী আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। রবিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে, মুরারইয়ের ডুড়িয়া-ঘুসকিরা সড়কে। মৃত ইমরান ও তার জখম সঙ্গীর বাড়ি ঘুসকিরাতে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চালক এবং আরোহী দুজনের কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না।
পুলিশ জানিয়েছে, ইমরান ও তাঁর সঙ্গী নয়ন শেখকে প্রথমে মুরারই ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান গ্রামবাসীরা। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় নয়নকে। ইমরান যে মোটরবাইকটি চালাচ্ছিলেন সেটির মালিকের খোঁজ করছে পুলিশ। ঘুসকিরার বাসিন্দা ইমরান ও নয়ন এ দিন সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন বলে তাদের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাশেই ডুড়িয়া গ্রামের একটি স্কুলে সরস্বতী পুজোয় গিয়েছিলেন তাঁরা। দুপুরে সেখান থেকে নিজেদের গ্রামে ফেরার পথে একটি বাঁকের কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ইমরান যে নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে মাত্রাতিরিক্ত গতিতে মোটরবাইক চালাতে ভালবাসতেন তা জানিয়েছেন এলাকার অনেকেই।
ওই যুবকের মা মাজেরুন বিবি বলেন, ‘‘ছেলে মাধ্যমিক পাশ করে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। আমাদের টানাটানির সংসার। না রোজগার হলে খাওয়া জুটবে না বলে ছেলেটা পড়াশোনা ছেড়ে কেরালায় কাজ করতে গেল। কদিন আগে গ্রামে ক্রিকেট খেলা ছিল বলে বাড়ি এসেছিল। ইমরান জোরে গাড়ি চালায় শুনেছিলাম। সাবধান করেছিলাম। কার মোটরবাইক নিয়ে এই বিপদ ঘটালো জানি না। হেলমেট থাকলে হয়তো প্রাণটা যেতো না।”
বীরভূমের বিভিন্ন এলাকার রোজকার পরিচিত ছবি, হেলমেট নেই মাথায়, দু-চাকার সাইলেন্সারে বিকট আওয়াজ করে গতিতে সওয়ার সদ্য কৈশোর পেরনো স্কুল বা কলেজ পড়ুয়া। আইন-কানুন, পুলিশের নজরদারি — যান নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থাই রুখতে পারেনি দু-চাকার মাত্রাহীন গতিকে। খোদ মুখ্যমন্ত্রীকেও বীরভূম সফরে গিয়ে বলতে হয়েছে ট্র্যাফিকের লাগামহীন ব্যবস্থা নিয়ে। তাতে যে অবস্থা বদলায়নি তা আবারও প্রমাণ হল এ দিন। বছর কুড়ির দুই যুবক মোটরবাইক দুর্ঘটনার পর দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকলেন রাস্তায়। গ্রামবাসীদের চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসকেরা জানান ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছে এক জনের। বীরভূমে এই ঘটনা যে বারবার ঘটছে তা পুলিশের কাছে থাকা দুর্ঘটনার খতিয়ানই বলছে। নতুন বছরের প্রথম দিনেই ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে রামপুরহাট শহরে কাছে বিনোদপুর গ্রামের চার যুবক প্রাণ হারান ট্রাক ও মোটরবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে। তাঁদের কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না। একজনকে তো ট্রাকটি ছেঁচড়ে নিয়ে যায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার। এরপরে মুরারইতেই বেপরোয়া মোটরবাইকের গতির বলি হন একজন। ফের এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল মুখ্যমন্ত্রীর ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচীর বাস্তব চিত্রটা।
ডুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মুলুক শেখ দুই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। তিনি বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার অনেক পরে খবর পেয়েছিলাম দুজন রাস্তায় পড়ে আছে। রাস্তায় জখম দুজনকে দেখেও অনেকেই এড়িয়ে গিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত আমি দুটি মোটরবাইকে করে দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। ততক্ষণে একজনের মৃত্যু হয়েছে।’’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দুই বন্ধু মোটরবাইকে ডুড়িয়া গ্রাম থেকে ঠাকুর দেখে ফেরার পথে ডুড়িয়া ও ঘুসকিরার মাঝে একটি বাঁকের কাছে পড়েছিলেন। কোনও গাড়ি তাঁদের ধাক্কা মেরেছিল নাকি বেপরোয়া গতির জন্য নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে কংক্রীটের খুঁটিতে ধাক্কা দিয়ে নিজেরা ছিটকে পড়েছিলেন তা স্পষ্ট নয়। এই দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরে এলাকায় সাময়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়।
ৈৈ