বাড়ি তৈরিতে বাধার নালিশ

কী ভাবে বাড়ি তৈরি না করেও দফায় দফায় টাকা পেলেন ওই ব্যক্তি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসীর একাংশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নলহাটি শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৯ ০০:০৬
Share:

ভাঙা ঘরের সামনে অনিল মাল। নবগ্রামে। নিজস্ব চিত্র

সরকারি যোজনায় বাড়ি তৈরির টাকা ঢুকেছে তিন কিস্তিতেই। অভিযোগ, একটা ইটও গাঁথা হয়নি সেখানে। শুধু তা-ই নয়, বাড়ি তৈরিতে জবকার্ডের জন্যে বরাদ্দ টাকাও ঢুকেছে উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে। নলহাটি ২ ব্লকে ভদ্রপুর ২ পঞ্চায়েতের নবগ্রামে ঘটেছে এমনই কাণ্ড।

Advertisement

উপভোক্তা বছর ছিয়াশির অনিল মালের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকায় বাড়ি তৈরি করতে তাঁকে নিষেধ করেছিলেন স্থানীয় এক পঞ্চায়েত সদস্য। প্রতি কিস্তিতে ঢোকা ৪০ হাজার টাকার মধ্যে ২০ হাজার টাকা করে ‘কাটমানি’ও নিয়েছেন ওই নেতা। এ নিয়ে ১০ জুলাই নলহাটি ২ ব্লকের বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন অনিলবাবু।

কী ভাবে বাড়ি তৈরি না করেও দফায় দফায় টাকা পেলেন ওই ব্যক্তি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসীর একাংশ।

Advertisement

বিডিও রাজদীপশঙ্কর গৌতম বলেছেন, ‘‘এ নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। দু’বছর আগের ঘটনা। ওই ব্যক্তি বাড়ি তৈরি না করেও কী ভাবে টাকা পেয়েছেন, তা দেখব। পঞ্চায়েতের কাছে রিপোর্ট চেয়েছি। কেউ কাটমানি নিয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেব। বাড়ি তৈরির প্রকল্প দেখভালের দায়িত্বে থাকা পঞ্চায়েতের কর্মীদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ পেলেও উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬-২০১৭ অর্থবর্ষে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির অনুমোদন পান অনিলবাবু। তাঁর অভিযোগ, ভদ্রপুর ২ পঞ্চায়েতের তৎকালীন সদস্য বিদ্যুৎ মাল তাঁর কাছ থেকে ব্যাঙ্কের পাসবই, জবকার্ড নিয়ে নেন। অনিলবাবুর নালিশ, বিদ্যুৎবাবু তাঁকে বলেছিলেন— ‘‘এখনই বাড়ি তৈরির প্রয়োজন নেই। আপনার ছেলের নামে পরে আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির টাকা পাইয়ে দেব।’’ অনিলবাবুর আরও অভিযোগ, তিন কিস্তিতে ৪০ হাজার টাকা করে মোট ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ঢুকেছিল তাঁর অ্যাকাউন্টে। তা ছাড়া মিলেছিল জবকার্ডের জন্যে বরাদ্দ ১৭ হাজার টাকাও। অভিযোগ, তার মধ্যে থেকে ৬০ হাজার টাকা কাটমানি নিয়ে নেন বিদ্যুৎবাবু।

অনিলবাবু বলেন, ‘‘আমাকে বাড়ি তৈরি না করার পরামর্শ দিয়ে উনি পরে আমার ছেলের নামে বাড়ি তৈরির টাকা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমার দুই ছেলে গ্রামে অন্য জায়গায় বাড়ি করেছে। বর্ষায় আমার মাটির বাড়ির ভিতরে জল পড়ছে। ত্রিপল দিয়ে ঢেকে কোনও রকমে দিন কাটাচ্ছি।’’ তাঁর দাবি, বিদ্যুৎবাবু তাঁর থেকে নেওয়া কাটমানি ফেরত দিলে তিনি বাড়ি তৈরি করতে পারবেন।

অভিযোগ উড়িয়ে তৎকালীন পঞ্চায়েত সদস্য বিদ্যুৎবাবু বলেন, ‘‘দু’বছর পরে কেন অভিযোগ করা হচ্ছে? বিজেপির কয়েক জন স্থানীয় নেতা আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন। টাকা নিয়েও যাঁরা বাড়ি তৈরি করেননি, সে সব ব্যক্তিদের বিডিও অফিসের তরফে চিহ্নিত করা হচ্ছে। তা জেনেই উনি মিথ্যা অভিযোগ করে নিজে বাঁচার চেষ্টা করছেন।’’

বীরভূম জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ আবু জাহের রানা বলেন, ‘‘বিদ্যুৎবাবু দলের ভাল সংগঠক। বিজেপি চক্রান্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করাচ্ছে। আমি তদন্ত চেয়েছি। দোষী হলে আইন অনুযায়ী শাস্তি পাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন