তৃণমূলের উপপ্রধানকে মারধরের অভিযোগ উঠল দলেরই একাংশের বিরুদ্ধে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নানুর পঞ্চায়েত সমিতির এক মহিলা কর্মাধ্যক্ষও দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ।
রবিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ নানুরের চারকল গ্রামের ঘটনায় উপপ্রধান এবং এক তৃণমূল কর্মী মারাত্মক জখম হয়ে বর্তমানে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওই ঘটনায় ফের শাসকদলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বই সামনে এল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। কারণ, নিখিল কুশ মেটে নামে যে উপপ্রধান মার খেয়েছেন, এলাকায় তিনি নানুরের দাপুটে নেতা কাজল শেখের অনুগামী বলেই পরিচিত। আক্রান্তদের অভিযোগ, দলের বর্তমান জেলা যুব সভাপতি গদাধর হাজরার অনুগামীরাই তাঁদের উপরে চড়াও হয়েছে। গদাধর যদিও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ঘটনার সময়ে নানুর পঞ্চায়েত সমিতির নারী ও শিশুকল্যাণ কর্মাধ্যক্ষ চন্দনা বন্ধুর বাড়ির পাশ দিয়ে নিজেদের মাছ চাষ করা পুকুর দেখতে যাচ্ছিলেন নিখিল। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় দুই তৃণমূল কর্মী তপন রায়চৌধুরী এবং রাজকুমার সেন। রাজকুমার আবার সম্পর্কে চন্দনাদেবীর ভাই। রাজকুমার সোমবার বলেন, ‘‘আমরা কাজল ভাইয়ের অনুগামী। এ দিন সকালে মাছ ধরার কথা ছিল বলে নিখিলদার সঙ্গে পুকুরের অবস্থা দেখতে যাচ্ছিলাম। তখনই সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীদের সঙ্গে নিয়ে গদাধরের কিছু অনুগামী আমাদের উপরে চড়াও হয়ে বেধড়ক মারধর করে। আমার মোবাইল ও দু’ হাজার টাকাও ওরা ছিনিয়ে নিয়েছে।’’ অভিযোগ, গোলমালের খবর শুনে দেওর তপনকে নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন চন্দনাদেবী। তখন তাঁদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। চন্দনাদেবীর স্বামী পরিমল নিজে দলের চারকলগ্রাম অঞ্চল কমিটির সভাপতি। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘আমার স্ত্রী, ছেলে বিধানসভা ভোটে গদাধর হাজরারই পোলিং এজেন্ট ছিল। আমরা গদাধরেই অনুগামী। জনপ্রতিনিধি হিসাবে ভাইয়ের সঙ্গে স্ত্রী পরিস্থিতির সামাল দিতে গিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও তাঁদের কেন মারা হল, বুঝতে পারছি না!’’
ঘটনা হল, গত পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকেই কাজল–গদাধরের অনুগামীরা বারবার গোষ্ঠী সংঘর্ষে তেতে উঠেছে নানুরের বিভিন্ন গ্রাম। ভোটে গদাধর হেরে যাওয়ার পরেও তা থামেনি। কয়েক দিন আগেই দুই গোষ্ঠীর বোমাবাজিতে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল বালিগুনী গ্রামে। কাজল অনুগামীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা দলীয় কার্যালয় দখলের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে বেলুটি গ্রামে। সম্প্রতি কাজলের নিয়ন্ত্রণে থাকা নানুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চিন্তা মাঝির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেন সহ সভাপতি, পাঁচ কর্মাধ্যক্ষ-সহ ১৭ জন সদস্য। জেলা তৃণমূলের একটা সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের অভিযোগ, কাজলের জন্যই এ বার গদাধরকে হারতে হয়েছে। তাই কাজলকে কোণঠাসা করতেই তাঁর অনুগামীদের উপরে নানা ভাবে চাপ সৃষ্টির কৌশল নেওয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। এবং তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ক’দিন আগেই কাজলকে গ্রেফতারের দাবিতে সরব হয়েছিলেন খোদ তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও।
এ বিষয়ে কাজলের অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে, তাঁর এক ঘনিষ্ঠ অনুগামীর দাবি, ‘‘দলভারী করতেই গদাধরের লোকেরা এখন সিপিএম আশ্রিত দুস্কৃতীদের দিয়ে দাদার অনুগামীদের টার্গেট করছে।’’ যদিও চারকল গ্রামে মারধরের ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গদাধর এবং দলের নানুর ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য। দু’জনেরই দাবি, ‘‘ওই ঘটনার সঙ্গে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও সম্পর্কই নেই। আসলে ওই উপপ্রধান মজুরদের জবকার্ড আটকে রেখে টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে জনরোষের শিকার হয়েছেন। আর তার মাঝে পড়ে কর্মাধ্যক্ষ আক্রান্ত হয়েছেন।’’
পুলিশ জানিয়েছে, মারধরের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।