কলকাতায় সুচ বেরোল মেয়ের

সাত সুচ বেরোতে স্বস্তিতে নদিয়াড়া

গ্রামের এক প্রান্তে সনাতনের বাড়িতে গত ক’মাস ধরে পরিচারিকার কাজ নিয়ে থাকা ওই মহিলা ও তার শিশুর সঙ্গে সে ভাবে মেলামেশা অনেকেরই ছিল না।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৭ ০১:২৭
Share:

প্রার্থনা: শিশুর আরোগ্য প্রার্থনায় অভিযুক্তের এক পুত্রবধূ। অন্য পুত্রবধূ ফোনে পরিজনদের সফল অস্ত্রোপচারের খবর দিচ্ছেন। ছবি: সুজিত মাহাতো

কিছুটা হলেও সংশয় কাটল।

Advertisement

পুরুলিয়া মফস্সল থানার এই গ্রামেরই এক বৃদ্ধের বাড়ির পরিচারিকার শিশুকন্যার উপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ শোনার পর থেকেই ফুঁসছেন বাসিন্দারা। শিশুটির শরীরে সাতটি সুচ বিঁধে দেওয়া, মারধর করে দু’টি হাত ভেঙে দেওয়া থেকে তার সারা শরীরে আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করার খবর শোনার পর থেকে অভিযুক্ত সনাতন গোস্বামীর (ঠাকুর) বিরুদ্ধে ঘৃণা তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে উদ্বেগ ছিল সাড়ে তিন বছরের ওই শিশুর শরীর থেকে সুচগুলো কী ভাবে বের করা যাবে? মঙ্গলবার এসএসকেএম-এর ডাক্তাররা সফল অস্ত্রোপচার করে সুচগুলো বের করেছেন, শুনে তাই কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে এই গ্রামে।

গ্রামের এক প্রান্তে সনাতনের বাড়িতে গত ক’মাস ধরে পরিচারিকার কাজ নিয়ে থাকা ওই মহিলা ও তার শিশুর সঙ্গে সে ভাবে মেলামেশা অনেকেরই ছিল না। কিন্তু মঙ্গলবার জ্বরের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে শিশুটিকে ভর্তি করার পরে ডাক্তারদের নজরে ক্ষতগুলি আসতেই অভিযোগ সামনে আসে। সেই থেকে ওই শিশু যেন গ্রামের প্রতিটি বাড়ির সন্তান হয়ে উঠেছে। মেয়েটি কেমন আছে, তা জানতে সংবাদমাধ্যমে নজর রেখে যাচ্ছেন তাঁরা।

Advertisement

অভিযুক্ত সনাতনের পরিবারও ওই শিশুর আরোগ্য কামনায় ঈশ্বরের কাছে মানত করেছেন। তার দুই পুত্রবধূ রিঙ্কি ও রিনা এ দিন জানিয়েছেন, ঈশ্বরের কাছে তাঁরা শুধু মেয়েটার আরোগ্য কামনা করে যাচ্ছেন। সনাতনের দুই ছেলে পরিবার নিয়ে ভিন রাজ্যে থাকেন। শাশুড়ির বাৎসরিক কাজে সম্প্রতি রিঙ্কি ও রীনা নদিয়াড়ায় এসেছেন। তাঁরাই শ্বশুরের বাড়িতে নেতিয়ে থাকা শিশুটিকে দেখে চিকিৎসার জন্য গাড়ি ভাড়া করে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করাতে মঙ্গলবার পাঠিয়ে ছিলেন। তাঁদের কথায়, ‘‘মায়ের তো নিজের বাচ্চাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোনও গরজ ছিল না। আমরাই তো জোর করে প্রথম দিন ১১৫ টাকা জোগাড় করে ওকে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলাম। ওই টুকু দুধের শিশু কেমন ঘাড়টা কাত করে ছিল, খাচ্ছিল না। দেখলেই মায়া হয়।’’

এ দিনও দুই জা প্রশ্ন তোলেন— ‘‘আচ্ছা ওইটুকু দুধের শিশুর শরীরে এতগুলো সুচ কেউ কী করে ঢোকাতে পারে? সে কি মানুষ?’’ স্কুল পড়ুয়া সনাতনের দুই নাতি-নাতনি বলে, ‘‘দাদু ভাল লোক নয়। দাদুকে পুলিশ ধরুক। কিন্তু ওই ছোট্ট মেয়েটা সুস্থ হয়ে উঠুক। ভাল হয়ে যাক। আমরাও প্রার্থনা করেছি।’’ বড় পুত্রবধূ রিঙ্কি বলেন, ‘‘আমার স্বামী গুজরাটে আছে। সেখান থেকেই ফোনে খবর নিচ্ছে ওই বাচ্চা মেয়েটা কেমন আছে, কথা বলতে পারছে কি না।’’ তিনি জানান, শ্বশুরের জন্য তাঁদের কোন ভাবনা নেই। যেমন কাজ করেছে, আইন মোতাবেক তার ব্যবস্থা হবে। কিন্তু বাচ্চা মেয়েটার জন্য সব সময় তাঁদের কারও ঘুম নেই।

ওই শিশুকে সুস্থ করতে মরিয়া নদিয়াড়ার সাধারণ মানুষও। ষষ্ঠী রায়, ধুলা রাজোয়াড় বলেন, ‘‘ওরা দুঃস্থ বলে আমরা সবাই মিলে চাঁদা তুলে বুধবার হাসপাতালে গিয়ে ওই শিশুর চিকিৎসার জন্য তার মাকে দিয়ে এসেছি। তখনও জানতে পারিনি এই নির্যাতন হয়েছে।’’ ওই শিশুটিতে দেখতে ইচ্ছে করছে অনেকেরই। রিঙ্কি বলেন, ‘‘কত কষ্ট পাচ্ছে মেয়েটা। তবে কলকাতায় দেখতে যেতে পারব না। তবে ফিরলে দেখতে যাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন