ফরজানার বাড়িতে নেপাল

পেটে ব্যথার চিকিৎসা করাতে গিয়ে হাত কেটে বাদ দিতে হয়েছিল কিশোরী ফরজানা নাজের। অভিযোগ উঠেছিল সাঁতুড়ির ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার গাফিলতির।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সাঁতুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৪০
Share:

পেটে ব্যথার চিকিৎসা করাতে গিয়ে হাত কেটে বাদ দিতে হয়েছিল কিশোরী ফরজানা নাজের। অভিযোগ উঠেছিল সাঁতুড়ির ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার গাফিলতির। কিন্তু ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসার পরেও স্বাস্থ্য দফতরের কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ তুললেন জেলা কংগ্রেসের সভাপতি নেপাল মাহাতো। সোমবার দুপুরে তিনি সাঁতুড়ির ভেটি গ্রামে ফরজানাদের বাড়িতে যান।

Advertisement

সম্প্রতি কোটশিলায় দলীয় সভায় যোগ দিতে এসে ফরজানার ঘটনাটি নিয়ে সরব হন কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অধীর চৌধুরী। সেই সময়ে তিনি ফরজানাদের বাড়ি গিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন নেপালবাবুকে। এ দিন ফরজানার বাবা আব্দুল সাদিকের সঙ্গে কথা বলার পরে নেপালবাবু বলেন, ‘‘সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার বেহাল দশা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা এই ঘটনাতেই স্পষ্ট।’’ ওই কিশোরীর অভিভাবকেরা আইনের দ্বারস্থ হলে দলগত ভাবে তাঁদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাঘমুণ্ডির বিধায়ক নেপালবাবু।

আব্দুল সাদিকও এ দিন অভিযোগ করেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিলেও এখনও কোনও পদক্ষেপ করেনি স্বাস্থ্য দফতর। তিনি বলেন, ‘‘ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনও কিছুই হয়নি।’’ প্রয়োজনে তাঁরা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে জানান তিনি। তবে পদক্ষেপ না করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিএমওএইচ অনিলকুমার দত্ত। তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন তাঁরা।

Advertisement

গত ৩০ জানুয়ারি পেটে ব্যাথা নিয়ে সাঁতুড়ির মুরাডি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েছিল স্থানীয় হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ফরজানা নাজ। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এক নার্স তার দু’হাতে দু’টি ইঞ্জেকশন দেন। তার মধ্যে একটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল ওই কিশোরীর বাম হাতের শিরায়।

বাড়ি ফেরার পরে ফরজানার বাম হাতে যন্ত্রণা শুরু হয়। হাত নীল হয়ে যেতে থাকে। তার পরে আব্দুল সাদিক মেয়েকে নিয়ে কলকাতা, মুম্বই, চেন্নাই— সর্বত্র ঘুরেছেন। কিন্তু লাভ হয়নি। চিকিৎসকেরা জানান, হাতটিতে গ্যাংগ্রিন হয়ে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত, ৬ ফেব্রুয়ারি ওই কিশোরীর বাম হাত কেটে বাদ দিতে হয়।

জেলায় ফিরে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিক্ষোভ দেখান ফরজানার পরিজন এবং পড়শিরা। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ইঞ্জেকশন দেওয়ার সময়েই গাফিলতি হয় বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।

তবে নেপালবাবু এবং ফরজানার বাবার এ দিনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুরুলিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘মুরাডিতে সাঁতুড়ি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ওই ঘটনা সামনে আসার পরেই প্রাথমিক তদন্ত করে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে। সেখান থেকে আরও কয়েকটি বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছে। সেগুলি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে বিশদ রিপোর্ট রাজ্যে পাঠানো হচ্ছে।” ওই কিশোরীর পরিবারের ক্ষতিপূরণের আর্জি ইতিমধ্যেই রাজ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। সিএমওএইচ বলেন, ‘‘প্রয়োজনে ওই কিশোরীর কৃত্রিম হাত লাগানোর ব্যবস্থা স্বাস্থ্য দফতর করবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন