চ্যাপলিন ৮০০, হাজারে হনুমান

শিব-সহ কালীর দর ২০০০ টাকা! আর শুধু শিব বা কালী ১০০০ টাকা! হাজারে হনুমান! নাহ, এ কুমোরটুলির প্রতিমা শিল্পীর রেট নয় বা বড় বাজারের কোনও মূর্তি বিক্রির দোকানের পাইকারি দরও নয়। এ দরদাম চুক্তির ভিত্তিতে তিন থেকে চার ঘন্টা কোনও দেবদেবী, মহাপুরুষ সেজে থাকার জন্য।

Advertisement

অনির্বাণ সেন

সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৩৮
Share:

পুজো মণ্ডপে ভূত সেজেছেন সংস্থার সদস্যেরা। —নিজস্ব চিত্র

শিব-সহ কালীর দর ২০০০ টাকা! আর শুধু শিব বা কালী ১০০০ টাকা! হাজারে হনুমান!

Advertisement

নাহ, এ কুমোরটুলির প্রতিমা শিল্পীর রেট নয় বা বড় বাজারের কোনও মূর্তি বিক্রির দোকানের পাইকারি দরও নয়। এ দরদাম চুক্তির ভিত্তিতে তিন থেকে চার ঘন্টা কোনও দেবদেবী, মহাপুরুষ সেজে থাকার জন্য। এখানেই শেষ নয়, রামকৃষ্ণ বাবা লোকনাথ ৬০০ টাকা, চ্যাপলিন ৮০০ টাকা, গোপাল ভাঁড় ৩০০ টাকা— তালিকা দীর্ঘ। শিল্পী প্রতি সেজে থাকার জন্য এমন দর নিচ্ছেন জেলারই কয়েকজন যুবক যুবতী। গত ১৪ বছর ধরে তাঁরা এই কাজই করে আসছেন। সোমবার ওঁদের দেখা মিলল সাঁইথিয়ার ইয়ংস্টার ক্লাবের কালীপুজোয়।

সকাল থেকেই মুখে মুখে ছড়িয়েছিল খবরটা। দুপুর দুপুর ভিড়। ‘জীবন্ত স্ট্যাচু’ দেখতে পড়শি গাঁ থেকেও মানুষ যেন হামলে পড়েছেন ইয়ংস্টার ক্লাবের মণ্ডপে।

Advertisement

জানা গেল, দুবরাজপুর থানার বক্রেশ্বর পঞ্চায়েতের তাঁতিপাড়া গ্রামের তাপস বাউড়ি, রবীন্দ্র বাউড়ি, কাতু চৌধুরী, ক্লাস নাইনের ছাত্রী মাম্পি বাগদি, গৃহবধু তাপসী বাগদিদের মতো কয়েকজন মিলে তৈরি করেছে ‘মা রক্ষাকালী জীবন্ত স্ট্যাচু’ নামে সংস্থা। নানা অনুষ্ঠান বাড়ি, পুজো-পার্বণে তাঁরা ডাক পান। নকল সেজে দাঁড়িয়ে থাকেন। জেলা ছাড়িয়ে পড়শি জেলাতেও ডাক পরে কখনও সখনও ‘জীবন্ত স্ট্যাচু’ দেখানোর জন্য। জেলায় সিউড়ি, সাতকেঁদুলী, বক্রেশ্বর, সাঁইথিয়া ছাড়াও বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটি, বর্ধমানের উখড়া, দুর্গাপুর, আসানসোলের মতো শহরেও গিয়েছেন ওঁরা।

নিজেদের কাজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে কাতু চৌধুরী বলেন, ‘‘মূলত বিয়েবাড়ি, পৈতে বাড়ি বা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের মনোরঞ্জের জন্য ডাক পরে। তবে ইদানিং বিভিন্ন পুজো মণ্ডপেও ডাক পরছে। কখনও কোনও ক্লাবের বা প্রতিষ্ঠানের ডাকেও মানুষ ঝুলনেও সাজি।’’

কীভাবে দল তৈরি হল?

দলপতি কাতু চৌধুরীর কথায় ‘‘এক সময় আমাদের গ্রামের সুবোধ দাস বলে একজন এই কাজ করতেন। তাঁকে দেখেই আমরা এর প্রতি আকৃষ্ট হই। পরে সুবোধবাবুর কাজেই এ কাজ শিখি। সারা বছর আমাদের দিনমজুরি করে সংসার চললেও এ কাজ থেকেও আমাদের কিছু আয় হয়। চুক্তি অনুযায়ী আমাদের তিন থেকে চার ঘণ্টা স্ট্যাচু সেজে থাকতে হয়। ঘন্টা খানেক অন্তর মিনিট দশেকের বিশ্রাম নিই। সামনে দর্শকদের ভিড় জমে গেলে আর একটু দেরিও হয়।’’

নাগাড়ে স্ট্যাচু সেজে দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হয় বলে জানালেন দলের কেউ কেউ। সঙ্গে মশার কামড়, পোকার উপদ্রব তো আছেই।

গৃহবধু তাপসী বাগদি, মাম্পি বাগদির কথায়, ‘‘যতই কষ্ট হোক নড়াচড়া করা তো দূরের কথা আমরা চোখের পাতাও ফেলতে পারি না। টিভি সিরয়ালের যুগে এখন আর অনেক দর্শকই ঠাকুর দেবতা মহাপুরষদের স্ট্যাচু দেখতে চাইচ্ছে না। তাঁদের চাহিদা সিরিয়াল থেকে কিছু দেখানো হোক। জনতার চাহিদা মেটাতে শিব-কালীর সঙ্গে সিরিয়ালের চরিত্রও সাজতে হচ্ছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন