জটের শহর রামপুরহাট। দেখবে কে? ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে সিসিটিভি বসানো হয়েছিল। ঘটা করে চালু হয়েছিল ট্রাফিক বিধিও। তার পরেও যানজট থেকে মুক্তি পায়নি রামপুরহাট শহর। বিধি ভেঙে শহরের মূল রাস্তায় অবৈধ টোটোর অবাধ যাতায়াত থেকে যানবাহনের যত্রতত্র থেমে পড়া— তা নিয়ন্ত্রণ করারই কেউ নেই এই শহরে। উল্টে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা গড়তে যে ওসি-র পদে যাঁকে নিয়োগ করা হয়েছিল, সেই অফিসারকে তুলে নেওয়া হয়েছে বোলপুর শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে। যার নিট ফল— দুর্গাপুজোর এই ভরা মরসুমে কার্যত ভেঙে পড়েছে রামপুরহাটের ট্রাফিক ব্যবস্থা। তার জেরে দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে রামপুরহাটবাসীর।
ঘটনা হল, গত নভেম্বরে এই শহরে রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণে নতুন রোড ম্যাপ চালু করেন তৎকালীন এসডিপিও জোবি থমাস কে। সেই ম্যাপ অনুযায়ী, শহরের ভাঁড়শালা পাড়া মোড় থেকে সানঘাটাপাড়া মোড়, শ্রীফলা মোড় থেকে সুন্দিপুর মোড় পর্যন্ত সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ট্রাক, ট্রাক্টর, মোটর চালিত ভ্যান চলাচল নিষিদ্ধ হয়। পাশাপাশি ঠিক করে দেওয়া হয় শহরে যানবাহনের প্রবেশ ও বেরনোর পথও— রামপুরহাট ধূলাডাঙা রোড এবং দেশবন্ধু রোড দিয়ে শহরে যানবাহন প্রবেশ করবে এবং বিবেকানন্দ রোড বা ব্যাঙ্ক রোড দিয়ে যানবাহন বেরিয়ে যাবে। এমনকী, রামপুরহাটের ডাকবাংলা পাড়া মোড় থেকে পাঁচমাথা মোড় পর্যন্ত গাড়ি পার্কিংয়েও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এ ছাড়াও বৈধতা না থাকলেও শহরে চলা হাজারেরও বেশি টোটোর চলাচলের উপরেও বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রশাসন। টোটোর জন্য শহরে যানজট হচ্ছে মেনে নিয়ে দুই সিফটে টোটোগুলি চলার কথাও বলা হয়।
নতুন ট্রাফিক রোড ম্যাপ ঠিক ভাবে মানা হচ্ছে কিনা, তা দেখতে এসডিপিও অফিসে নতুন ট্রাফিক কন্ট্রোল ইউনিট খোলার কথাও বলা হয়। সেখানে ট্রাফিক ওসি, দু’জন অফিসার এবং ১০ জন ফোর্স থাকবে ঠিক হয়েছিল। পাশাপাশি ৭০-৮০ জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নিযুক্ত করা হবেও জানানো হয়। ওই বিধি নিষেধ চালুর পাশাপাশি গত মার্চে শহরের বিভিন্ন মোড়ে ২৬টি সিসিটিভি বসানো হয়। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই দেখা যাচ্ছে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা যে কে সেই। প্রায় প্রতি দিনই জাতীয় সড়কের উপর রামপুরহাট হাসপাতাল পাড়া থেকে মনসুবা মোড় পর্যন্ত যানজটে সবাইকে নাকাল হতে হচ্ছে। হাসপাতাল পাড়া এলাকায় জাতীয় সড়কের উপর টোটো, যন্ত্র চালিত ভ্যান থেকে ভাড়া নিয়ে যাত্রী বহনকারী অন্যান্য গাড়ি। কোথাও কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। ট্রাফিক বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে হাসপাতালের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকছে টোটো ও যন্ত্র চালিত ভ্যান।
এক ছবি শহরের ভিতরেও। টোটো, মোটর চালিত ভ্যান শহরের ব্যস্ততম রাস্তা দেশবন্ধু রোড, ব্যাঙ্ক রোড, ধূলাডাঙা রোড, মহাজনপট্টি রোড, কামারপট্টি থেকে ভাঁড়শালা মোড় রোডে যখন তখন ঢুকে যানজট তৈরি করছে। তার উপর পাঁচমাথা মোড়ে ওয়াচটাওয়ার তৈরির জন্য খোঁড়া গর্ত যন্ত্রণা আরও বাড়িয়েছে। কামারপট্টি থেকে পাঁচমাথা পর্যন্ত লকিং ব্রিক্স বসানোর কাজও এখনও শেষ হয়নি। ফলে পুজোর বাজারে যেখানে সেখানে সাইকেল, রিকশা, মোটরবাইক দাঁড়িয়ে আরও জট পাকাচ্ছে। মহাজনপট্টি মোড়, কামারপট্টি মোড়, ব্যাঙ্ক রোড, দেশবন্ধু রোডে যান নিয়ন্ত্রণের জন্য সিভিক ভলান্টিয়ারদের দেখা মেলে না। ফলে ওই সব জায়গা দিয়ে ‘ওয়ানওয়ে’ বিধি ভেঙে ভারী যানবাহন বা টোটো অবাধেই চলাচল করছে। আর যানজটে নাকাল হচ্ছেন এই শহরের মানুষ।
এ দিকে, ওসি (ট্রাফিক) রণজিত বাউড়িকে সেপ্টেম্বরে তুলে নেওয়ায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শহরে আর কোনও আধিকারিকও দায়িত্বে নেই। অবস্থা দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বাসিন্দারা। এক প্রবীণ বাসিন্দার কথায়, ‘‘শান্ত সুনিবিড় এক শহর ছিল রামপুরহাট। সেখান থেকে এখন যানজটের শহরে পরিণত হয়েছে। শহরের রাস্তায় যে একটু হাঁটতে বেরোবো, পার্কে যাওয়া ছাড়া তার গতি নেই। বেপরোয়া গাড়ি চাপা পড়ে বেঘোরে মরতে হবে।’’ জেলার এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে আগাগোড়া ট্রাফিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজার দাবি তুলেছেন শহরবাসী। যাঁর আমলে ওই তথাকথিত ট্রাফিক বিধি চালু হয়েছিল, সেই জোবি থমাস বর্তমানে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার কথা ছে শুনে তিনি শীঘ্রই রামপুরহাটে একজন নতুন ওসি (ট্রাফিক) নিয়োগ করার আশ্বাস দিয়েছেন। পাশাপাশি শহরে ট্রাফিক বিধি মেনে চলার জন্য থানার আইসি-কে অবিলম্বে বৈঠকে বসতে বলবেন বলে জানিয়েছেন এসডিও সুপ্রিয় দাস।