রেলগাড়ি এত বড়! তাজ্জব বাদলিরা

তারা বলে ওঠে, “রেলগাড়ির ছবি দেখেছি। শুনেছি কু ঝিক ঝিক শব্দে সাপের মতো এঁকে বেঁকে চলে। কিন্তু, রেলগাড়ি যে এত বড়, দেখে হাঁ হয়ে গিয়েছি।’’ 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:১০
Share:

উৎসাহী: মেলার স্টলে বই দেখছে ছাত্রীরা। —নিজস্ব চিত্র।

এত দিন ছবিতেই রেলগাড়ি দেখেছে ওরা। বাঁকুড়া স্টেশনে দাঁড়িয়ে তাই প্রথমবার রেলগাড়ি দেখে বিস্ময় ঝরে পড়ছিল রানিবাঁধের বেথুয়ালা গভর্নমেন্ট আশ্রম স্কুলের স্বর্ণলতা হেমব্রম, বাদলি মান্ডিদের চোখে। তারা বলে ওঠে, “রেলগাড়ির ছবি দেখেছি। শুনেছি কু ঝিক ঝিক শব্দে সাপের মতো এঁকে বেঁকে চলে। কিন্তু, রেলগাড়ি যে এত বড়, দেখে হাঁ হয়ে গিয়েছি।’’

Advertisement

বিস্ময়ের শেষ এখানেই নয়। এলাকায় গ্রামীণ মেলা দেখতে অভ্যস্ত ছাত্রীরা শনিবার থরে থরে নানা বইয়ে সাজানো বাঁকুড়া বইমেলা দেখেও তাজ্জব হয়। পছন্দ করে তারা কিছু বইও কেনে।

বেথুয়ালা গভর্নমেন্ট আশ্রম স্কুল নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে গাড়ি ভাড়া করে নবম ও দশম শ্রেণির ৩২ জন ছাত্রীকে নিয়ে এ দিন বাঁকুড়া বইমেলায় এসেছিল। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বর্ণালী চট্টোপাধ্যায়ের কাছে ছাত্রীরা আবদার করেছিল, রেলগাড়ি দেখার। বর্ণালীদেবী বাঁকুড়া স্টেশনে গিয়ে আরপিএফের অনুমতি নিয়ে ছাত্রীদের রেলগাড়ি দেখানোর ব্যবস্থা করেন।

Advertisement

সেখান থেকে দল বেঁধে স্কুলের পোশাকে বাঁকুড়া বইমেলায় যায় ছাত্রীরা। বাদলি ও স্বর্ণলতারা রূপকথার বই কেনে। তাদের সহপাঠী উজ্জ্বলা সোরেন বলে, “ক্যুইজের বই পড়লে সাধারণ জ্ঞান বাড়ে। অনেক তথ্য পাওয়া যায়। তাই ক্যুইজের বই কিনেছি।’’

এক সময়কার মাওবাদী উপদ্রুত রানিবাঁধের ছবি অনেকটাই বদলেছে। বহু প্রত্যন্ত এলাকাতেও উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। তবে দূরত্বের কারণে জেলা সদরে এখনও যাওয়া হয়নি বহু মানুষের। এই দূরত্ব ঘোচাতেই বেথুয়ালা গভর্নমেন্ট আশ্রম স্কুল উদ্যোগী হয়েছে।

প্রধান শিক্ষিকা জানান, ইতিমধ্যে তাঁরা ছাত্রীদের নিয়ে টাটানগরে ঘুরে এসেছে। বড় শহর ও সেখানকার জীবনযাত্রা দেখে অভিভূত হয় ছাত্রীরা। তিনি বলেন, “প্রথমবার শপিংমলে ঢুকে কার্ড স্যোয়াইপ করে কী ভাবে কেনাকাটা চলে, সেই অভিজ্ঞতাও টাটানগরে গিয়ে ছাত্রীদের হয়েছিল। আমরা চাই প্রত্যন্ত এলাকায় বাস হলেও তারা যেন বাইরের দুনিয়ার সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করুক। সে জন্যই ছাত্রীদের নিয়ে ঘুরে বেড়াই।”

বইমেলা দেখে ফেরার সময় দশম শ্রেণির ছাত্রী মাধবীলতা মণ্ডল, অনিতা হাঁসদা, শিখা সিং বলে, “গ্রামের মেলা আমরা দেখেছি। কিন্তু এই মেলা একেবারেই আলাদা। এত বইয়ের সম্ভার দেখে আমরা অবাক। আমাদের ওখানেও যদি এমন মেলা হত, কী যে ভাল হত!’’ সমাজকর্মী সনগিরি হেমব্রম বলেন, “ওই স্কুলের উদ্যোগ খুবই ভাল। বাইরের জগতের সঙ্গে আদিবাসী ছেলেমেয়েরা যত মেশার সুযোগ পাবে, ততই ওদের মানসিক বিকাশ হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন