গোলমাল রঘুনাথপুরে

বোমাবাজি, বোর্ডই গঠন করা হল না 

পঞ্চায়েত নির্বাচনের গোলমাল বজায় থাকল বোর্ড গঠনেও। রঘুনাথপুরের দু’টি পঞ্চায়েতে সোমবার বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বিজেপির জয়ী সদস্য। ইটের ঘায়ে হাত ভেঙেছে পুলিশেরও। 

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৮ ০১:০১
Share:

রঘুনাথপুর ১ ব্লকের চোরপাহাড়ি গ্রামে পঞ্চায়েত এলাকায় বোমাবাজি। নিজস্ব চিত্র

পঞ্চায়েত নির্বাচনের গোলমাল বজায় থাকল বোর্ড গঠনেও। রঘুনাথপুরের দু’টি পঞ্চায়েতে সোমবার বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বিজেপির জয়ী সদস্য। ইটের ঘায়ে হাত ভেঙেছে পুলিশেরও।

Advertisement

পঞ্চায়েত ভোটে রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকায় সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছিল শাসকদলের বিরুদ্ধে। ফল বেরেনোর পরে দেখা যায়, নিতুড়িয়া ও কাশীপুর বাদ দিয়ে বাকি জায়গায় কার্যত বিপর্যয় হয়েছে তৃণমূলের। বহু পঞ্চায়েতের দখল হারায় শাসকদল। সোমবার মহকুমার ৫টি ব্লকের ১৫টি পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হবে বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রশাসন। অশান্তি হতে পারে বলে আগে থেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বিরোধীরা।

কিন্তু সকাল থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল রঘুনাথপুর ১ ব্লকের চোরপাহাড়ি পঞ্চায়েতে। সেখানে ১১টি আসনের মধ্যে ৬টিতে জিতেছিল তৃণমূল। তবে প্রধানের আসনটি তফসিলি জনজাতির জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। ওই পঞ্চায়েতে তৃণমূলের কোনও তফসিলি জনজাতির প্রার্থী জেতেননি। বিজেপির দু’জন তফসিলি জাতির জয়ী সদস্য রয়েছেন।

Advertisement

বিজেপির দাবি, তাঁদের সদস্যেরা বোর্ড গঠনে যোগ দিলে প্রধান বিজেপিরই হবেন এটা এক প্রকার বুঝে গিয়েছিল তৃণমূল। অভিযোগ, সেটা রুখতে এ দিন সকাল থেকে ‘তৃণমূল-আশ্রিত’ সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা জড়ো হয় পঞ্চায়েত অফিসের অদূরে। ১০টার মধ্যেই তৃণমূলের সদস্যেরা পঞ্চায়েতে ঢুকে পড়েছিলেন।

বিজেপির অভিযোগ, তাঁদের সদস্যদের পঞ্চায়েতে যাওয়া আটকাতে গ্রামের রাস্তায় বোমাবাজি শুরু হয়। এ দিন সাড়ে ১১টা নাগাদ গ্রামে ঢোকার সময়েই পর পর বোমা ফাটার শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। পঞ্চায়েত অফিসের সামনে যাওয়ার পরেই দু’টি বোমা ফাটায় দুষ্কৃতীরা। দিনের শেষে বিজেপির সদস্যেরা পঞ্চায়েতে ঢুকতে পারেননি।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সংরক্ষিত পদে কোনও দাবিদার না থাকায় এ দিন ওই পঞ্চায়েতের প্রধান নির্বাচন হয়নি।

চোরপাহাড়ির পাশের পঞ্চায়েত খাজুরা। বিজেপির অভিযোগ, ‘তৃণমূল-আশ্রিত’ দুষ্কৃতীরা বেলা ১২টা নাগাদ সেখানেও গুলি ও বোমা নিয়ে চ়ড়াও হয়। ওই পঞ্চায়েতে একটিও আসনে জিততে পারেনি শাসকদল। ১২টি আসনের মধ্যে ৯টিতে জিতেছে বিজেপি। অন্য ৩টি আসন পেয়েছে সিপিএম। বিজেপির অভিযোগ, ওই পঞ্চায়েতে তাঁদের বোর্ড গঠন আটকাতেই সন্ত্রাস চালানো হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন খাজুরা গ্রামে তাঁদের জয়ী সদস্য আদিত্য মণ্ডল। তাঁর ডান পায়ের উপরের দিকে গুলি লেগেছে।

রঘুনাথপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে বিকেলে ভর্তি করানো হয় আদিত্যকে। সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘সকাল থেকেই বোমাবাজি শুরু হয়েছিল। বাইরে কী হচ্ছে দেখতে বাড়ি থেকে বেরোতেই পেছন থেকে কেউ গুলি করে।’’ ঘটনার পরে দৃশ্যতই বিধ্বস্ত আদিত্য। তিনি বলছেন, ‘‘ছেলেপুলে নিয়ে সংসার করি। এর পরে আর রাজনীতি করব কি না ভেবে দেখতে হবে।’’

গ্রাম সূত্রের খবর, এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ জনা তিরিশ-চল্লিশ সশস্ত্র দুস্কৃতী খাজুরা গ্রামে ঢুকেছিল। নির্বিচারে বোমাবাজি চলে। ভয়ে গ্রামের বাসিন্দারা বাড়িতে ঢুকে পড়েছিলেন। বিজেপির অভিযোগ, খাজুরা গ্রামের মধ্যে পঞ্চায়েত অফিসটাই দুষ্কৃতীদের দখলে চলে যাওয়ায় সাহস করে ঢুকতে পারেনি বিরোধী সদস্যেরা। খাজুরাতে এ দিন বোর্ড গঠনই হয়নি।

বিডিও (রঘুনাথপুর ১) অনির্বাণ মণ্ডল শুধু বলেন, ‘‘খাজুরা পঞ্চায়েতে সদস্যেরা উপস্থিত না হওয়ায় সেখানে বোর্ড গঠন হয়নি।” বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রঘুনাথপুরে গণতন্ত্রকে প্রহসনে পরিণত করেছে তৃণমূল। পঞ্চায়েতে আমাদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে বলেই সন্ত্রাস চালিয়ে সেখানে বোর্ডই গঠন করতে দেয়নি।’’ তবে সন্ত্রাসের অভিযোগ মানতে চাননি রঘুনাথপুরের তৃণমূল বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউড়ি। তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে বিজেপি। খাজুরাতে যেটা ঘটেছে সেটা বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্বের ফল।’’

অন্য দিকে আবার বিজেপির কর্মীদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে লাঠি দিয়ে মেরে সাঁতুড়ি থানার ওসি রানা ভকতের হাত ভেঙে দেওয়া এবং ইট ছুড়ে ওই থানারই এএসআই নারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার। মুরাড্ডি পঞ্চায়েতে এ বার ৫টি করে আসনে জিতেছে তৃণমূল ও বিজেপি। এ দিন বোর্ড গঠনে বিজেপির এক সদস্য তৃণমূলকে সমর্থন করেন। পঞ্চায়েতে বোর্ড গড়তে সমর্থ হয় শাসকদল। অভিযোগ, তার পরেই পঞ্চায়েত অফিসে ঢুকে পড়ে বিজেপির একদল কর্মী সমর্থক। পুলিশ বাধা দিতে গেলে লাঠি নিয়ে হামলা শুরু হয়।

রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মঙ্গলদা মৌতোড় পঞ্চায়েতে বিজেপির কর্মীরা বোর্ড গঠনের পরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে বলে অভিযোগ। কম্পিউটার, টেবিল, চেয়ার ভাঙা হয়েছে। বিডিও (রঘুনাথপুর ২) সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মঙ্গলদা মৌতোড় পঞ্চায়েতে বহিরাগত লোকজন ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। পঞ্চায়েতের কর্মীদের মারধর করেছে। ঘটনাটি পুলিশকে জানানো হয়েছে।”

তবে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি। তাদের পাল্টা দাবি, রঘুনাথপুর ২ ব্লকের চেলিয়ামা পঞ্চায়েতে বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও ‘তৃণমূল-আশ্রিত’ দুস্কৃতীরা পঞ্চায়েতের ভিতরে ঢুকে বেশির ভাগ সদস্যকে বের করে দিয়। পরে অবৈধ ভাবে চেলিয়ামাতে বোর্ড গঠন হয়েছে। বিজেপির জেলা সম্পাদক কমলাকান্ত হাঁসদা বলেন, ‘‘আমাদের জেতা পঞ্চায়েতগুলি জোর করে দুষ্কৃতীদের মদতে দখল করেছে তৃণমূল। তারই পাল্টা কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা জনরোষে ঘটেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন