আয় বাড়াতে পর্যটনে জোর পঞ্চায়েত সমিতির

এলাকায় শিল্প নেই। পুরসভা হিসাবে গড়ে উঠতে এখনও অনেক পথ বাকি। তবে এলাকায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা বেশ কয়েকটি জায়গা রয়েছে।

Advertisement

সমীর দত্ত

মানবাজার শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৬ ০০:০০
Share:

মিলেমিশে। দোলাডাঙার আকর্ষণ প্রকৃতির এই সৌন্দর্যই। এ বার পরিকাঠামোয় নজর দিচ্ছে প্রশাসন। —নিজস্ব চিত্র

এলাকায় শিল্প নেই। পুরসভা হিসাবে গড়ে উঠতে এখনও অনেক পথ বাকি। তবে এলাকায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা বেশ কয়েকটি জায়গা রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পরিকাঠামোর মান বাড়াতে পারলে সেই সব জায়গাই অনায়াসে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে। এই সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে মানবাজার ১ পঞ্চায়েত সমিতি পর্যটন ভিত্তিক বিকাশে একগুচ্ছ পরিকল্পনা হাতে নিল।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবর পুরুলিয়ায় পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের কথা বলেন। ইতিমধ্যে এই জেলার পর্যটনের বিকাশে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আরও কিছু প্রকল্পের কাজ চলছে। এরই মধ্যে মানবাজার ১ পঞ্চায়েত সমিতি নিজেদের মতো করে এলাকার পর্যটন শিল্পের বিকাশের চেষ্টায় নেমে পড়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কবিতা মাহাতো বলেন, ‘‘আমাদের ব্লকে এমন কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে পরিকাঠামোগত অল্পবিস্তর কাজ করলে পর্যটকদের আরও আকর্ষিত করা যায়। সে ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত সমিতি থেকে আর্থিক বরাদ্দ করা হবে।’’

সপ্তাহান্তের ছুটিতে অনেকেই এখন পুরুলিয়ায় ছুটে আসছেন। অযোধ্যাপাহাড়, জয়চণ্ডী, গড়পঞ্চকোট, বড়ন্তির মতো পুরুলিয়ার বেশ কয়েকটি পর্যটনকেন্দ্রে এখন বছরভর শনি-রবি পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই রয়েছে। সেই তালিকায় এ বার মানবাজার ১ ব্লকের কয়েকটি জায়গাকেও তুলে ধরতে চাইছে ব্লক প্রশাসন।

Advertisement

বিডিও (মানবাজার ১) সত্যজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘‘আজকাল দুই অথবা তিনদিনের প্যাকেজ ট্যুর বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেই ভাবনাকে মাথায় রেখে আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে এমন কয়েকটি স্থান আমরা বাছাই করেছি।’’ তিনি জানান, বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুর জলাধারের পশ্চিমে মানবাজার থানার দোলাডাঙা পর্যটনকেন্দ্রের বনভোজনের জন্য কম খ্যাতি নেই। পর্যটন দফতর থেকে দোলাডাঙাকে আরও একটু সাজিয়ে তুলতে ইতিমধ্যে ব্লক প্রশাসনকে ১৩ লক্ষ ৯১ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। সেখানে এ বার তাঁবুতে রাত্রিবাস এবং জলাধারে বোটিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সিঙ্গল এবং ডর্মেটরি সুবিধাযুক্ত তাঁবু থাকবে। এ জন্য বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কথাবার্তা চলছে বলে বিডিও জানিয়েছেন। দোলাডাঙাতেই পরিকাঠামোগত উন্নতির জন্য অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর থেকে আরও পাচ লক্ষ টাকা আসতে চলেছে। এ ছাড়া বাড়তি খরচের জন্য পঞ্চায়েত সমিতি আর্থিক বরাদ্দ করবে।

দোলাডাঙার একটি আকর্ষণ যদি গাছগাছালির সবুজ বাহার হয়, তবে অন্য আকর্ষণ হল এখানকার নীল জলরাশি। মুকুটমণিপুরে বেড়াতে এসে অনেকেই নৌকোয় চেপে দোলাডাঙা ঘুরে যান। ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্য সরকার এই বনভোজন কেন্দ্র চালু করেন। সেই সময় দু’টি স্পিড বোট চালু করা হয়। কচিকাঁচাদের জন্য বসানো হয় দোলনা, বসে খাওয়াদাওয়ার তৈরি করা হয় বিশাল পাকা বারান্দা, রান্নার শেড প্রভৃতি। কিন্তু দীর্ঘদিন দেখভালের অভাবে সে সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেই ছবি বদলে নতুন করে পর্যটকদের ঠিকানা হয়ে উঠতে চলেছে দোলাডাঙা।

কংসাবতী ও কুমারী নদীকে ঘিরে আরও কয়েকটি মনোরম জায়গা এই ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে। সে সব জায়গারও পর্যটন সম্ভাবনার বিকাশ ঘটাতে চায় ব্লক প্রশাসন। মানবাজার-বরাবাজার রাস্তায় চেপুয়া গ্রামে ঢোকার আগে কুমারী নদী অনেকটা কাস্তের মতো বাঁক নিয়েছে। এখানে নদী বেশ চওড়া। বিশাল বালুচর। একপ্রান্তে নদী। অন্য প্রান্তে সারি দেওয়া শালবন। শীত গ্রীষ্মে যে কোন সময় কুমারী নদী তীরবর্তী এই জায়গা অসাধারণ সুন্দর লাগে।

এ ছাড়া মানবাজার ও বোরো থানার সীমানায় দোলদেড়িয়া গ্রাম লাগোয়া নদীর চড়ায় অনেকে পিকনিক করতে আসেন। এক দশক আগে বিসরি পঞ্চায়েত জায়গাটিকে পিকনিক করার উপযোগী করে তোলার কাজ শুরু করেছিলেন। ওই দুই জায়গাকেই আরও আকর্ষণীয় করতে চায় প্রশাসন।

কংসাবতী নদীর তীর বরাবর প্রাকৃতিক সম্ভারে ভরা এ রকম আরও কয়েকটি স্থান রয়েছে। মানবাজার ও পুঞ্চা থানার সীমানায় শালীদহ নামে একটি মনোরম স্থান রয়েছে। বিডিও বলেন, ‘‘মূল সড়ক থেকে নদীর তীর পর্যন্ত রাস্তা ভাঙাচোরা। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে এই রাস্তা সংস্কার করা হবে। এ ছাড়া ভ্রমণার্থীদের বসার জন্য চারদিক খোলা পাকা শেড নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে।’’

যাঁরা জঙ্গল, পাহাড় ভালবাসেন, তাঁদের হয়তো ঝাড়বাগদার জঙ্গল মনে লাগতে পারে। মানবাজার থেকে তিন কিলোমিটার দূরে এই জঙ্গল। তিন দশক আগে ঝাড়বাগদায় ন্যাড়া পাহাড়কে সবুজায়ন করার লক্ষ্যে একটি সংস্থা উদ্যোগী হয়। গড়ে ওঠে ঝাড়বাগদার জঙ্গল। তা পাশের জঙ্গলের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে থাকা এই জঙ্গলে বহু জীবজন্তুও রয়েছে। রয়েছে আম, হরিতকি, আমলকি, বহেড়া, নিম, জাম, কুসুম— এ রকম প্রচুর গাছ রয়েছে। জঙ্গলের সবাবুল গাছের লোভে মাঝেমধ্যে হাতির দলও ঢুকে পড়ে।

এলাকায় প্রচুর পুরাকীর্তির সম্ভারও রয়েছে। জৈন ধর্মের নিদর্শন এখানে-ওখানে ছড়িয়ে রয়েছে। যারা ইতিহাসে উৎসাহী, কংসাবতী নদীর তীরে বুধপুর এবং টুসামা গ্রামের পুরাকীর্তির সম্ভারও তাদের ভাল লাগবে। পঞ্চায়েত সমিতির কর্তাদের দাবি, ‘‘পর্যটকদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেলে শুধু পঞ্চায়েত সমিতিই নয়, এলাকার লজ-হোটেল মালিক, ছোট গাড়ির ব্যবসাদার, হস্তশিল্প নির্মাণকারী স্বনির্ভর দলের সদস্য সবাই আর্থিক দিক দিয়ে
উপকৃত হবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন