কী অন্যায় করেছি, প্রশ্ন রোগীদের

চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে কী ধরনের অসুবিধা হয়েছে, তা কয়েকটি উদাহরণেই স্পষ্ট।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৯ ০২:১৭
Share:

আর্ত: অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে অপেক্ষা। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতার এনআরএস হাসপাতাল-কাণ্ডের আঁচ রাজ্যের অন্য জায়গার পাশাপাশি পড়ল সিউড়ি জেলা হাসপাতালেও। শহরের অনেক চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বারেও ঝুলল তালা। সমস্যায় পড়লেন অগণিত রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। তাঁদের অনেকে প্রশ্ন তুললেন— ‘‘আমরা কী অন্যায় করেছি?’’

Advertisement

সোমবার রাতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ঘিরে রোগীর পরিবারের সঙ্গে চিকিৎসকদের সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দুই ইন্টার্ন। এর পরেই চিকিৎসক বিক্ষোভে মঙ্গলবার থেকে কার্যত স্তব্ধ হয় রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবা। ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার রাজ্য জুড়ে ১২ ঘণ্টার বহির্বিভাগ পরিষেবা বন্ধের ডাক দিয়েছিল চিকিৎসকদের যৌথ মঞ্চ। সেই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে এ দিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে পরিষেবা বন্ধ রাখলেন সিউড়ি জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও। তবে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে পরিষেবা মিলেছে।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, অন্য দিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রায় সাত-আটশো রোগী পরিষেবা পান। চিকিৎসার জন্যে নিতে সকাল থেকে ভিড় জমেছিল বুধবারও। অভিযোগ, ‘আউট-পেশেন্ট’দের জন্য টিকিটঘর খোলা থাকলেও কোনও পরিষেবা বহির্বিভাগে মেলেনি। রোগীদের কয়েক জন জানান, তাঁদের বলা হয়— বুধবারের জন্যে নয়, বৃহস্পতিবারের টিকিট চাইলে নিতে পারেন। এ দিন বন্ধ ছিল শিশুদের টিকাকরণ ইউনিটও।

Advertisement

কর্মবিরতিতে থাকা চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, প্রায় প্রতি দিনই রাজ্যের কোথাও না কোথাও রোগীর আত্মীয়-পরিজনের হাতে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। এই রেওয়াজ বন্ধ না হলে পরিষেবা দেওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘এনআরএসের ঘটনায় দোষীদের কঠোরতম শাস্তি না হলে এই প্রবণতা কমবে না। তাই সিদ্ধান্তে সমর্থন করেছি। প্রতিবাদ না করলে চিকিৎসকদের গুরুত্ব কেউ বুঝবেন না।’’ এ নিয়ে রোগীদের একাংশের মন্তব্য, ‘‘দোষীদের অবশ্যই শাস্তি হোক। কিন্তু যাঁদের সঙ্গে ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই, তাঁদের কেন ভূগতে হবে?’’

চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে কী ধরনের অসুবিধা হয়েছে, তা কয়েকটি উদাহরণেই স্পষ্ট।

নিজের ৫২ দিনের শিশুকে কোলে নিয়ে পাথরচাপুড়ি থেকে সিউড়ি জেলা হাসপাতালের বহির্বিভাগে এসেছিলেন লতিকা কোনাই দাস। ধূম জ্বর শিশুটির। ঘন্টাখানেক অপেক্ষার পরে তিনি জানতে পারেন, হাসপাতালে বহির্বিভাগে পরিষেবা মিলবে না। লতিকার প্রশ্ন, ‘‘এখন কোথায় যাই বলতে পারেন?’’ বুকে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে কুখুডিহি গ্রাম থেকে এ দিন সিউড়ি হাসপাতালে এসেছিলেন প্রৌঢ়া আমোদি ডোম। হাসপাতালে এমন পরিস্থিতি দেখে কোথায় যাবেন ঠিক করতে পারছিলেন না। ভাঙা হাতের এক্স-রে প্লেট নিয়ে সিউড়ি ২ ব্লকের কোমা থেকে হাসপাতালে এসে অসহায় হয়ে ঘুরতে হয় বৃদ্ধ বাসুদেব দাসকে। রাজনগর থেকে হার্নিয়ার ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন মধুসূদন সৌ। হাসপাতালের বহির্বিভাগে পরিষেবা বন্ধ দেখে বৃদ্ধ মধুসূদনবাবুকে নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে যেতে বাধ্য হলেন তাঁর পরিজনেরা। এমন উদাহরণ এ দিন বারবার দেখা গিয়েছে।

জেলা হাসপাতালের সুপার শোভন দে অবশ্য বলছেন, ‘‘বহির্বিভাগে পরিষেবা বন্ধ থাকায় কিছু সমস্যা হয়েছে ঠিক। তবে মূমুর্ষু রোগী একেবারে চিকিৎসা পরিষেবা পাননি, তা বলা যাবে না। জরুরি বিভাগ ও অন্তর্বিভাগ চালু থাকায় ও রোগী ভর্তি বন্ধ না থাকায় তেমন রোগী হলে নিশ্চই পরিষেবা পেয়েছেন।’’ প্রায় একই বক্তব্য বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়িরও।

বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে বহির্বিভাগে চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ থাকলেও, জরুরি বিভাগে পরিষেবা মিলেছে। হাসপাতালের চিকিৎসক দীপ্তেন্দু দত্ত বলেন, ‘‘চিকিৎসক সংগঠনের কথামতো বহির্বিভাগ বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু রোগীরা যাতে পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হন, সে জন্যে জরুরি বিভাগে পরিষেবা মিলেছে।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন