Bishnupur

বাসুদেবপুর বনাঞ্চলে হাতি, পথে ভয়, ফাঁকা ক্লাস 

জঙ্গলে হাতি এসেছে। স্কুলে কমেছে হাজিরা।

Advertisement

শুভ্র মিত্র

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৩৩
Share:

খাঁ-খাঁ: পানশিউলি তফসিলি জুনিয়র হাইস্কুলের ক্লাসঘরে। নিজস্ব চিত্র

জঙ্গলে হাতি এসেছে। স্কুলে কমেছে হাজিরা।

Advertisement

বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বাসুদেবপুর জঙ্গল এলাকার মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে কিছু গ্রাম। তেমনই একটি পানশিউলি। গ্রামের একেবারে শেষ প্রান্তে তফসিলি জুনিয়র হাইস্কুল। প্রাথমিকের পাঠ শেষ করে আশপাশের এলাকার পড়ুয়ারা আসে সেখানে। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এখন ৭৪ জন পড়ুয়া রয়েছে। শনিবার স্কুলে এসেছিল ২৭ জন। সপ্তম শ্রেণির সেলিম শেখ এসেছিল ঘুটবনি থেকে। জিজ্ঞাসা করায় বলল, ‘‘বুনো হাতিদের খুব ভয় লাগে। বাসুদেবপুরের বন্ধুরা আসেনি আজ।’’

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক দেবাশিস দাস জানাচ্ছেন, তিরবঙ্ক, বাসুদেবপুর, ঘুঁটবন, লোটিহিড়ের মতো আশপাশের গ্রাম থেকেও ছাত্রছাত্রীরা পড়তে আসে। শনিবার বাসুদেবপুর ও তিরবঙ্কের এক জনও আসেনি। জঙ্গলের রাস্তা ধরে আসতে হয় তাদের। তা-ও সেই রাস্তা পাকা। লোটিহিড় গ্রাম থেকে স্কুলে আসতে জঙ্গলের মধ্যে মোরাম-পথে অনেক ঘুরপাক খেতে হয়। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, সারা বছরই লোটিহিড়ের পড়ুয়াদের হাজিরা কম থাকে।

Advertisement

পানশিউলির বাসিন্দা প্রদীপ লোহারের কথায়, ‘‘দু’বছর আগে এক দিন সকালে আমাদের গ্রামের বচন লোহারের প্রাণ গিয়েছিল হাতির হানায়। তার পরে কোন ভরসায় দূরের গ্রামের বাবা-মায়েরা ছেলেমেয়েদের জঙ্গলের পথে স্কুলে পাঠাবেন?’’ দলমার প্রায় তিরিশটি হাতি এখন যেখানে ঘাঁটি গেড়েছে, কোশিরবাগানের সেই জঙ্গল পানশিউলি গ্রাম থেকে দু’কিলোমিটার। একটু বেলায় সুনসান পিচ রাস্তা দিয়ে পানশিউলির অঙ্গনওয়াড়ির কর্মী অপর্ণা চক্রবর্তী বাসুদেবপুরের বাড়িতে ফিরছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘সকালেই বন দফতর মাইক নিয়ে হেঁকে গিয়েছে। কিন্তু কাজে না গেলে, বাচ্চাগুলো তো খাবার পাবে না। বনকর্মীরা জঙ্গলের রাস্তায় থাকলে ভরসা পাই।’’

শিক্ষকদের অনেকেও স্কুলে আসেন ভয়ে ভয়ে জঙ্গলপথে মোটরবাইক চালিয়ে। পানশিউলি তফসিলি জুনিয়র হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক দেবাশিসবাবু জানান, বন দফতরে তাঁরা অনেক বার মৌখিক আবেদন করেছেন। স্কুল শুরু আর ছুটির সময়ে এক-দেড় কিলোমিটার জঙ্গলপথে যদি বনকর্মীরা থাকেন, তা হলে পড়ুয়ার হাজিরা কিছুটা বাড়তে পারে বলে তাঁদের আশা। কিন্তু অসহায়তার কথা বলছে বন দফতরও। ডিএফও (বিষ্ণুপুর-পাঞ্চেত) নীলরতন পান্ডা জানান, এমনিতেই কর্মীর সংখ্যা কম। সারারাত তাঁরা এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের লোকজন নিয়ে গ্রাম ও ফসলভরা মাঠ পাহারা দেন। ডিএফও বলেন, ‘‘তাঁরা সাধ্যমতো করেন। আর কতক্ষণ আটকে রাখা যায়? তবে ব্যাপারটা মাথায় থাকল। পড়ুয়াদের জন্য কী করা যায় দেখছি।’’

সতর্ক হয়ে রয়েছেন তিরবঙ্ক গ্রামের পদ্ম মহাদণ্ড, খোকন মহাদণ্ড, লক্ষী মহাদণ্ডরা। তাঁরা বলেন, ‘‘হাতির ভয়ে জলদি আলু তুলে নিচ্ছি।’’ কোশির জঙ্গলে হাতিগুলি আপাতত বন দফতরের নজরে রয়েছে। এই দলেরই একটি শাবকের মৃত্যু হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার রেললাইনে। পাহারায় থাকা লোকজন জানাচ্ছেন, হাতিগুলি তার পর থেকে সতর্ক রয়েছে। দলে এখন ছ’টি শাবক রয়েছে। তাদের নিয়ে পাকা রাস্তা পেরোচ্ছে খুব সাবধানে, সময় নিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন