ত্রাণ শিবিরে শৌচালয়ের আর্জি

শীতলগ্রামের ত্রাণ শিবিরে গিয়ে সেই ভোগান্তির কিছু খণ্ডচিত্র দেখা গেল। প্রায় ২০/৩০ ফুটের ত্রাণ শিবিরে সমানে খুক্ খুক্ কাশছিল বেশ কিছু কচিকাঁচা। সেখানে সকাল থেকেই দুটি গ্যাসের উনুনে হচ্ছিল রান্নাবান্না।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

লাভপুর শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৭ ১০:৩০
Share:

শীতলগ্রামের ত্রাণ শিবির। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি

বর্ষার মরসুমে ফি বছর কয়েক’টা দিন ত্রাণ শিবিরে কাটাতে হয় সমাপ্তি বাগদি, মামনি বাজিকরদের। কিন্তু ত্রাণ শিবিরে নেই কোনও শৌচালয়, যৌথ রান্নাঘর। একটি ঘরে গাদাগাদি করে থাকা, সেই ঘরেই রান্নার ফলে তৈরি হয় নানা সমস্যা। শৌচালয় না থাকায় যেতে হয় হাঁটু জল ঠেলে। তাতে বিপদের আশঙ্কা আরও বাড়ে।

Advertisement

শীতলগ্রামের ত্রাণ শিবিরে গিয়ে সেই ভোগান্তির কিছু খণ্ডচিত্র দেখা গেল। প্রায় ২০/৩০ ফুটের ত্রাণ শিবিরে সমানে খুক্ খুক্ কাশছিল বেশ কিছু কচিকাঁচা। সেখানে সকাল থেকেই দুটি গ্যাসের উনুনে হচ্ছিল রান্নাবান্না। রান্নার ফোড়ন আর উনুনের তাপে বাচ্চারা তো বটেই, কাশি চাপতে পারছিলেন না বড়রাও। সেখানে ঠাসাঠাসি করে রয়েছেন প্রায় ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ জন মানুষ। জলমগ্ন এলাকা বাড়লে ত্রাণ শিবিরে উঠে আসা লোকের সংখ্যাও একধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যায়। সমস্যা তখন আরও বাড়ে।

প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গতদের আশ্রয়ের জন্য ব্লকের বন্যাপ্রবণ বিভিন্ন গ্রামে রয়েছে আটটি ত্রাণশিবির। শীতলগ্রামের তেমনই একটি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন সাতটি পরিবার। পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, জঙ্গলে কাঠ এবং মাঠে গোবর কুড়িয়ে ঘুঁটে তৈরি করে তাঁদের জ্বালানির সংস্থান হয়। দু’র্দিনের কথা ভেবে আগাম কিছু জ্বালানী সংগ্রহও করে রাখেন। কিন্তু ঘর-গেরস্থালির সঙ্গে ভেসে গিয়েছে সেই জ্বালানিও। এর ফলে বিপাকে পড়েছেন মামনি বাজিকররা। কারণ ত্রাণ শিবিরে কাঠে রান্নার কোনও সুযোগ তো নেইই, গ্যাস বা স্টোভেও রান্নারও আলাদা কোনও ব্যবস্থা নেই। কচিকাঁচা-বুড়োদের নিয়ে একই ঘরে সারাদিনই রান্নায় ব্যস্ত থাকতে হয় তাঁদের। ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলির মধ্যে মাত্র দুটি পরিবারে গ্যাসের সংযোগ রয়েছে। তাতেই পালাক্রমে রান্না করে নিতে হচ্ছে তাঁদের। ফলে ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে ঘরদোর।

Advertisement

সমস্যা সবচেয়ে বেশি শৌচালয় নিয়ে। সন্ধ্যা থান্দার, বৈশাখী বাজিকররা বলেন, ‘‘প্রায় প্রতি বছর ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়ে এই ভোগান্তি পোহাতে হয়। কারণ ত্রাণ শিবিরে রান্না করার আলাদা কোনও জায়গা নেই। সামনে খোলা বারান্দা একটা আছে, কিন্তু বৃষ্টি-বাদলার জন্য সেখানে রান্না করা যায় না।’’ সমাপ্তি বাগদি, মামনি বাজিকররা জানান, সব থেকে সমস্যা হয় শৌচালয় নিয়ে। অন্য সময় মাঠেঘাটে কাজ চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হলেও, এই সময় সব ডুবে থাকে। তাই অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হয়। গ্রামের বাইরে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।

সমস্যার কথা মেনেছেন স্থানীয় বাসিন্দা, কুরুন্নাহার পঞ্চায়েতের সদস্য জগন্নাথ বাগদিও। তিনি বলেন, ‘‘সত্যিই রান্নাঘর আর শৌচালয়ের অভাবে ফিবছর বন্যা দুর্গতদের সমস্যায় পড়তে হয়।’’ মহেন্দ্র বাগদি, চন্দন বাজিকররা জানান, জল সরে গেলেও বাড়ি বাসযোগ্য না হওয়া পর্যন্ত ত্রাণ শিবিরে থাকতে হয়। তাই সবার জন্য একটা রান্নাঘর আর শৌচালয় খুব জরুরি। তাঁদের সমবেত আর্জি, ‘‘প্রশাসন সে দিকে নজর দিক।’’

ময়ূরেশ্বরের আদিবাসী অধ্যুসিত মেটেলডাঙাতেই রয়েছে মল্লারপুরের নইসুভা নিয়ন্ত্রিত যৌথ রান্নাঘর। কেমন সেই রান্নাঘর? মাঝারি মাপের ঘরে একটি গ্যাস সিলিন্ডার থেকেই সংযোগ রয়েছে সারি সারি উনুনে। হাতের কাছেই রয়েছে ট্যাপের জল। বিভিন্ন আকারের বাসনপত্র। রয়েছে লাগোয়া শৌচালয়ও। নইশুভার কর্ণধার সাধন সিংহ বলেন, ‘‘বৃষ্টি বাদলার দিনের জন্য এই ব্যবস্থা।’’

আশ্বস্থ করছেন লাভপুরের বিডিও জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাসও। তিনি বলেন, ‘‘ইতিবাচক প্রস্তাব। গ্রামবাসী লিখিত ভাবে দাবি জানালে ব্যবস্থা নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন