...গন্ধ এসেছে

প্রথম পুজো, হুল্লোড় কাশীপুরে

পুজোয় ফাঁকা বাড়িতে মন খারাপে দিন কাটত পুরুষদের। সেই ছবি বদলাতে এ বার প্রথম পুজো হচ্ছে ময়ূরেশ্বরের কাশীপুর গ্রামে।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৮ ০০:২৫
Share:

গ্রামে কোনও পুজো হতো না। পুজো দেখতে যেতে হতো অন্য গ্রামে। কিন্তু সেখানে পুজোয় যোগদানের তেমন সুযোগ ছিল না। তাই পুজোর মুখে ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যেতেন গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের মহিলারা। পুজোয় ফাঁকা বাড়িতে মন খারাপে দিন কাটত পুরুষদের। সেই ছবি বদলাতে এ বার প্রথম পুজো হচ্ছে ময়ূরেশ্বরের কাশীপুর গ্রামে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রত্যন্ত ওই লোকালয় ‘রাজমিস্ত্রিদের গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত। গ্রামে ২০টি পরিবারের বাস। প্রতি পরিবারের এক বা একাধিক সদস্য রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। কমবেশি জমিও রয়েছে সকলের। কখন, কোথায় কাজ পড়ে যায় তা নিশ্চিত না থাকায় এত দিন গ্রামে পুজোর আয়োজন করার সময় ছিল অনেকের। ছিল না সামর্থ্যও। গ্রামবাসীকে পুজো দেখতে যেতে হতো ২-৪ কিলোমিটার দূরের গ্রামে। তা নিয়ে মনখারাপ ছিল গ্রামের গৃহবধূদের। অনেকেই নিজের স্বামীর কাছে গ্রামে দুর্গাপুজো শুরুর আর্জি জানাতেন। কিন্তু তা পূরণ না হওয়ায় পুজোর আগে ছেলেমেয়েদের নিয়ে অনেক মহিলাই বাপের বাড়ি বা কোনও আত্মীয়ের বাড়ি চলে যেতেন।

সে জন্য পুরুষদের আক্ষেপ ছিল। মনে মনে গ্রামে পুজো শুরুর ইচ্ছা প্রকট হয় তার জেরেই।

Advertisement

এ বারে ধান তোলার মরসুমে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে চাঁদা হিসেবে জমির পরিমাণ অনুযায়ী ধান জোগাড় করা হয়। সেই ধান বিক্রি করেই মাতৃ-আরাধনার আয়োজন করা হয়।

৮০ বছরের এককড়ি দাস, ৭৫ বছরের সন্ন্যাসী দাসের কথায়, ‘‘অনেক দিন ধরেই গ্রামে পুজো করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু নগদ টাকা চাঁদা দিয়ে পুজো করার সামর্থ্য ছিল না। এ বার তা-ই বাড়ি বাড়ি ধান তুলে পুজোর আয়োজন করা হয়েছে।’’

গ্রামে পুজো শুরু হওয়ায় খুশি হৃদয় দাস, নবকুমার দাস, হেমন্ত দাস, গোপী মহান্তের মতো গ্রামের যুবকেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘সারা বছর বাইরে বাইরে রাজমিস্ত্রির কাজ করি। কেউ বাইরেই থাকে, কেউ সকালে বেরিয়ে সন্ধ্যায় ফেরে। পুজোয় কাজ না থাকলেও স্ত্রী-ছেলেমেয়ের সঙ্গে সময় কাটানো যেত না। গ্রামে পুজো না হওয়ায় অনেকেই ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যেত। পুজোয় ফাঁকা বাড়িতে মনখারাপ হতো। এ বারে সেটা আর হবে না।’’

পুজো শুরু হওয়ায় খুশি গৃহবধূরাও। মানসী বাগদি, খুশি দাস, টুম্পা বাগদি, মামনি দাসের কথায়, ‘‘পুজো না হওয়ায় বাধ্য হয়েই বাপের বাড়িতে যেতে হতো। কিন্তু সেখানেও মন টেকে না।
অন্য গ্রামে পুজোয় তেমন ভাবে সামিল হতে পারতাম না। তাই বাপের বাড়িতে যেতাম। এ বারে আর সে সব চিন্তা নেই। অনেক আত্মীয়ই এ বার আমাদের গ্রামে পুজো দেখতে আসবে। আমরাও নিজেদের হাতে পুজোর কাজ করতে পারব।’’

সব থেকে বেশি আনন্দে কচিকাঁচারা। অষ্টম শ্রেণির সঞ্জিৎ দাস, রনি বাগদি, নবম শ্রেণির কোয়েল দাস, দোলন দাস বলল— ‘‘মামাবাড়িতে পুজো দেখতে গিয়েও মন ভরত না। এ বারে পাড়ার সব বন্ধুরা একসঙ্গে পুজোর চার দিন মজা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন