উচ্ছ্বসিত: প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মিরিটির বাড়ি। ছবি: কল্যাণ আচার্য
আদরের পল্টু ভারতরত্ন পাচ্ছেন। খুশিতে চোখ ভিজেছে দিদি অন্নপূর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। শনিবার রাতেই ফোন এসেছিল দিল্লি থেকে। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় দিদিকে জানিয়েছেন সুখবরটি। প্রণববাবুকে পল্টু নামেই ডাকেন তাঁর দিদি। রবিবার তিনি বলেন, ‘‘পল্টুকে অনেক আশীর্বাদ করেছি। আগেই শুনেছিলাম। শনিবার রাতে যখন ও ফোন করে সব বলল খুব খুশি হয়েছি।’’
শুধু অন্নপূর্ণাদেবী নন, গোটা লাভপুরে খুশির হাওয়া প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির ভারতরত্ন পাওয়ার খবরে। প্রণববাবুর বাড়ি মিরিটি গ্রামে। শনিবার রাতে সেই গ্রাম আলোর মালায় সেজে উঠল। বাজি পোড়ানো হল। বাসিন্দাদের কথায়, বছর সাতেক আগের দৃশ্যটাই যেন ফিরে এল। সেবারে প্রণববাবুর রাষ্ট্রপতি হওয়ার খবর পৌঁছোনোর পরেই আবেগে, আনন্দে ভেসে গিয়েছিল মিরিটি। এবারে তাঁর ভারতরত্ন পাওয়ার খবরে সবাই খুব খুশি।
দীর্ঘ দিনই দিল্লিবাসী প্রণববাবু। দুর্গাপুজোয় প্রতিবারই গ্রামের বাড়িতে আসেন, চণ্ডীপাঠ করেন। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরেও নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে হেলিকপ্টারে চড়ে যখন কীর্ণাহারে পৌঁছোতেন তখন তিনি আদ্যন্ত গ্রামের মানুষ। অন্নপূর্ণাদেবীর আদরের পল্টু। তাঁকে দেখার জন্য কীর্ণাহার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন হেলিপ্যাডের চারপাশে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতেন কয়েক হাজার মানুষ। প্রণববাবু তাঁদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে লাগোয়া পরোটা গ্রামে দিদি অন্নপূর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে মিরিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিতেন। এটাই এখানকার বাসিন্দাদের চেনা ছবি।
২০১২ সালে প্রণববাবু রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার খবরে মানুষের ঢল নেমেছিল মিরিটি গ্রামে। আনন্দে মাতোয়ারা হয়েছিলেন সকলে। গ্রামের মানুষ রাষ্ট্রপতি বলে কথা! শুক্রবারও যেন সেই দিনটাই ফিরে এল। তাঁর ভারতরত্ন পাওয়ার খবরে গ্রামের মানুষ প্রদীপ জ্বালিয়ে, বাজি পোড়ালেন। স্থানীয় বাসিন্দা জয়ন্ত চক্রবর্তী, রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, সঞ্জিত কোনাই, মণিকা ঘোষ, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী পরিষদের প্রাক্তন সম্পাদক দিলীপ কুমার পালেরা বলেন, ‘‘উনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার খবরে সবাই আনন্দ উৎসবে সামিল হয়েছিলাম। ভারতরত্ন পাওয়ায় আমরা সবাই খুব খুশি হয়েছি।’’
কীর্ণাহার শিবচন্দ্র হাইস্কুলে প্রণববাবুর সহপাঠী ছিলেন নীহাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি শয্যাশায়ী। তবে বন্ধু ভারতরত্ন পাওয়ায় উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘‘যোগ্য মানুষ তাঁর প্রাপ্য সম্মান পেয়েছেন। ছেলেবেলার কত স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে।’’