কাছাকাছি ব্যাঙ্ক বলতে সাড়ে আট কিলোমিটার। এটিএম সাত-সাড়ে সাত। আর ডাকঘর দেড় কিলোমিটার দূরে।
দরকার যতই থাক, চাইলেই হাতে টাকা নয়। টাকার জন্য দুর্ভোগের পথ পেরিয়ে সাঁইথিয়ার তকিপুর গ্রামের বাসিন্দাদের যেতে হয় হয় সাঁইথিয়া নইলে ডাকঘর গোড়লা গ্রামে। সেই ডাকঘরে আবার সর্বাধিক পাঁচ হাজার টাকা তোলা যায়! আর এই নোট বাতিলের বাজারে সেই ডাকঘরেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ লাইন সাঁইথিয়ার ব্যাঙ্ক-এটিএমেও! এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েই এ বার প্রত্যন্ত এলাকাতেও এটিএমের শাখা খোলার দাবি উঠল সাঁইথিয়া-মহম্মদবাজারের গ্রামে।
সাঁইথিয়া-মহম্মদবাজারের আঙ্গারগড়িয়া, হরিসড়া, তকিপুর এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, রাস্তাঘাট, শিক্ষা, স্বাস্থ্য-সহ কার্যত সমস্ত পরিষেবা থেকে বঞ্চিত গ্রাম। নোট বাতিলের জেরে দুর্ভোগ চরমে ওই সমস্ত এলাকায়। কোনও ব্যাঙ্ক ও এটিএম নেই ওই সব গ্রাম এলাকায়। তাঁদের দাবি, ‘‘প্রয়োজনে সরকার নির্ধারিত সামান্য টাকার জন্য কাজ ফেলে রেখে শহরে যেতে হচ্ছে। ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস বা এটিএমের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অনেক সময় খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে এটিএম, পোস্ট অফিস বা ব্যাঙ্কের টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায়। এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তির জন্য যদি প্রতিটি পঞ্চায়েতে একটি করে এটিএমে কাউন্টার খোলা হয় তাহলে এলাকার লোকজনের অনেক সুবিধা হয়। বহু পঞ্চায়েত প্রধান থেকে সমিতির সভাপতিরা এই দাবিকে সমর্থন করেছেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, বেশ কিছু পঞ্চায়েত এলাকায় কোনও ব্যাঙ্ক নেই। ডাকঘর দূরে। ব্যাঙ্ক-ডাকঘর না থাকার কারণে সমস্যায় পড়েছেন এলাকার মানুষ।
কৃষিজীবিদের দাবি, এই সময় ধানকাটা, আলু, গম, সরষে-সহ রবি চাষের ভরা মরশুম। হঠাৎ টাকা বাতিল হওয়ায় কৃষিজীবি লোকজন চরম সমস্যায় পড়েছেন। সেই সমস্যা দূর করতে অন্তত প্রতিটি পঞ্চায়েত কার্যালয়ে একটি করে এটিএম খোলা প্রয়োজন। তাতে কিছুটা হলেও হয়রানি কমে। সাঁইথিয়ার হরিসড়া অঞ্চলের তকিপুরের বাসিন্দা প্রতিমা বায়েনের দাবি, ‘‘দেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হল কৃষি। কিন্তু সমস্ত রকম পরিষেবা ও পরিকাঠামোর দিক দিয়ে কৃষি উৎপন্ন এলাকা বা গ্রামগুলিই দেশে পিছিয়ে আছে। এখনও গ্রামের মানুষ ব্রাত্য।’’ তিনি বলেন, শিক্ষা স্বাস্থ্য, পানীয় জল, রাস্তাঘাট-সহ শহরাঞ্চল অপেক্ষা নানা পরিষেবা থেকে আমরা বঞ্চিত।
ঘটনা হল, ব্যাঙ্ক বা এটিএম নিয়ে এতদিন গ্রাম গঞ্জের লোকজনের তেমন মাথা ব্যাথা ছিল না।
কিন্তু টাকা বাতিলের কারণে এখন সকলে বুঝতে পারছেন এলাকায় ব্যাঙ্ক না থাকাটা সমস্যার। এটিএমের দাবি জানিয়েছেন, মাঠপলসার উপ প্রধান মহম্মদ ইউনুস, দেরিয়াপুরের পীযুষ পাল, মহম্মদবাজারের সঞ্জীত মিশ্র, আঙ্গারগড়িয়া পঞ্চায়েত সদস্য শ্যামচরন বাগদি, ময়ূরেশ্বর এলাকার চন্দন চট্টোপাধ্যায় এবং তরনী মণ্ডল প্রমুখ। হরিসড়া পঞ্চায়েতের প্রধান বেদন ঘোষ বলেন, ‘‘টাকা বাতিলের পরে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে অঞ্চলের কার্যালয় গুলিতে একটি করে এটিএম থাকলে ভাল হত। এ ব্যাপারে সমতির সভাপতি ও বিডিওর কাছে আবেদন জানাব। তাঁরা যদি এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয় তাহলে লোকজনের কিছুটা উপকৃত হয়।’’
মহম্মদবাজারের হিংলোর প্রধান সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রতিটি অঞ্চলে একটি করে এটিএম হওয়া খুব দরকার। এর জন্য পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ সব রকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’’ মহম্মদবাজার ও সাঁইথিয়ার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ফিরদৌসি বেগম ও সোমনাথ সাধু বলেন, ‘‘খুব ভাল প্রস্তাব। আজকের দিনে গ্রামে গঞ্জে এটিএম থাকাটা অত্যন্ত জরুরী। বিশেষ করে টাকা বাতিলের পরে সর্বত্রই এটিএম পরিষেবা থাকা দরকার।’’ তাঁরা জানান, ব্লক, জেলা প্রশাসন ও জেলা সভাধিপতির সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিটি অঞ্চলে এটিএম খোলার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন রাখব, যাতে রাজ্যের সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে এটিএম বসানো হয়।’’