প্রতিরোধে ফের বন্ধ পাইপ পাতা

এই নিয়ে তৃতীয় বারের চেষ্টা ব্যর্থ হল। ফের গ্রামবাসীদের বাধায় আটকে গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানীয় জল প্রকল্পের পাইপ লাইন পাতার কাজ। সোমবার পুরুলিয়া মফস্সল থানা এলাকার রামনগর গ্রামের ঘটনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:১৪
Share:

রামনগর গ্রামে বাসিন্দাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি পুলিশের। নিজস্ব চিত্র।

এই নিয়ে তৃতীয় বারের চেষ্টা ব্যর্থ হল। ফের গ্রামবাসীদের বাধায় আটকে গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানীয় জল প্রকল্পের পাইপ লাইন পাতার কাজ। সোমবার পুরুলিয়া মফস্সল থানা এলাকার রামনগর গ্রামের ঘটনা।

Advertisement

২০১৬-র সেপ্টেম্বরে ওই গ্রামে পাইপ লাইন পাতার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধার মুখে তা বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পরে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ওই জল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু গ্রামবাসীদের বাধায় সে দিন পাততাড়ি গুটিয়ে ঠিকাদার ও শ্রমিকেরা ফিরে আসেন। বিক্ষোভের মূল ভূমিকা নিয়েছিলেন স্থানীয় মহিলাদের একাংশ। সোমবার কড়া পুলিশি পাহারায় ফের কাজ শুরুর উদ্যোগ হয়। এ বারে প্রচুর মহিলা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। কিন্তু দিনের শেষে ফের কাজ বন্ধ করেই ফিরতে হয়।

জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরুলিয়া সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কংসাবতী নদী থেকে জল আনার জন্য পাইপ লাইন পাতার কাজ চলছে। নদী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত দূরত্ব সাড়ে ছ’ কিলোমিটার। সেখানে পাইপ লাইন বসাতে ২.৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার। যে পথে পাইপ লাইন যাবে তার মধ্যে পড়ে রামনগর গ্রাম। সেখানকার বাসিন্দারা গ্রামে নলবাহিত পানীয় জল দিতে হবে এই দাবি তুলে পাইপলাইন পাতার কাজে বাধা দেন।

Advertisement

জেলা জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (সিভিল) সনৎ অধিকারী জানিয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পৃথক প্রকল্প হওয়ায় তার থেকে গ্রামে জল দেওয়ার বেশ কিছু পদ্ধতিগত অসুবিধা আছে। গ্রামের জন্য একটি পানীয় জল প্রকল্পের একটি বিশদ রিপোর্ট রাজ্য দফতরে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলেই ওই কাজ শুরু হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গ্রামবাসীর বক্তব্য, এর আগে সৈনিক স্কুলের পানীয় জল প্রকল্পের জন্য গ্রামের উপর দিয়েই পাইপ লাইন পাতা হয়েছে। তখন আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল গ্রামে সংযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হয়নি। তাই এ বারে আগে গ্রামে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার জন্য গোঁ ধরে থাকে তাঁরা।

এই পরিস্থিতিতে, জল প্রকল্পের প্রায় সমস্ত কাজ হয়ে গেলেও তা চালু করা যাচ্ছে না শুধু ওই গ্রামে পাইপ পাতার কাজ আটকে থাকায়। প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, সম্প্রতি ওই কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য উচ্চ শিক্ষা দফতর থেকে প্রশাসনের কাছে একটি চিঠি এসেছে। এ দিন গ্রামের উপকণ্ঠে পুলিশ মোতায়েন হওয়ার পরেই চারিদিকে খবর রটে যায়। স্থানীয় মহিলাদের একাংশ মিছিল করে বেরিয়ে পড়েন। দুপুরের পরে আরও পুলিশ গ্রামে পৌঁছয়। মানবাজার, কাশীপুর, পাড়া, সাঁওতালডিহি, পুরুলিয়া মফস্সল-সহ বিভিন্ন থানা ও সার্কেল ইন্সপেক্টরদের গ্রামে পাঠানো হয়। ডিএসপি (সদর) কল্যাণ সিংহ রায়ের নেতৃত্বে বিরাট পুলিশ বাহিনী গ্রামে গিয়ে পাইল লাইন বসানোর কাজ শুরু করান।

মাটি খোঁড়ার কাজ শুরু হওয়ার পরেই সোনাইজুড়ির দিক থেকে বেশ কয়েকজন মহিলা রামনগরের দিকে আসতে গেলে মহিলা পুলিশ তাঁদের পথ আটকায়। দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। একটা পর্যায়ে প্রতিরোধের মুখে পিছু হটে পুলিশ। পুলিশের এক আধিকারিক বিক্ষোভকারীদের বোঝাতে গেলে তাঁরা আমল দেননি।

পুলিশ ফিরে যাওয়ার গ্রামে পাইপ লাইন পাতার যেখানে খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছিল তা বুজিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সাধন গরাই বলেন, ‘‘অনেকদিন পরে কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু গ্রামবাসীর বাধায় কাজই করতে পারলাম না। আমি দফতরকে গোটা ঘটনা জানাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন