চাকরির দিশা দিতে ক্লাস করাচ্ছেন পুলিশ কর্তারা

দুষ্কৃতীদের সামলানোর পাশেই তরুণ-তরুণীদের চাকরির দিশা দেখাচ্ছেন পুলিশ-কর্তারা।রবিবার এলেই নিজের অফিস লাগোয়া বাংলোয় কলেজ পড়ুয়া ও চাকরিপ্রার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন বিষ্ণুপুরের এসডিপিও লাল্টু হালদার।

Advertisement

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৩২
Share:

এসডিপিও-র বাংলোতেই চলছে পঠনপাঠন।নিজস্ব চিত্র।

দুষ্কৃতীদের সামলানোর পাশেই তরুণ-তরুণীদের চাকরির দিশা দেখাচ্ছেন পুলিশ-কর্তারা।

Advertisement

রবিবার এলেই নিজের অফিস লাগোয়া বাংলোয় কলেজ পড়ুয়া ও চাকরিপ্রার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন বিষ্ণুপুরের এসডিপিও লাল্টু হালদার। সঙ্গে থাকছেন আইসি (বিষ্ণুপুর) আস্তিক মুখোপাধ্যায় ও অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকেরাও। পুলিশের এই উদ্যোগে সাড়া দিয়ে ছুটির দিনে বিনা পারিশ্রমিকে ক্লাস নিতে দেখা যাচ্ছে বিষ্ণুপুর শহর লাগোয়া কয়েকটি স্কুলের শিক্ষকদেরও।

মূলত বাঁকুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরার উদ্যোগে কয়েক মাস আগে শুরু হয় এই স্টাডি সেন্টারের। নাম ‘সোপান’। এসডিপিও জানান, অনুন্নত এলাকার প্রান্তিক, দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের চাকরির পরীক্ষার উপযোগী গড়ে তুলতেই এই স্টাডি সেন্টার চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘গত ২০ অক্টোবর ২৩ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে আমরা স্টাডি সেন্টার শুরু করেছিলাম। এই কয়েক মাসেই পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ জন।’’

Advertisement

এক রবিবারের বিকেলে ওই স্টাডি সেন্টারে গিয়ে দেখা গেল, রীতিমতো চেয়ার বিছিয়ে ক্লাস চলছে। ইতিহাস, ভূগোল থেকে হালফিলের জেনারেল নলেজ সবই বোঝাচ্ছেন পুলিশ আধিকারিকেরা। চাকদহ জুনিয়র হাই স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক প্রবীর দত্ত ক্লাস নিচ্ছিলেন ইংরেজি বিষয়ের। গণিত বোঝাচ্ছেন ওই স্কুলেরই গণিতের শিক্ষক রাজকিশোর পাত্র। নিজে টিউশন পড়ান বিষ্ণুপুরের যুবক নীরজ কুমার। তিনি নিজেও ‘সোপান’-এ নিয়মিত কোচিং নিতে আসছেন।

ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও আগ্রহের শেষ নেই। বিষ্ণুপুরের গোপালপুর থেকে এসেছেন বাংলা অনার্স গ্রাজুয়েট মৌসুমী মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘বাবা দিনমজুর। কোথাও টাকা দিয়ে কোচিং নেওয়ার সামর্থ নেই। সংসারটা দাঁড় করাবার জন্য যে কোনও একটা চাকরি দরকার। যখন শুনলুম একদম বিনা খরচে কোচিংয়ের ব্যবস্থা করেছে পুলিশ, আর দেরি করিনি। এতো সুন্দর করে সব বোঝানো হচ্ছে, খুব উপকারে লাগছে।’’

বিষ্ণুপুর শহরের ময়রাপুকুর থেকে এসেছিলেন ইংরেজি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী অম্বিকা দাস। বাবার টিউশন পড়িয়ে সামান্য রোজগার। ফলে আলাদা করে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির টিউশন নেওয়ার ক্ষমতা নেই তাঁর। তাঁর কথায়, ‘‘বিনা পয়সায় এখানে সেই সুযোগ পাচ্ছি। ধন্যবাদ জানাচ্ছি এমন একটি উদ্যোগের।’’ একই কথা শোনালেন ওন্দার ফুলবেড়িয়া গ্রাম থেকে আসা গৌতম রায় ও গঙ্গাজলঘাটি থেকে আসা অসিত পাত্রেরাও।

পুলিশের এমন সামাজিক উদ্যোগে সামিল হতে পেরে খুশি শিক্ষকেরাও। তাঁদের মধ্যে প্রবীর দত্ত ও রাজশেখর পাত্র বলেন, ‘‘রবিবার স্কুল বন্ধ। তাই আমাদের চেষ্টায় যদি কিছু ছেলেমেয়ে চাকরি পেয়ে স্বাবলম্বী হয়, তার থেকে বড় পাওনা আর কী হতে পারে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন