রাজনগরে গ্রেফতার সিপিএম নেতা

ক্ষোভ দানা বেঁধেছে, টের পায়নি তৃণমূল

রাজারকেন্দ গ্রামে মুখোমুখি সংঘাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় বলরাম মণ্ডল নামে এক সক্রিয় তৃণমূল কর্মীর। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দাবি ছিল, ‘‘ঘটনার জন্য দায়ি বিজেপি ও সিপিএম। থাকতে পারে মাওবাদী যোগও।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৭ ০১:৪২
Share:

ধৃত: দেবীশ্বর পাঁউরিয়া। —নিজস্ব চিত্র।

রাজনগর-কাণ্ডে এক সিপিএম নেতা তথা-সহ চার জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। সোমবার আদিবাসী সমবায় সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শাসক-বিরোধীর গুলি, বোমার লড়াইয়ে তেতে ওঠে রাজনগর। রাজারকেন্দ গ্রামে মুখোমুখি সংঘাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় বলরাম মণ্ডল নামে এক সক্রিয় তৃণমূল কর্মীর। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দাবি ছিল, ‘‘ঘটনার জন্য দায়ি বিজেপি ও সিপিএম। থাকতে পারে মাওবাদী যোগও।’’

Advertisement

সোমবার রাতেই মোট ৩২ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, দলের ব্লক যুব সভাপতি রানাপ্রসাদ রায়। তালিকায় নাম থাকা রাজনগর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি, সিপিএম নেতা দেবীশ্বর পাঁউরিয়াকে তারপরই পুলিশ ধরে। গ্রেফতার করা হয় রাজেশ হাঁসদা, মঞ্জুর মিঞা এবং জব্বর খানকেও। ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে চেয়ে মঙ্গলবার সিউড়ি আদালতে হাজির করায় পুলিশ। শেষ জনের চার দিনের জেল হেফাজত এবং প্রথম তিন জনের চার দিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেন এসিজেএম রিনা তালুকদার।

সিপিএমের দাবি, দলের ওই আদিবাসী নেতাকে ফাঁসানো হয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সাধন ঘোষ বলেন, ‘‘এক জন শিল্পীকে ইচ্ছে করে ফাঁসিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। দেবীশ্বর ওই সময়ে তো কাছাকাছি ছিলেন না।’’ সিপিএমের দাবি, বিরোধী দলের সদস্যদের ভোট দেওয়া থেকে বিরত করতে গিয়ে আদিবাসীদের প্রতিরোধের মুখে পড়েছিল তৃণমূল। কিন্তু, আদিবাসীরা তো আর বোমা-বন্দুক নিয়ে লড়াই করতে আসেননি। তা হলে? বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের বক্তব্য, ‘‘সেটা পুলিশ ঠিক ভাবে তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে।’’ তৃণমূলের রাজনগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকুমার সাধুর দাবি, ‘‘ভোটারদের বাধা দেওয়া হচ্ছিল দেখে ওই গ্রামে আমাদের নেতাকর্মীরা যান। তখনই অতর্কিতে আক্রমণের মুখে পড়েন।’’

Advertisement

আদিবাসীদের আর্থ-সামজিক উন্নয়নের লক্ষ্যেই গঠিত রাজনগর আদিবাসী ল্যাম্পস। এর আগে যা সিপিএমের দখলেই ছিল। সেই সমবায়ের দখল নিয়েই চূড়ান্ত সংঘাত তৈরি হয় শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে। বিরোধীদের দাবি, পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি সব জায়গায় তৃণমূল ক্ষমতা থাকলেও আলিগড় গ্রামের ওই সমবায়টি দখলে না থাকায় তারা মরিয়া হয়ে মনোনয়ন পত্র তোলা থেকেই সন্ত্রাস চালাচ্ছিল। এই নিয়ে ক্ষোভ জমছিল আদিবাসীদের মধ্যে। সোমবার নির্বাচনের দিন বহিরাগতদের নিয়ে ভোটারদের আটকানোর চেষ্টার অভিযোগও রয়েছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। স্থানীয় একটি সূত্রের দাবি, ‘‘বোমাবাজি ও ভয় দেখানোর চেষ্টা করতে গিয়েই রাজরকেন্দ গ্রামে আদিবাসীদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে তৃণমূল।’’

তৃণমূলের এক নেতা মানছেন, ‘‘সম্মিলিত আক্রমণ হয়েছে ঠিকই। কিন্তু, এমনটা যে হতে পারে সেটা ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি।’’ আঁচ করতে পারেনি পুলিশও। তৃণমূলের দাবি, বিরোধীরা ঝাড়খণ্ড থেকে লোকজন নিয়ে আগে থেকেই প্রস্তুত হয়ে ছিল। শাসকদলের তরফে দাবি, মূল ষড়যন্ত্রকারী সদ্য বিজেপি যোগ দেওয়া সমিউল আখতার ওরেফে মিলন।

বিজেপি অবশ্য সমিউলের সঙ্গে তাদের যোগের কথা মানতে চায়নি। তবে এলাকার বড় অংশ জানাচ্ছে, তৃণমূল ক্ষমতায় থাকলেও রাজনগরে বিরোধী শক্তি রয়েছে। রয়েছে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীও। শেষ পর্যন্ত ল্যাম্পসের ক্ষমতা দখলে এলেও সোমবারের ঘটনা তৃণমূল বিরোধী শক্তির উপস্থিতি নিশ্চিত করছে। রাজারকেন্দ গ্রামে বেশ কয়েক’টি আদিবাসী গ্রামের লোকজন আগেই তৈরি ছিল সেটা মানছে পুলিশও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন