গোলমালের পরে উল্টো রথে যাত্রা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে এই রথের। নিজস্ব চিত্র
রথযাত্রায় সাউন্ডবক্স বাজানো নিয়ে ঝামেলা বাধল বাঁকুড়া শহরে। হামলা হল পুলিশের উপরে। ঘটনায় জখম হয়েছেন এক জন ইনস্পেক্টর ও এক জন হোমগার্ড। শনিবার রাতে বাঁকুড়া শহরের কেওটপা়ড়ার ঘটনা। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘ঘটনায় পুলিশ নিজে থেকে অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে।’’ যদিও রবিবার বিকেল পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, রাত ১০টার পরে বাঁকুড়ার শ্যামসুন্দর রথ কমিটির (ছোটরথ) রথ শহর পরিক্রমা করে মাচানতলা পার হয়ে রথতলায় ফিরে আসছিল। সেই সময়ে কেওটপাড়া এলাকায় গন্ডগোল বাধে। পুলিশের দাবি, শোভাযাত্রায় থাকা সাউন্ডবক্স বন্ধ হয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে ওই এলাকারই দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে ঝামেলা হচ্ছিল। শুরু হয় ইট ছোড়াছুড়ি। সেই সময়ে ইনস্পেক্টর রজত হাজরা ও হোমগার্ড ভগীরথ মাহাতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ইটের আঘাতে জখম হন। তাঁদের উদ্ধার করে বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাঁকুড়া সদর থানার আইসি রাজর্ষি দত্তের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী এলাকায় নামে। রাত পর্যন্ত ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন ছিল। ঝামেলা বন্ধ হলে রথটি গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের আবার দাবি, শোভাযাত্রার মাইক পুলিশই বন্ধ করে দিয়েছিল। তার জেরেই বিবাদ ঘটেছে। শ্যামসুন্দর রথ কমিটির কার্যকরী সভাপতি করুণাময় চঁদ বলেন, ‘‘এই রকমের একটি অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে যাওয়ায় আমরা দুঃখিত। কিছু মত্ত যুবক এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী উল্টো রথে আর রথ বের করা হবে কি না তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছি আমরা।’’
রথে বিভিন্ন জায়গায় সাউন্ড বক্সের দাপাদাপি হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলছেন শহরের বাসিন্দাদের একাংশ। বাঁকুড়ার সঙ্গীতশিল্পী জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে রথের দিনে বিভিন্ন এলাকায় তারস্বরে মাইক বাজানো হচ্ছে। মত্ত যুবকদের দাদাগিরি চলছে। এই সমস্ত ঘটনার জন্য রথের সংস্কৃতিটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’’ মনসা পুজো, কালীপুজো বা দুর্গাপুজোর ভাসানের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রেই পুলিশ এলাকায় প্রচার চালায়। সাউন্ড বক্স বাজানো নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের মতে, রথের সাউন্ড বক্স বাজানোর এতটা চল আগে বাঁকুড়ায় ছিল না। ফলে এই ব্যাপারে আগে থেকে পুলিশকেও পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, রথে মূলত যান নিয়ন্ত্রণ এবং রথের যাত্রা পরিচালনের দিকে পুলিশের দৃষ্টি থাকে। উল্টো রথে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারেও জোর দিক পুলিশ, দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।