জন্ম থেকেই দুটো পা পোলিও আক্রান্ত। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জোরটুকু নেই। কিন্তু চলাফেরার সমস্যাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন মণ্ডপ সাজানোর ডাক পেলে। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারের কাছে রাউতৌড়ি গ্রামের রামকৃষ্ণ ঘরার কাছে বাড়ি থেকে ৩৬০ কিলোমিটারের দূরত্ব কোনও বাধাই হয়নি এ বার।
রামপুরহাটের হাটতলা পাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পুজো মণ্ডপের থিম পুরীর জগন্নাথ মন্দির। তার রূপকার রামকৃষ্ণ। নন্দকুমারেরই উত্তর রাওতৌড়ি, রামচন্দ্রপুর, নিমতৌড়ি গ্রামের চার সঙ্গীকে নিয়ে ফোম আর থার্মোকল দিয়ে মণ্ডপ সাজানোর কাজ শুরু করে দিয়েছেন তিনি। প্যান্ডেল তৈরি হয়ে গিয়েছে। রামকৃষ্ণের ভাবনা আর হাতের জাদুতে বাঁশের প্যান্ডেলের ভোল পাল্টাচ্ছে একটু একটু করে। ফোম আর থার্মোকলের উপর রঙের প্রলেপে অবিকল পুরীর জগন্নাথ মন্দির তৈরি হচ্ছে হাটতলা পাড়ায়। দিন পনেরো হল এই কাজটি শুরু করেছেন তাঁরা।
রামকৃষ্ণ বলেন, ‘‘ন’দিন ধরে শুধু মণ্ডপ সজ্জার জন্য ফোম আর থার্মোকল কাটা হয়েছে। মন্দিরে প্রবেশ দ্বার, নাটমন্দির এবং গর্ভগৃহ তিন ভাগে পুরো মন্দিরের আদল আনা হবে। থার্মোকল, ফোম কেটে পরী আর হরেক রকমের ফুলের নকশা কাটা হচ্ছে।’’ নকশার উপর রঙের বাহারে পাথরের মতো মনে হচ্ছে এক ঝলকেই। মণ্ডপের মাথায় ধ্বজা উড়বে পুজোর সময়।
মণ্ডপ তৈরির কাজে এসে রামকৃষ্ণের নতুন বন্ধু হয়েছেন বহরমপুরের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক সন্তু সাহা। সন্তু প্রতিমার পোশাক তৈরি করছেন। অভ্র, আর নানা রং দিয়ে দশভূজার পোশাক রাঙিয়ে তার উপর নিকেলের চুমকি, ছোট ছোট কাচ বসাচ্ছেন তিনি। রামকৃষ্ণের উদ্যমের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘‘শরীরের প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়েছে ওঁর শিল্প সত্তা।’’
পুজো কমিটির সম্পাদক গৌতম দত্ত জানান, সবমিলিয়ে জমজমাট থাকে এই পুজো। পুজো কমিটির আর এক উদ্যোক্তা প্রশান্ত রায় তৈরি করছেন আবহসঙ্গীত। উদ্যোক্তারা জানান, রামকৃষ্ণের মণ্ডপ শিল্প সব ছাপিয়ে যাচ্ছে। তাঁদের আশা, পুজোয় এখানেই পুরীর মন্দির দর্শন হবে দর্শনার্থীদের।